দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে দেশের পোল্ট্রি ও মৎস্য শিল্পের ‍উন্নয়নে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন দেশের অন্যতম বৃহৎ কৃষিভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নারিশ পোল্ট্রি এ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেড এর সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. সামিউল আলীম।

পোল্ট্রি, মৎস্য শিল্পে গত কয়েক বছরে নারিশের সফলতার যে বিপ্লব হয়েছে তার নেপথ্যে অন্যতম বড় ভূমিকায় রয়েছেন এ ঊর্ধতন কর্মকর্তা। প্রায় ১৯ বছর ধরে নারিশের সাথে পথ চলা তার। সফলতার স্মারক হিসেবে পেয়েছেন একাধিক অ্যাওয়ার্ড।

নিজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতায় মো. সামিউল আলীম এ শিল্পে অত্যান্ত পরিচিত ও সমাদৃত মুখ। তার পরামর্শ ও সহযোগিতায় দেশের অনেক পোল্ট্রি খামারি ও মৎস্য চাষি সফলতা পেয়েছেন।

নারিশ ও দেশের পোল্ট্রি এবং মৎস্য শিল্পের নানা দিক ও খামারিদের নিয়ে কথা বলেছেন এগ্রিকেয়ার২৪.কম এর সাথে। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন এগ্রিকেয়ার২৪.কম এর জ্যেষ্ঠ প্রতিদেবক আবু খালিদ।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: শুরুতেই নারিশ পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেড সম্পর্কে কিছু বলবেন।

মো. সামিউল আলীম: পোল্ট্রি ও মৎস্য শিল্পে নারিশ এর বিষয়টি একটু ভিন্নভাবে দেখতে হবে। কারণ আমরা যখন শুরু করি, তখন অর্থাৎ ৯০ এর দশকে খামারি পর্যায়ে বড় বড় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মূলত বাচ্চা ও খাদ্য বিক্রি হতো।

খামারিরা এসব প্রতিষ্ঠান থেকে একটা প্রস্ততকৃত খাবার কিনে খাওয়াতো। হাতে মিক্সিং করে খাওয়ানোর পরিবর্তে তারা শুধু প্রস্ততকৃত খাবার খাওয়াচ্ছে, এটাই ছিলো মূল উদ্দেশ্যে। মূলত কাজটাকে সহজ করতে রেডি ফিড (প্রস্তুতকৃত খাবার) করা হয়।

কিন্তু নারিশ যখন শুরু করলো তখন আমরা বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, না আপনাকে (খামারি) এফসিআর (খাদ্য রুপান্তরের হার) শিখতে হবে। ব্যবসাটাকে বাণিজ্যিকভাবে নিতে হবে, বাণিজ্যিকভাবে ডিম, উৎপাদন, মুরগি পালন ও মাছ চাষ করতে হবে।

‘আপনি কত টাকার খাবার খাওয়াচ্ছেন আর কত টাকার ডিম, মাংস, মাছ পাচ্ছেন, সে হিসাবটা থাকতে হবে। আমরা এ উদ্দেশ্যেকে সামনেই নিয়েই বাজারে যাত্রা শুরু করি। শুরু থেকে এগুলো বোঝাতে চেষ্টা করছি এবং বোঝাতে সক্ষম হয়েছি।’

এরপর থেকে নারিশের একটা বিপ্লব শুরু হলো। আস্তে আস্তে এ পর্যন্ত। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে রেকর্ড পরিমাণ বিক্রি করতে পেরেছি। প্রত্যেকটা এজেন্ট, খামারিরা মনের কুঠরে আমাদের জায়গা দিয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে আমরা সর্ব্বোচ্চ সেল (বিক্রি) করছি।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: নাম করা সব প্রতিষ্ঠানের অনেক পরে শুরু করেও এত বড় সফলতার পাশাপাশি খামারির মন জয়ের নেপথ্যে কী?

