মো. শাহ এমরান, স্বত্বাধিকার, স্বপ্ন ডেইরি, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: প্রশ্ন: কয়টা গাভী বা বকনা দিয়ে দুগ্ধ খামার শুরু করবো, নাকি প্রথম অবস্থায় ফ্যাটেনিং করবো?

অনেক নতূন খামারী ভাইরা এই প্রশ্ন করে থাকেন। প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ কারন এখানে কৌশলগত কারনে কিছু ভূল হলে আপনাকে আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে খামার বন্ধ করে দিতে হতেও পারে। আজ কয়টা গাভী বা বকনা দিয়ে শুরু করবেন নাকি পুরোপুরি ফ্যাটেনিং করবেন তা আলোচনা করা যাক।

ধরে নিলাম সব যাচাই বাছাই করে দেখলেন একটি দুগ্ধ খামার করা যেতে পারে আপনার এলাকায়। কয়টা গাভী বা বকনা দিয়ে শুরু করবেন তা নির্ভর করবে আপনার মূলধন কতটুকু আছে তার উপর। ২ টা ১২-১৪ লিটার দুধের গরু কিনতে গেলেও এই বাজারে ৩.৫০ লাখ টাকা লাগবে আর ঘর বানানোর খরচতো আছেই, মানে মোট ৫ লাখ।

গরু আপনি যে কয়টাই কেনেন আপনাকে একটা সার্কেল তৈরী করতে হবে। সার্কেল মানে দুধের প্রোডাকশন সার্কেল। এখন যদি ২ টা দুধের গাভী কেনেন, এই গাভীগুলোর দুধ শেষ হবার আগে আগেই আপনাকে আরো ২ টা গাভী কেনার টাকা হাতে রাখতে হবে। না হলে নিজের পকেট থেকে টাকা খরচ করে খামার চালাতে হবে, যেটা একটা সময় আর ভালো লাগবেনা।

তাহলে আবার লাগবে টাকা ধরলাম ৩.৫০ লাখ। কত দাড়ালো মোট ৮.৫০ লাখ টাকা। অন্যান্য ঝুকি মোকাবেলা করার জন্য যদি ১.৫০ লাখ টাকা হাতে রাখেন দেখা গেলো ১০ লাখ টাকা মূলধন নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে হবে আপনাকে ২ টা গাভী নিয়ে যদি ব্যবসা শুরুর কথা চিন্তা করেন।

যার হাতে ১০ লাখ মূলধন আছে উনি যদি ভাবেন ১০ লাখ টাকা দিয়ে ৭ টা গাভী কিনবো, তাহলেই কিন্তু ভুল পথে পা বাড়ালেন। পরের বছরই আর্থিক সমস্যায় পড়ে হয় হিমশিম খেতে হবে।

আমার শুরুটা একটু শেয়ার না করলেই নয় এখানে। আমি শুরু করেছিলাম ২ টা দুধের গাভী বাচ্চা সহ+ ২ টা ১৪ মাসের বকনা+ ৩ টা ৭ মাসের বকনা দিয়ে। বিভিন্ন বয়সের বকনা নিয়েছিলাম কারন দুধের গাভীগুলোর দুধ দেয়া শেষ হতে হতেই ১৪ মাসের বকনাগুলো বাচ্চা দিয়ে দিবে।

পাশাপাশি ৭ মাসের বকনাগুলো ৩য় সার্কেলে গিয়ে যুক্ত হলে আমার ক্যাশফ্লো বেড়ে যাবে। আমার মুলধন ছিল মাত্র ৭ লাখ প্রথম অবস্থায়। মূলধনের ঘাটতি যদি না থাকতো আমি বকনা না কিনে শুধু দুধের গরু কিনেই ২য় সার্কেল ঠিক রাখতাম। শুধু বকনা কিনে খামার শুরু করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

২য় সার্কেলে দুধের গরু কেনার মত মূলধন আমার ছিলনা তবে ১৪ মাসের বকনাগুলো আমাকে সাপোর্ট দিয়েছিল এবং ৩য় সার্কেলে এসে যখন দেখলাম সেড আরো বড় করতে হবে তখন ১ম সার্কেলে গাভীর ষাড় বাচ্চাগুলো এতদিনে বেশ বড় হয়ে যাওয়াতে তা বিক্রি করে নতূন সেডের কাজ করলাম।

আমার নিজের পকেট থেকে টাকা দিতে হয়নি। ফ্যাটেনিং এর জন্য আলাদা করে গরু বাইরে থেকে কিনতে হয়নি। আপনার খামারের বাচ্চা থেকে যে লাভ আসবে বাইরে থেকে গরু কিনা কোনভাবেই এত লাভ আসবেনা।

যারা নিজেরা কাজ করবেন খামারে, খামার ব্যবস্থাপনার সম্পূর্ন জ্ঞ্যান রাখবেন তাদের খামার লাভবান হবেই। প্রথম ২-৩ বছর লেগে যাবে এসব বুঝতে বুঝতেই। ধৈর্য রাখতে হবে।

দুগ্ধ খামারকে লাভবান করার ছোট টিপস: “১৪-১৫ মাস পর পর একটি গাভীকে অবশ্যই একটি করে নতূন বাচ্চা দিতে হবে, নাহলে খামার লোকসান”।

কোরবানীকে উদ্দেশ্য করে ফ্যাটেনিং এ লাভ করা অনেক ঝুকিপূর্ন কারন যেকোন সময় পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে গরু ঢুকে পড়লে লোকসান অবধারিত। যদি ৪ মাস মেয়াদী করে ফ্যাটেনিং প্রজেক্ট করা যায় তাহলে ভাল।

তবে আমার মতে দুগ্ধ খামার এবং ফ্যাটেনিং দুটোই কমবেশী করা উচিত একসাথে। সর্বপরি, এই গাভী পালন, ষাড় পালনে স্বাস্থ্যগত, রোগ বালাইএর ঝুকি সব সময় আছে। এসব মাথায় রেখেই আগাতে হবে।