রাজশাহীর সপুরা এগ্রো, ছবি:এগ্রিকেয়ার২৪

ড. মো: জালাল উদ্দিন সরদার, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: গবাদিপশুর জন্য রোগ বালাই কাছের শত্রু। যেকোন সময় আক্রমণ করে বসতে পারে। তাই ভ্যাকসিন বা টিকা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদে ভরপুর হওয়ায় সরকারিভাবে টিকা প্রস্তুত করা হয়। উৎপাদিত টিকা কমমূল্যে খামারিদের প্রদান করা হয়। গবাদিপশুর জন্য কয়েকটি ভ্যাকসিনের নাম ও ব্যবহার বিধি জানা প্রয়োজন।

ভ্যাকসিন বা টিকা একটি জৈবিক প্রোডাক্ট। নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত প্রাণীর দেহ হতে উক্ত জীবাণু সংগ্রহ করে বিশেষ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়। পরে ওই জীবাণুকে নিস্তেজ বা অর্ধমৃত বা মৃত অবস্থায় এনে এক ধরনের জীবাণুজাত ওষুধ তৈরি করা হয় যা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে দেহে প্রবেশ করালে উক্ত ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস জাতীয় রোগের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে, যাকে ভ্যাকসিন বা টিকা বলে।

গবাদিপশুর জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ভ্যাকসিন/ টিকার নাম ও ব্যবহার বিধি:

টিকার নামব্যবহারবিধি
১। তড়কা রোগের টিকা (Anthrax Vaccine)তড়কা টিকা ১০০ মিলি বোতলে তরল অবস্থায় থাকে। পশুর ৬ মাস বয়সে প্রথম টিকা দিতে হয়। গরু ও মহিষের জন্য টিকার মাত্রা হল ১ মিলি. এবং ছাগল ও ভেড়ার জন্য ০.৫ মিলি। ১ বছর অন্তর এ টিকা দিতে হয়। এ টিকা পশুর ঘাড়ের/গলার  চামড়ার নিচে দিতে হয়। তবে ৭ মাসের ঊর্দ্ধ বয়সের গর্ভবতী গরু/মহিষকে দেয়া যাবে না। ছাগল/ভেড়ার ক্ষেত্রে গর্ভধারণের ৩ মাস পরে  দেয়া যাবে না ।
২। গলাফুলা রেগের টিকা (Haemorrahagic Septicemia vaccine)গলাফুলা টিকা ১০০ মিলি তরল অবস্থায় বোতলে থাকে। পশুর ৬ মাস বয়সে প্রথম টিকা দিতে হয়। গরু ও মহিষের জন্য টিকার মাত্রা হল ২ মিলি. এবং ছাগল ও ভেড়ার জন্য ১ মিলি।  প্রতি ৬ মাস অন্তর টিকা দিতে হয়। এ টিকাও  পশুর ঘাড়ের চামড়ার নিচে দিতে হয়।
৩। বাদলা রোগের টিকা (Black Quarter Vaccine)বাদলা রোগের টিকা ১০০ মিলি তরল অবস্থায় বোতলে থাকে। পশুর ৬ মাস বয়সে প্রথম টিকা দিতে হয়। গরু ও মহিষের জন্য মাত্রা হল ৫ মিলি এবং ছাগল ও ভেড়ার জন্য ২ মিলি। প্রতি ৬ মাস অন্তর টিকা দিতে হয়। এ টিকা পশুর ঘাড়ের চামড়ার নিচে দিতে হয়। তবে এ রোগের টিকা   ২.৫-৩ বছর পরে আর গরু/ মহিষকে দেয়ার প্রয়োজন হয় না ।
৪। ক্ষুরা রোগের টিকা (Foot & Mouth Disease Vaccine)ক্ষুরা রোগের টিকা বোতলে তরল অবস্থায় থাকে। পশুর ৪ মাস বয়সে প্রথম টিকা দিতে হয়। এ রোগের বিভিন্ন স্ট্রেইনের জন্য বিভিন্ন ভ্যাকসিন পাওয়া যায় যেমন- মনোভ্যালেন্ট, বাইভ্যালেন্ট ও ট্রাইভ্যালেন্ট, ইত্যাদি। গরু ও মহিষের জন্য ভ্যাকসিনের মাত্রা মনো হলে ৩, বাই হলে ৬ এবং ট্রাই হলে ৯ মিলি এবং ছাগল ও ভেড়ার জন্য গরুর অর্ধেক ডোজ দিতে হয়। প্রতি ৪ মাস অন্তর টিকা দিতে হয়। এ টিকা পশুর ঘাড়ের চামড়ার নিচে দিতে হয়। উল্লেখ্য, গর্ভবতী পশুকেও এ টিকা দেয়া যায়।
৫। জলাতঙ্ক রোগের টিকা (Rabies Vaccine)জলাতঙ্কের জন্য দুই ধরনের টিকা পাওয়া যায়, যথা: HEP and LEP। জলাতঙ্ক রোগের টিকা ভায়ালে বা এম্পুলে হিমশুষ্ক অবস্থায় থাকে। ভায়ালের টিকা     ৩ মিলি বিশুদ্ধ (Distilled water) পানিতে মিশিয়ে সম্পূর্ণ টিকা মাংসপেশীতে ইনজেকশন করতে হয়।     উল্লে­খ্য HEP (GBP Bwc) টিকা বিশুদ্ধ পানিতে মিশিয়ে  ১.৫ মিলি পরিমাণ গরু ও মহিষের ৬ মাস বয়সে মাংসপেশীতে ইনজেকশন করতে হয়। LEP (GI Bwc) কুকুরের ৩ মাস বয়সে প্রথম এবং প্রতি বছর একই নিয়মে এ টিকা (৩.০ মিলি) দিতে হয়। এছাড়াও পশুকে কুকুরে কামড়ানোর পরে পোস্ট এক্সপোসার ভ্যাকসিন এআরভি (Anti Rabies vaccine/ ARV) দিতে হয়। বেসরকারি ওষুধ কোম্পানির র‌্যাবিসিন (Rabisin) ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। মাত্রা হলো- ১ম দিন ৪ মিলি  ৪ স্থানে   ১ মিলি করে, ৭ম দিনে ৩ মিলি ৩ স্থানে ১ মিলি করে এবং ২১তম দিনে  ৩ স্থানে ১ মিলি করে ৩ মিলি মাংসে দিতে হয় ।
৬। ছাগলের বসন্তের টিকা (Goat pox vaccine)ছাগলের বসন্তের টিকা ভায়ালে হিমায়িত অবস্থায় থাকে। ভায়ালের সাথে বিশুদ্ধ পানি থাকে। পানিতে এ টিকা গুলে ২ মিলি প্রতি ছাগলের লেজের গোড়াতে ত্বকের নিচে ইনজেকশন করতে হয়। ছাগলের ৫ মাস বয়সে প্রথম এ টিকা দিতে হয়।
৭। ছাগলের পিপিআর টিকা (PPR Vaccine)ছাগলের পিপিআর ভ্যাকসিন ভায়ালে হিমায়িত অবস্থায় থাকে। ভায়ালের সাথে ১০০মিলি ডাইলুয়েন্ট থাকে। এ টিকা সরবরাহকৃত ডাইলুয়েন্টের ভেতর ভালো করে মিশিয়ে  প্রতিটি ছাগলকে ঘাড়ের চামড়ার নীচে ১ মিলি ইনজেকশন করে দিতে হয়। ছাগলের ৩ মাস বয়সে প্রথম এ টিকা দিতে হয়। এ টিকা এক বছর অন্তর দিতে হয়। উল্লে­খ্য, গর্ভবতী ছাগলকেও এ টিকা দেওয়া যায় ।

 

গবাদিপশুর কয়েকটি ভ্যাকসিনের নাম ও ব্যবহার বিধি লেখাটি