মো. সামিউল আলীম: দেখুন, একজন ক্রেতা সবসময় তার বেনিফিট খুঁজেন। অতীতে প্রায় ৪৫ দিনে তিন থেকে চার কেজি পর্যন্ত খাদ্য খাওয়ানোর পর মুরগির সঠিক ওজন আসতো। নারিশ আসার পরে ৩৫ দিনে আড়াই কেজি খাদ্য খাওয়ানোর পর একই ওজনের মুরগি পেলেন খামারিরা। সময় ও খাদ্য উভয়ই কমলো, ওজনও বেশি আসলো।

খামারিরা বুঝতে পারলেন আগের অবস্থার চেয়ে অনেক ভালো অবস্থায় চলে যাচ্ছে তারা। মুনাফাও বেশি হচ্ছে।

খামারির মাধ্যমে খামারিদের মাঝে এ বার্তাটি প্রসারিত হতে শুরু করলো। একজন খামারি অপর খামারিকে পরামর্শ দিতে শুরু করলেন যে, নারিশ এর পণ্য ভালো মানের। এভাবেই খামারিদের অন্তরে জায়গা করে নিলো নারিশ।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: খামারি, চাষিদের জীবনের মান উন্নয়নে কী ভূমিকা রাখছে নারিশ?

মো. সামিউল আলীম: আমরা প্রতিনিয়ত খামারি, মাছ চাষিদের জীবনের মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। খামারিদের প্রশিক্ষণ ও দিকনির্দেশনার জায়গা নিয়ে কাজ হচ্ছে। আমাদের কাস্টমার সার্ভিস বিভাগ রয়েছে তারা নিয়মিত খামারি, মৎস্য চাষিদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে সেবা দিচ্ছেন।

এছাড়া খামারিসহ এ শিল্পের উন্নয়নে আমরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পদক্ষেপ নিয়ে থাকি। সম্প্রতি আপনি জেনে থাকবেন, আমরা এন্টিবায়োটিক ফ্রি ফিড (খাদ্য) উৎপাদন ও বাজারজাত শুরু করছি। আমরা এমন একটা পণ্য তৈরি করতে চাই যে পণ্যটি যেন শতভাগ মান সম্মত ও স্বাস্থ্যসম্মত হয়।

কেননা পূর্বের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, একজন খামারি শুরুতেই এ্যান্টিবায়োটিক দেয়া শুরু করেন। আমরা যত্রতত্র এ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করার জন্যে উদ্বুদ্ধ করছি।

দেশের প্রতিটি (৬৪) জেলাতেই একজন করে চিকিৎসক রয়েছেন। যারা খামারিদের পোল্ট্রি, ফিসারিজ, ডেইরি, প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ফার্ম টু ফার্ম সেবার দেয়ার চেষ্টা করছে। তাদেরকে বলা আছে যে খামারিরা যেন সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে খামার ডেভেলপ করে।

যেহেতু সব বয়সের মানুষ খাবারটি খায়, সেই চিন্তা থেকেই আমরা ওষুধ ব্যবহারে খামারিদের নিরুৎসাহিত করছি।  কেননা খাদ্যে প্রয়োজনীয় সব উপকরণই রয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে নারিশ এসব কাজ করছে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বর্তমান সময়ে কোন বিষয়ের ওপর বেশি ‍গুরুত্ব দিচ্ছে নারিশ।

মো. সামিউল আলীম: আমরা ফার্ম ম্যানেজমেন্ট এর দিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। খামারিদের মুরগির ওজন আরও বৃদ্ধি করার জন্যে বলছি, যেন খাবারে স্বাদটা বৃদ্ধি পায়।

স্বল্প সময় পালনের পর ব্রয়লার মুরগি বাজারে ওঠে, এ কারণে সেভাবে মাংসে ফাইবারটা পরিপক্ক হয় না। তাই বেশিদিন (৪০ থেকে ৪৫ দিন) খামারে ব্রয়লার ‍মুরগি পালনের কথা বলছি।

মাছের ক্ষেত্রেও একই কথা বলছি। ছোট মাছ আর বড় মাছের স্বাদের পার্থক্য আছে। আমরা যখন খামারি, এজেন্টদের সাথে বসি, কথা বলি তখন এসব সচেতনতামূলক বার্তা দিয়ে থাকি।

