মোফাজ্জল বিদ্যুৎ, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: চলমান করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে রাজশাহীর সবজি বাজার। প্রতিদিনের মতো বিক্রেতারা হরেক রকম সবজির পসরা নিয়ে হাজির হলেও ক্রেতাদের ভিড় নেই একদমই। নেই সবজি কেনা-বেঁচার হিড়িক। পর্যাপ্ত আমদানি থাকলেও ক্রেতা না থাকায় সবজি বিক্রেতাদের মাথায় হাত।

মঙ্গলবার ১১ আগস্ট ২০২০ রাজশাহীর সাহেববাজার, নিউমার্কেট এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, সবজি ব্যবসায়ীরা অলস সময় পার করছেন। স্থানীয়রা বাজারে আসলেও সবজি কেনার পরিমান সীমিত। অনেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে বাজার এড়িয়ে চলছেন।

সবজি বিক্রেতা আকরাম হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সবজির কেনা- বেঁচা তুলনামূলক খুবই কম হচ্ছে। রাজশাহীকে শহর শিক্ষা নগরী। শিক্ষার্থীদের দ্বারাই চলে আমাদের ব্যবসা। কিন্ত চলমান করোনা পরিস্থিতিতে সকল ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের পথে বসতে হবে বলে জানান এই সবজি ব্যবসায়ী।

সাহেব বাজারের সবজি ব্যবসায়ী কামাল হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, রাজশাহীর বেশ কয়েক উপজেলাসহ আশে-পাশের বিভিন্ন এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে বানের পানিতে তলিয়ে গেছে মৌসুমী সবজি। ফলে উপজেলার চাষীরা সবজি সংকটে পড়লেও মূলকেন্দ্র রাজশাহী সবজি বাজারে তেমন একটা সংকট দেখা দেয়নি ।

তিনি জানান, বাজারে প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা। ৪০ টাকার সাদা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকায়, ২০ টাকার আলু ৩০ টাকা, ৩০ টাকার শশা ২০ টাকা, ৩০ টাকার মিষ্টি কুমড়া ২৫ টাকা, ৩০ টাকার চাল কুমড়া ২৫ টাকা, ৩০ টাকার পটল ৪০ টাকা, মুলা২০ টাকার ৩০ টাকা, বরবটি ৩০ টাকা, ৩০ টাকার পেঁপে ২০ টাকা, ২৫ টাকার ঢেঁড়স ৩০ টাকা, ৬০ টাকার দেশি গাজর ৬৫ টাকা থেকে ৭০ টাকা।

এছাড়া প্রতি কেজি লাল শাক ৩০ টাকা, পুঁই শাক ও সবুজ শাক ১৫ টাকা, প্রতি হালি কাঁচা কলা ২০ টাকা, প্রতি হালি লেবু ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা, ঝিঙ্গা ৩৫ টাকা, প্রতি পিস লাউ ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা, ৩০ টাকার কচু ৪০ টাকা, কচুর লতি ৩৫ টাকা, কাকরোল ৫০ টাকা এবং প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে, রসুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ১৪০ টাকার আদা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা, প্রতিহালি সাদা ডিম ৩২টাকা ও লাল ডিম ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়াও ভোজ্য তেলের মধ্যে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৮০-৯০ টাকা, বোতলজাত তেল ১০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে।

আরোও পড়ুন: করোনায় শিক্ষার্থী না থাকায় রাজশাহীর চালের বাজারে মন্দা

মাছের বাজারে রকমভেদে দাম উঠানামা করতে দেখা গেছে। বাজারে রকমভেদে ইলিশ ৬০০-৭০০টাকা, সিলভার কার্প ১৪০-১৫০ টাকা, পাঙ্গাশ ১৬০-১৮০ টাকা, চিংড়ি ও গলদা চিংড়ি ৯০০ টাকা, পাবদা ৩০০-৪০০ টাকা,কালবাউশ ১৮০ কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়াও রুই মাছ ওজনভেদে প্রতিকেজি ২৫০- ৩০০ টাকা, কাতল ২২০ টাকা, শিং ৪০০-৬০০ টাকা, তেলাপুয়া ১২০ টাকা, ট্যাংরা ৪৮০-৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।

এদিকে সকল ধরনের মাংসের দাম স্থির আছে। বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৫৪০-৫৫০ টাকা, খাঁশি ৭২০টাকা,হাঁস ২৬০টাকা, ব্রয়লার ১১০ টাকা, সোনালী মুরগি ২৩০-২৪০ টাকা ও দেশি মুরগি ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

গত ১৫ দিনের ব্যবধানে রাজশাহীর বাজারে দফায় দফায় বেড়েছে চালের দাম। পুরাতন আঠাশ চাল ৪৬ টাকা থেকে ৪৮ টাকা বিক্রি হলেও তা এখন ৪-৬ টাকা বেড়ে ৫০ থেকে ৫২ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দু- এক টাকা করে বৃদ্ধি পেয়ে শরনা ৪৬, জিরাশাল ৫০ থেকে ৫২ টাকা ও বাসমতি ৬০ টাকা, পায়জাম ৬০ টাকা, নাজিরশাইল ৬০, কাটারিভোগ সিদ্ধ ৭৫ টাকা, কাজললতা ৬৫, কালোজিরা ৯০, চিনিগুঁড়া আতপ ৯৫, রাধুনি ৮০, মোটা আতপ ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

এ ছাড়া রাজশাহীতে মসলার বাজারেও ধস নেমেছে। কেনা-বেঁচা না থাকায় দু:শ্চিন্তায় রয়েছেন মসলার পাইকারী বিক্রেতারা। রিফাত ট্রেডার্সের মালিক হাবিবুর রহমান এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, করোনায় বেচাঁ-কেনা একদম স্থবির হয়ে গেছে। কোরবানির ঈদের আগে কিছুটা বিক্রি হলেও এখন আর সেই পরিমাণও বেঁচা-কেনা নেই বলে জানান এই মসলা ব্যবসায়ী।