ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ফরিদপুরের সালথায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতায় দুটি খাল পুনর্খননের কাজ শুরু হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়সারা কাজে খালের মাটি ফসলি জমিতে ফেলায় পাট, বেগুন, মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষকদের।

খননযন্ত্র এক্সক্যাভেটর দিয়ে খাল কেটে মাটি ফেলা হচ্ছে স্থানীয়দের ফসলি জমিতে। এছাড়া খাল পুনর্খনন কাজের মান নিয়েও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ।

কৃষকরা বলছেন, খালের পাড় অত্যন্ত খাড়া করে কাটা হয়েছে। খননের শুরুতেই খালের পাড়ে এলোমেলো করে মাটি রাখা হয়েছে। তাতে সামান্য বৃষ্টিতেই মাটি ধসে আবার খালেই চলে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে- পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন সঠিক সময়ে তা পরিদর্শন করছেন না।

জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে খালে পানি সংরক্ষণ ও কৃষি জমিতে পানি সেচের জন্য ‘দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’-এর অধীনে পাউবোর উদ্যোগে এ দুটি খাল পুনর্খনন শুরু হয় গত ২৯ এপ্রিল। সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের সিংহপ্রতাপ এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িদিয়া নদী থেকে বাইনাখালি পর্যন্ত এক হাজার ১৫ মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট রাজাবাড়ি খাল ও মোড়হাট এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া কুমার নদ থেকে দীঘের বিল পর্যন্ত এক হাজার ২৫০ মিটার দৈর্ঘ্যর কেষ্টখালি খালের খনন কাজ চলছে। খনন কাজ বাস্তবায়ন করছেন কুমিল্লার ঝাউতলার মেসার্স সারা এন্টারপ্রাইজ।

এলাকাবাসী ও সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাজাখালি ও কেষ্টখালি খাল খনন কাজ করা হচ্ছে দুটি এক্সক্যাভেটর দিয়ে। গত রোববার দুপুরে কাজের এলাকায় প্রকল্পের ঠিকাদার বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো তদারকি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দেখা যায়নি। কেষ্টখালি ও রাজাবাড়ি খাল খননে ওপরে প্রস্থ ৪৪ থেকে ৪৫ ফুট করে কাটার কথা থাকলেও বাস্তবে ২৫ থেকে ৩৫ ফুট করে কাটা হচ্ছে। খালের তলায় প্রস্থ ১৩ থেকে ১৬ ফুট করে কাটার কথা থাকলেও ১০ থেকে ১২ ফুট করে কাটা হচ্ছে। খাল দুটির গভীরতা সাড়ে ৩ ফুট থেকে ৮ ফুট করে খনন করার কথা থাকলেও বাস্তবে গভীর করা হচ্ছে ২ থেকে ৪ ফুট।

খাল দুটি পুনর্খনন কাজের জন্য ৬৩ লাখ ৬২ হাজার ৪০২ টাকায় বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ৪১ ভাগ ছাড়ে কাজটি নিয়েছেন ৩৭ লাখ ৫৩ হাজার ৮১৮ টাকায়। খনন কাজ আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা। তবে ৩০ মে পর্যন্ত ওই কাজের ৭০ ভাগ শেষ হয়েছে বলে দাবি করেছেন এ কাজের তদারকিতে নিয়োজিত পাউবোর কর্মকর্তারা।

স্থানীয় গট্টি ইউনিয়নের কাউলিকান্দা গ্রামের বাসিন্দা কৃষক এস্কেন মাতুব্বর বলেন, কেষ্টখালী খালের পাড়ে কৃষকদের ২০ বিঘা জমি রয়েছে। এর মধ্যে ১০ বিঘা জমির পাট খালের কাটা মাটির কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে।

মেম্বার গট্টি গ্রামের বাসিন্দা মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, তার দুই বিঘা জমির ফসল কেষ্টখালী খাল কাটায় মাটির নিচে চাপা পড়েছে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেষ্টখালী খালের মাটি রাখার জন্য ওই এলাকার অন্তত ১০ বিঘা জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে।

একই অভিযোগ এসেছে রাজাবাড়ী খাল খনন এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে। সিংহ প্রতাপ গ্রামের কৃষক আবদুর রহিম বলেন, রাজাবাড়ী খালের মাটির কারণে তার ১৪ কাঠা জমির বেগুনগাছ চাপা পড়ে গেছে। তিনি বলেন, ওই খালের মাটি রাখার জন্য ওই এলাকার অন্তত আট বিঘা জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে।

খাল দুটির খনন কাজ বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার জাকির হোসেন বলেন, খালের গভীরতা শিডিউল অনুযায়ী শতভাগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তবে খালের পাশের কিছু জায়গা ব্যক্তিমালিকানাধীন হওয়ায় শিডিউল অনুযায়ী চওড়া করা যায়নি। কোনো কোনো জায়গায় কিছু কম করতে হয়েছে। তিনি বলেন, এ কাজ তদারকি করে ওয়াটার বোর্ড টাস্কফোর্স। আমি একশ’ ভাগ কাজ করলেও তারা ৯৫ ভাগের বেশি বিল দেয় না।

কম টাকায় কাজ নেওয়ার বিষয়ে ঠিকাদার জাকির হোসেন বলেন, আমি ব্যবসার দিকে তাকিয়ে কাজ নিইনি, জেদ করে এবং অন্যকে নিতে দেবো না, এই মনোভাব নিয়ে কাজ নিয়েছি। খালের মাটি রাখায় ফসলের ক্ষতি হওয়ার ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই। কেননা এ খাতে কোনো টাকা বরাদ্দ নেই। তাই আমার করার কিছুই নেই।

পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী অতনু প্রামাণিক বলেন, পাউবো কাজের তদারকি করছে না এ অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি নিজে, নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদসহ পাউবোর কর্মকর্তারা কাজের তদারকি করছেন। তিনি বলেন, আপাতদৃষ্টিতে খালের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতা সঠিকভাবে করা হচ্ছে বলে তাদের মনে হয়েছে। তবে বিল দেওয়ার আগে শিডিউল অনুযায়ী কাজ বুঝে নেওয়া হবে। কাজ শিডিউল অনুযায়ী না হলে বিল দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, খালের পাড় বেশি খাড়াভাবে কাটা হয়েছে এটি তার নিজের কাছেও মনে হয়েছে। তিনি বলেন, খালের মাটি পাশের জমিতেই রাখতে হবে। তবে মাটির পরিমাণ কম বলে আমরা ইউএনওকে দিয়ে জমি ইজারা নেওয়ার উদ্যোগ নেইনি।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