এক কথায় ফার্ম ম্যানেজমেন্ট দিয়েই ফার্ম গড়ে তুলতে হবে। আপনাকে ভালো মানের পোনা, বাচ্চা, মুরগি, খাদ্য, পরামর্শসহ সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা বা সেবা দিচ্ছি, আপনি ভালো মানের উৎপাদন দিবেন।

আমি ভালো মানের পণ্য দিলাম কিন্তু ভালো ব্যবস্থাপনার হাতে না গেলে সেই ভালো পণ্যের ফলও ভালো হবে না। মাছ, পোল্ট্রিসহ সব জায়গাতেই একই কথা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তুলে ধরছি।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: নারিশের পক্ষ থেকে কোনো বিশেষ বার্তা (ম্যাসেজ) আছে কিনা।

মো. সামিউল আলীম: নারিশের বিশেষ বার্তা বা ম্যাসেজ হলো উৎপাদন খরচ হিসাব করে সব কিছু করতে হবে। উৎপাদন হিসাব না করে আমি ধারে পাচ্ছি কিংবা পাশের ভাই টাকা দিচ্ছে সেজন্যে করছি, তা যেন না হয়। আমি কী দামে কিনে উৎপাদন করছি ও কত দামে বিক্রি করবো তার হিসাব প্রথমে করে নিতে হবে। এ হিসাব করেই ফার্ম চালু করতে হবে।

মোট কথা আমি যে দামে পণ্যটি বিক্রি করবো সেই দাম ধরেই আমাকে ফার্ম ম্যানেজমেন্ট পরিচালনা করতে হবে।

এটা শুধু মুরগি নয়, ডিম, মাছের ক্ষেত্রেও একই কথা বলছি। বর্তমান বাজার যাচাই করে সম্পূর্ণ ধারণা নেয়ার পর একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করে খামার পরিচালনা করতে হবে। উৎপাদন খরচটা মাথায় রেখে আমাকে কাজটি করতে হবে।

আমাদের আরেকটি ম্যাসেজ হলো প্রত্যেকে যেন স্বাস্থ্য সম্মত মাংস, ডিম, মাছ কিনেন। বাজারের যত্রতত্র যে কোন দোকান থেকে কেনার চেয়ে যেখানে স্বাস্থ্য সম্মত পণ্য পাবেন সেখান থেকে এসব পণ্য কিনবেন।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: নারিশের পণ্য কেন খামারি, চাষি বা অন্যান্যরা ব্যবহার করবে?

মো. সামিউল আলীম: নারিশ হলো শতভাগ পরিবেশ বান্ধব কোম্পানি (প্রতিষ্ঠান)। খামারিদের কথা মাথায় রেখেই প্রতিষ্টানটি কার্যক্রম সম্পাদন করছে। এমনিতে শুধু ব্যবসা করবো এরকম নয়। আমাদের মূল কথা হলো, ‘খামারি বাঁচলে এজেন্ট বাঁচবে, এজেন্ট বাঁচলে নারিশ ব্যবসা পরিচালনা করে যেতে পারবে।’

কারণ খামারি না থাকলে আমি কার সাথে ব্যবসা করবো। আমি এজেন্ট আছি, নারিশ আছি, কিন্তু খামারি নাই তাহলে আমি কার সাথে ব্যবসা করবো? এ কারণে খামারির সংখ্যা বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছি। খামারের সংখ্যা বাড়লে বেকারের সমস্যারও সমাধান হবে। যারা চাকরির জন্যে আসছে তারা স্বাবলম্বী হবে। এ খাতে তারা উদ্যোক্তা হতে পারবে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: নারিশের পণ্যের গুণ, মান সম্পর্কে কিছু বলবেন।

মো. সামিউল আলীম: আমরা তিন ধাপে পণ্য যাচাই বাছাই ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বাজারজাত ও সরবরাহ করি। কাঁচামাল কেনা থেকে শুরু করে সরবরাহের আগ মহুর্ত পর্যন্ত তিন ধাপে চেক করা হয়।

পণ্যের গুণগত মানের সাথে আমরা কখনই আপোষ করি না। কোন রকম সমস্যা ধরা পরলে সাথে সাথে সেগুলো রিসাইক্লেনে চলে যায়। শতভাগ ব্যবহার উপযোগী হলেই পণ্য বাজারজাত শুরু হয়।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সারা বাংলাদেশে পণ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা রয়েছে।

