মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ থেকে: পোল্ট্রি, ডেইরি, গবাদিপশু পালনে আয় বৃদ্ধিতে খামারে সঠিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, টেকসই ও মজবুত অবকাঠামো গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। এ কারণে খামারে দিনদিন বাড়ছে সিমেন্ট শীটের ব্যবহার।
যে খামারি ভালো মানের সিমেন্ট শীট ব্যবহার করছেন সে খামারিই লাভবান হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে আনোয়ার সিমেন্ট শীট খামারিদের সর্বোচ্চ পছন্দের জায়গা দখল করেছে। আনোয়ার সিমেন্ট শীট ব্যবহারে খামারিরা অধিক লাভবান হচ্ছেন। অধিক ভালো মানের সিমেন্ট শীট পেয়ে খুশি তারা।
গত বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর, ২০২০) নওগাঁ জেলার বিভিন্ন এলাকার খামারিদের সাথে আলাপকালে এসব তথ্য জানা যায়।
ধামইরহাট উপজেলার বেড়াডাঙ্গা এলাকার তালঝাড়ি কৃষি খামারের উদ্যোক্তা প্রকৌশলী ফিজার আহম্মেদ প্রায় ৬ হাজার মুরগি ও অর্ধশতাধিক গাভী পালন করছেন। এছাড়া তাঁর খামারে রয়েছে ভেড়া, গাড়ল, ভার্মি কম্পোস্ট প্রজেক্ট, বায়োগ্যাস প্লান্ট। তাঁর কৃষি খামারে আনোয়ার সিমেন্ট শীট ব্যবহার করেছেন।
আলাপকালে প্রকৌশলী ফিজার আহম্মেদ এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, যেখানে সাধারণ টিনের ঘরে ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠে যায় সেখানে আনোয়ার সিমেন্ট শীটের কারণে ৩০ এর বেশি উঠে না। গরমে ও শীতে উভয় সময়ই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে খুব ভালো ফল পাচ্ছি। আবার দামে স্টিলের শীটের চেয়ে কম। এটি ব্যবহারে নিশ্চিত সফলতা মিলবে খামারিদের। কারণ রোগ না হলেই লাভ হবে। খামার নির্মাণে আনোয়ার সিমেন্ট শীট যারা ব্যবহার করছেন তারাই সফলতা পাচ্ছেন।’
আনোয়ার সিমেন্ট শীটের খোঁজ পাওয়া বিষয়ে জানতে চাইলে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এই শিক্ষক বলেন, ‘গতবছর (২০১৯) Animal Health Companies Association of Bangladesh (AHCAB) মেলায় আনোয়ার সিমেন্ট শীট সম্পর্কে জানতে পারি। প্রশস্ত বেশি ও দীর্ঘস্থায়িত্ব হওয়ায় দাম কম পরে। তাঁদের কথা শুনে আমি আশ্বস্ত হই। এরপর আনোয়ার শীট ব্যবহারে দেখি সত্যি-সত্যিই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।’
শুধু প্রকৌশলী ফিজার আহম্মেদ নন উপজেলার অধিকাংশ খামারিই এখন আনোয়ার সিমেন্ট শীট ব্যবহার করছেন বলে জানা যায়। ধামইরহাট উপজেলার সিলিমপুর এলাকার পোল্ট্রি খামারি জাকারিয়া হোসেন দীর্ঘ ১০ বছর ধরে খামার পরিচালনা করছেন।
অভিজ্ঞ ও সফল এ খামারি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, দীর্ঘ ১০ বছর পোল্ট্রি খাতের সাথে যুক্ত আছি। আগে স্টিলের শীট ব্যবহার করেছি।বর্তমানে নিজস্ব ৩ বিঘা জমিতে পোল্ট্রি এবং ডেইরি খামার করার উদ্যোগ নিয়ে ১৪ কাঠা জমিতে পোল্ট্রি খামার করেছি। সবগুলো আনোয়ার সিমেন্ট শীট লাগিয়েছি। এতে ভালো ফল পাচ্ছি।
তিনি বলেন, এলাকার বেশিরভাগ খামারিই আনোয়ার সিমেন্ট শীট ব্যবহার করছেন। কেননা এ সিমেন্ট শীট প্রশস্ত, টেকসই ও অন্যান্য শীটের তুলনায় বেশি মজবুত। মনে হয় ১০০ বছরেও কিছু হবে না। আগের খামারের টিনে মরিচা ধরেছে। সেগুলো সরিয়ে আনোয়ার সিমেন্ট শীট লাগাব।
অভিজ্ঞতার আলোকে আনোয়ার সিমেন্ট শীট ব্যবহারের সুফল বিষয়ে খামারি জাকারিয়া হোসেন এগিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, গরমের সময় তাপমাত্রা অত্যন্ত বেড়ে যায়। ফলে মুরগি হিট স্ট্রোক, রক্ত আমাশয়, সর্দিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। মূলত এসব রোগ তাপমাত্রা উঠানামা ও তাপ নিয়ন্ত্রণ না থাকলে হয়ে থাকে। সাধারণ টিন/স্টিল ব্যবহারে খামারে
