ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: শরীয়তপুর সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নের পূর্ব সোনামুখী গ্রামে এক চুরির ঘটনা ঘটেছে। চার বন্ধু মিলে এক মুরগির খামার থেকে ৩ টি মুরগি চুরি করে পিকনিক করে। এরপর এই ৩ মুরগিই তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ৩ মুরগিতে গুনতে হয় দেড় লাখ টাকা জরিমানা!

মুরগি চুরির দায়ে গত ৩১ মার্চ (বুধবার) রাতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের নিকটবর্তী পালং মডেল থানা ও ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম্য আদালত থাকলেও স্থানীয় মাতবরেরা শালিস বসান। এর নেতৃত্ব দেন স্থানীয় মাতবর মতিন চৌকিদার। তিনটি মুরগি চুরির অভিযোগে চার তরুণকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেন তিনি। তবে জরিমানার ঘটনায় এলাকায় চলছে রীতিমত আলোচনা-সমালোচনা।

এ ঘটনায় গত ৪ এপ্রিল ও ১০ এপ্রিল দুটি দরবার সালিশও হয়। শেষ দরবারে এক অভিযুক্তকে চড়-থাম্পড় মারা হয়। মুরগি চুরির ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন ওই গ্রামের ইউনুছ তালুকদারের ছেলে শাহাদাত তালুকদার (১৮), সোবাহান তালুকদারের ছেলে টিটু তালুকদার (১৯), এলাহি তালুকদারের ছেলে বাবু তালুকদার (১৮) ও আজিজ রাড়ির ছেলে জহিরুল রাড়ি (১৮)।

স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় মাতবর মান্নান চৌকিদার, সেকেন্দার রাড়ি, মতিন চৌকিদারসহ আরও বেশ কয়েকজন এ বিচারকাজ পরিচালনা করেন। এ সময় অন্তত ৪০০/৫০০ জন লোক উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, গত ৩১ মার্চ রাতে সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নের পূর্ব সোনামুখী গ্রামের জিল্লুর রহমান তালুকদারের ছেলে রাহাত তালুকদারের মুরগি খামার থেকে তিনটি ব্রয়লার মুরগি চুরি হয়। একই গ্রামের শাহাদাত, টিটু, বাবু ও জহিরুল এ চুরি করেছেন। এমন অভিযোগে গত ৪ এপ্রিল রাহাতের বাড়িতে সালিশ বৈঠক বসে। এসময় স্থানীয় মাতব্বররা বেশ কয়েকজন অভিযুক্ত চার জনকে দোষী সাব্যস্ত করে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেন। ১০ এপ্রিলের মধ্যে এ টাকা মাতবরদের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু পুরো টাকা জমা না দেওয়ার পুনরায় ওইদিন বিকালে ১১০ নম্বর সোনামুখী আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সালিশ বৈঠক বসে। বৈঠকে ৪০০/৫০০ জন লোকের উপস্থিতিতে অভিযুক্ত শাহাদাতকে চড় মারেন মাতবর মতিন চৌকিদার।

এদিকে অভিযুক্ত টিটু তালুকদার বলেন, বিকালে আমরা ক্রিকেট খেলি। পরে রাতে বন্ধুরা মিলে খাওয়ার জন্য শাহাদাত, বাবু ও জহিরুল মিলে তিনটি মুরগি ওই খামার থেকে আনে। এ ঘটনায় সালিশে আমাদের দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

স্থানীয় মাতবর সেকেন্দার রাড়ি বলেন, ‘মুরগি চোরেদের খামারের মালিক হাতে নাতে ধরতে পারেনি। তবে ধরা পড়ার পর তারা বলছে তিনটা মুরগির কথা। আর খামারের মালিক বলছে ১৯৭টি মুরগি চুরি হয়েছে। আমরা সঠিকভাবে মুরগি দেখিনি। তিন জন আগের চোর, আর একজন নতুন যোগ করে চার জন মুরগি চোরের সঙ্গে জড়িত।’

রুদ্রকর ইউনিয়ন পরিষদের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার পারুল আক্তার বলেন, ঘটনার পরেরদিন বিষয়টি আমি জানতে পারি। পরে আমরা ওই চার জনকে জিজ্ঞেস করি, ওরা বলে পিকনিক করবে বলে তিনটি মুরগি নিয়েছিল। তবে স্থানীয় মাতবররা সালিশ দরবার বসিয়ে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেছেন, এটা ঠিক না।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান বলেন, গরু চুরি হোক, আর মুরগি চুরি হোক, মাতবরদের গ্রাম্য সালিশে এ ধরনের বিচার করার আইনি বিধান নেই। স্থানীয় চেয়ারম্যানের আদালতে বিচারের আবেদন করা যেতো। সেই অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত হলে গ্রাম্য আদালত বিচার করবে। আমি মনে করি মুরগি চোরের বিচার করে গ্রাম্য মাতবরা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন। তারা সমঅপরাধী বলে আমি বিশ্বাস করি।

শরীয়তপুরের সদরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আক্তার হোসেন বলেন, বিষয়টা আমি জানলাম। এ ধরনের ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান সর্বোচ্চ জরিমানা করতে পারে ৪ হাজার ৪৯৯ টাকা। স্থানীয় মাতবরদের গ্রাম্য সালিশে এ ধরনের কোনও বিচার করার আইনি বিধান নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খামারের ৩ মুরগিতে জরিমানা দেড় লাখ! শিরোনামে সংবাদের তথ্য বাংলাট্রিবিউন থেকে নেওয়া হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