মো. সামিউল আলীম: প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে আমাদের এজেন্ট নিয়োগ রয়েছে। তারা তাদের নিজস্ব দোকান থেকেই পণ্য সরবরাহ করেন। আর বাচ্চা ও তেলাপিয়ার পোনা প্রতিটি পয়েন্টে পয়েন্টে পৌঁছে দেই। রাস্তাঘাটের সমস্যার কারণে চাষিদের বেশ সমস্যা হয়। এ কারণে উদ্যোগটি নিয়েছি।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: নারিশের ওপর ক্রেতাদের আস্থা বাড়ছে কী?

মো. সামিউল আলীম: আসলে এর উত্তর খামারি, চাষিরাই দিতে পারবেন। আমার যে মূল কাজ সেটা করছি। আমাদের খামারি, চাষির সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সে হিসাবে তো বলতে পারি অবশ্যই প্রতিমহুর্তে আস্থা বাড়ছে। কেননা তারা যদি খুশি না থাকে তাহলে বিক্রি বাড়বে না। যেহেতু বিক্রি বাড়ছে সেহেতু খামারিরা সুখী এবং লাভবান হচ্ছে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: নারিশের শুরু থেকেই কাজ করছেন, মূল চ্যালেঞ্জ কি?

মো. সামিউল আলীম: মূল চ্যালেঞ্জ হলো পণ্য দিয়ে কাস্টমারকে লাভবান করানো। কোন প্রতিষ্ঠানের পণ্য নিয়ে ক্রেতা লাভবান হলেন, সেটাই হলো মূল।

প্রতি বছরই একই গুণগত মানের পণ্য ক্রেতারা পাচ্ছেন বলেই নারিশের ওপর আস্থা রাখছেন তারা। কোম্পানির ওপর আস্থা আছে যে, এদের পণ্য কখনো খারাপ হবে না। এ কারণে ক্রেতারা অন্য দিকে যেতে ভয় পান, যদি ফল খারাপ হয়!

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ক্রেতাদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ আসলে আপনারা কী পদক্ষেপ নেন?

মো. সামিউল আলীম: ক্রেতা এক বললে, আমি তিন বলি। অর্থাৎ সে যদি এক বলে আমরা তা সর্ব্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ম্যানেজমেন্টকে বোঝাই এবং দ্রুত সমাধান দেই। কোন সমস্যাকে কখনো ছোট করে নয় বরং বড় করে দেখি। সমস্ত ডিপার্টমেন্ট (বিভাগ) এক সাথে কাজ করে সেই সমস্যার দ্রুত সমাধান দেই।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: খামারি বা ক্রেতাদের উদ্দেশ্য কিছু বলবেন।

মো. সামিউল আলীম: আমি ভালো পণ্য দিলাম তাতেই কিন্তু সব হবে না। ক্রেতাকেও দেখতে হবে পণ্যটি ভালো ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উৎপাদন হচ্ছে কিনা।

খেয়াল করতে হবে তারা কার (কোন প্রতিষ্ঠানের) সাথে ব্যবসা করছে। যত্রতত্র এর সাথে ব্যবসা করলে কী হবে সেটাও মাথায় থাকতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে যাদের ভালো রেপুটেশন আছে সেগুলোর দিকে গুরুত্ব দেয়া উচিত।

কারণ এখানে একজন উদ্যোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার নগদ টাকা খোয়া যাবে। সুতারাং সতর্ক থাকতে হবে। চিন্তাভাবনা করে বুদ্ধিমানের সাথে সব কিছু করতে হবে। গোছানো পরিকল্পনা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে বড় বড় সফল খামারি, চাষিদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারেন।

অভিজ্ঞদের সাথে আলাপ করেই বুঝে শুনে সব কাজ করতে হবে। ব্যবসাটা নিজের মনে করেই করতে হবে। ধারে পণ্য কিনছি বা কেউ সহযোগিতা করছে এগুলো মাথায় না রেখে ব্যবসা করতে হবে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সার্বিকভাবে দেশের পোল্ট্রি ব্যবসা নিয়ে কিছু বলবেন।