র তাপ কয়েকগুণ বেড়ে যায় কিন্তু আনোয়ার সিমেন্ট শীটের কারণে খামারে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
‘আবার শীতের সময় কুয়াশা (শিশির) ফোঁটা সাধারণ স্টিলের শীটের ফাঁক দিয়ে নিচে পড়ে লিটার ভিজিয়ে দেয়। মাসে ১০ থেকে ১২ দিন লিটার পরিস্কার করতে হতো। কিন্তু এখন আনোয়ার সিমেন্ট শীট ব্যবহারের ফলে আগের চেয়ে অর্ধেকেরও কম সময় লিটার পরিস্কার করতে হয়।’
সরেজমিনে দেখা যায় এসব খামারিদের সফলতা দেখে নতুন উদ্যোক্তাদেরও আগ্রহ বাড়ছে আনোয়ার সিমেন্ট শীট ব্যবহারে। জেলার মহাদেবপুর উপজেলার মহিষবাথান এলাকার পোল্ট্রি খামারি অনিমেষ সাহা এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ‘শেয়ারে দু-জনে একটি পোল্ট্রি খামার করছি। সেখানে আনোয়ার সিমেন্ট শীট লাগানো হচ্ছে। অর্ধেক লাগানো হয়েছে। কাজ এখোনো চলমান রয়েছে। সিমেন্ট শীট ব্যবহারে কাঠের ফ্রেমে একটু খরচ বেশি হলেও জিনিসটা হয় টেকসই।’
এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পুরাতন পোল্ট্রি ও ডেইরি খামারিদের পরামর্শে তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ। শিক্ষিত বেকার যুবকরা তাঁদের আয়ের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন কৃষিকাজ। কেউবা ডেইরি আবার কেউবা পোল্ট্রি খামার করছেন। খামার ব্যবস্থাপনায় বাঁশ, কাঠের সাথে শোভা পাচ্ছে আনোয়ার সিমেন্ট শীট।
রোগ প্রতিরোধে খামারে সিমেন্ট শীট ব্যবহারের উপকারিতা জানতে চাইলে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডাঃ রিপন রেজা ও ভেটেরিনারি সার্জন রীপা রাণী বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। তারা বলেন, গরম এবং শীতের মৌসুমে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
পশু-পাখি তাপমাত্রা জনিত ধকলের কারণে নানান রোগে আক্রান্ত হয়। হাঁসের ডাকপ্লেগ, মাইকোপ্লাজমোসিস; মুরগির রাণীক্ষেত, ছাগলের পিপিআর, গরুর এসএমডি (ক্ষুরারোগ) হয়ে থাকে। মূলত টিনের ঘর তাপ খুব দ্রুত শোষণ করে উত্তপ্ত করে তোলে। আবার শীতের সময় ঠান্ডা করে দেয়। কিন্তু আনোয়ার সিমেন্ট শীট তাপের কুপরিবাহী হওয়ায় এমনটা হয় না। তাতে খামারে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে রোগ বালাই কম হয়। ফলে খামরিদের অনেক সাশ্রয় হয়।
ধামইরহাট আমাইতাড়া বাজারের আনোয়ার সিমেন্ট শীট ডিলার রবিউল আলম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ‘শতাব্দী প্রাচীন দেশের ঐতিহ্যবাহী আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্ট্রি এর আনোয়ার সিমেন্ট শীট। এই সিমেন্ট শীট ব্যবহারে খামার যেমন মজবুত হবে ঠিক তেমনি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সাধারণ স্টিল/টিন ব্যবহার করা ঘরের তাপমাত্রা থেকে আনোয়ার সিমেন্ট শীট ব্যবহারের ঘরের তাপমাত্রা সবসময় চার থেকে পাঁচ ডিগ্রি কম হবে, আবার শীতে তাপমাত্রা ধরে রাখবে’
মেসার্স হা-মীম এন্টার প্রাইজের মালিক আরোও বলেন, উন্নত প্রযুক্তিতে তৈরি এই সিমেন্ট শীট খামারিদের অনেক পছন্দ। সাধারণ দামী টিন ৩ হাজার ৫০০ টাকায় কিনলে ৩৫ ইঞ্চি পাওয়া যায়। কিন্তু একই দামে সিমেন্ট শীট পাওয়া যায় ৪২ ইঞ্চি। সব মিলিয়ে আমার কাস্টমার অর্ধশতাধিকেরও বেশি। তাঁরা সবাই খামারে আনোয়ার সিমেন্ট শীট লাগিয়েছেন।’
এগ্রিকেয়ার/এমএইচ