মো. সামিউল আলীম: আমরা তো সবাই একটা ব্যবসা নিয়ে প্রতিযোগিতা করছি। আমরা বাইরের বাজার ধরার চেষ্টা করছি না। আন্তর্জাতিক মানের পণ্য তৈরির দিকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে বাইরের বাজারের পথে হাঁটতে হবে।

এছাড়া বড় প্রতিষ্ঠানসমূহের নিজেদের ব্র্যান্ডে পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নিলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডের ভ্যালু কাজ করবে। এতে আস্থা বাড়বে গ্রাহকের।

আর সরকারের উচিত ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে মুরগি, ডিম, মাছ বিক্রির ব্যবস্থা করতে সহায়তা করা। আমরা সবাই স্বাস্থ্য সচতেন হলেও বাজারে যে পরিবেশে ডিম, মুরগি বিক্রি হচ্ছে তা মোটেও স্বাস্থ্য সম্মত নয়। যদিও এ বিষয়ে সরকার বিভিন্নভাবে বার্তা দিচ্ছে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: এ সময়ে কোনদিকে বেশি নজর দেয়া উচিত।

মো. সামিউল আলীম: পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নে নীতিমালা হওয়া খুব দরকার। নিয়ম কানুন তোয়াক্কা না করে অনেকেই ব্যবসা শুরু করছে আবার আবার দুদিন পরে উধাও হয়ে যাচ্ছে।  এভাবে চলতে থাকলে এ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া এখন বিপনণ পর্যায়েও গুরুত্ব দেয়া উচিত।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দীর্ঘদিন ধরে নীতিমালাটি প্রসেসিং হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবায়ন হচ্ছে না, এর কী কারণ বলে মনে করেন?

মো. সামিউল আলীম: সঠিক নেতৃত্বের অভাবে রয়েছে। এ কারণে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সঠিক নেতার দরকার।

সাধারণ মানুষ সাপোর্ট বা সহযোগিতা করবে কিন্তু নেতা পরিবর্তন করবে। সঠিক উদ্যোগ গ্রহণকারী ও দক্ষ লিডার দরকার। এই নীতিমালা কারও পক্ষে হলে হবে না। হতে হবে দেশের পক্ষে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: মাঠ পর্যায়ে মূল সমস্যা কি বলে মনে করেন?

মো. সামিউল আলীম: মাঠ পর্যায়ে নীতিমালার অভাব আছে। অনেকটা বলা যেতে পারে অল্প বিস্তর নিয়ম মেনে যে যার মতো ব্যবসা পরিচালনা করছে। জবাবদিহীতার জায়গাটা খুবই অল্প।

কোথায় কীভাবে প্রতিষ্ঠান ব্যবসা পরিচালনা করবে, কোন এলাকায় খামার হবে, কোন এলাকায় হবে না, কীভাবে খামার পরিচালনা হবে, বিনিয়োগের ধরণ, বাজারব্যবস্থাপনাসহ নানা দিকের দিক নির্দেশনা থাকতে হবে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: পোল্ট্রির ব্যবসার সাথে যুক্তরা মনে করছেন বিদেশিরা নিজেদের মতো করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এ বিষয়ে কিছু বলবেন।

মো. সামিউল আলীম: বিদেশীরা আসবেই। কিন্তু সঠিক নীতিমালা থাকতে হবে। বিদেশীদের ব্যাংকের সুদ অনেক কম, আমাদের অনেক বেশি। তুলনামূলক তাদের বিনিয়োগ আর আমাদের বিনিয়োগের মধ্যে পার্থক্য আছে। পণ্য উৎপাদনে বিদেশী বিনিয়োগকারীর খরচ আমার আমাদের খরচ কিন্তু একরকম নয়।

বিদেশীদের সাথে দেশের ব্যবসায়ীদের কুলিয়ে উঠতে হলে ব্যাংক ঋৃণ কমিয়ে আনতে হবে, নইলে এমন ব্যবস্থা করতে হবে যেন দুপক্ষের ব্যালান্স হয়। ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যালেন্সটা জরুরি। মনে রাখতে হবে বিদেশীরা আমাদের দেশ থেকে টাকা নিয়ে যাচ্ছে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দীর্ঘ সময় ধরে এ শিল্পের সাথে পথ চলা, এ বিষয়ে কিছু বলবেন।

মো. সামিউল আলীম: প্রায় ১৯ বছর ধরে নারিশের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। এ প্রতিষ্ঠানের সূচনা লগ্ন থেকেই কাজ করছি। আর এ শিল্পে রয়েছি প্রায় ২৪ বছর ধরে।

গত দুই দশকে পোল্ট্রি শিল্পে অনেক বড় বিপ্লব হয়েছে। এক সময়ে লেয়ার মুরগির ক্ষেত্রে ৬ মাস আগে বুকিং দিতে হতো, মাছের খাদ্য ব্যবস্থাপনা এমন ছিলো না। বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকালেই বোঝা যায় যে কত পরিবর্তন হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: পোল্ট্রি ও মৎস্য শিল্পে নিজেকে নিবেদিত করার অনুভূতি নিয়ে কিছু বলবেন।

মো. সামিউল আলীম: এখন অনেক উপভোগ করি। আমি চিন্তা করি, একটা ভালো কাজের সাথে আছি। ভালো কাজ করছি। আমাদের সাথে যারা ব্যবসা করে এজেন্ট, খামারি তাদের জীবনের মান উন্নয়ন করছি ব্যবসার মাধ্যমে।

বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে এজেন্টের বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা করছি আবার খামারিদের সচেতন করে তোলার পাশাপাাশি সঠিক ব্যবস্থাপনার পরামর্শ দিয়ে দক্ষ করে তুলছি। ভালো পণ্য দিয়ে তাদের লাভবান করতে সহযোগিতা করছি।

খামারি লাভবান হলে তারা দোয়া করেন। আবার এজেন্টরা লাভাবান হলে, তারাও খুশি হন। তারা বলে যে ভাই, আপনার জন্যে আজ এ পর্যায়ে এসেছি।

এই যে দোয়া, এটাই অনেক বড় পাওয়া। তাদের দোয়া অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। আবার কোন কারণে যদি তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন তখন মন খারাপ হয়ে যায়, খারাপ লাগে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: চাকরি জীবনে পোল্ট্রির শিল্পের সাথে এভাবে দীর্ঘদিন পথ চলা হবে এটা কি ভেবেছিলেন?

মো. সামিউল আলীম: আসলে আমার চাকরি করার ইচ্ছে ছিলো না। আমার এক চাচার হাত ধরে এ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ।

এক সময়ে এ শিল্পের প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিলো। পণ্যের জন্যে ছয় মাস বুকিং দিয়ে রাখা হতো, টেনশন, মার্কেট পরে গেলে বাচ্চা বিক্রি ও খাদ্য বিক্রি হয় না। এরকম নানা প্রতিবন্ধকতা ছিলো। ওই সময়ে তো একবার চাকরি ছেড়েই দিয়েছিলাম।

এরপর আবার যোগ দিয়ে পথ চলা। ট্র্যাক আর পরিবর্তন করা হলো না…

আমার ভেতরে সব সময় কাজ করে নতুন কিছু করা। আমি কোম্পানিকে (প্রতিষ্ঠানকে) নতুন নতুন ধারণা ও পরিকল্পনা দিয়ে মার্কেট এগিয়ে রাখি। এখন আমার কাছে শুধু ব্যবসা মনে হয় না, এটা আমার হবি (শখ)।

প্রতিযোগিতার মার্কেটে নতুনত্ব কিছু না আনলে হবে না। এটাই তো লিডারশীপ। মার্কেট লিডার হতে হলে সব সময়ই অ্যাডভান্স হতে হবে। আগামী দুবছর পর কী হবে তা এখন থেকেই চিন্তা করতে হবে। পাঙ্গাস মাছ যেমন খাবারের জন্যে সব জায়গায় যায়, আমরা কাজের জন্যে তেমন সব জায়গায় যাই। সব সময়ে কাজের মধ্যে থাকার আনন্দ রয়েছে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ধন্যবাদ আপনাকে।

মো. সামিউল আলীম: আপনাকেও ধন্যবাদ।