ডাঃ মোঃ আতিকুর রহমান, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কৃমি হচ্ছে একরকমের অন্ত:পরজীবী। যা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর দেহে বাস করে সেখান থেকে খাবার গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। আমাদের খামারিরা গবাদিপশু পালন করতে গিয়ে একটি সমস্যার সম্মুখীন হয়, তা হলো পরজীবী বা কৃমি।

গবাদিপশুর কৃমি রোগের সমাধান ও করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেছেন রাজশাহী দুগ্ধও গবাদি উন্নয়নের উপ-পরিচালক ডাঃ মোঃ আতিকুর রহমান।

কৃমি এক ধরনের পরজীবী যা পশুর ওপর নির্ভর করে জীবন ধারণ করে। তারা পশুর ফুসফুসে, লিভারে, চোখে, চামড়ায় বাস করে ও পশুর হজমকৃত খাবারে বসে থাকে এবং পশুর ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। অনেক কৃমি পশুর রক্ত চুষে দুর্বল করে ফেলে।

গবাদিপশুকে কৃমি থেকে মুক্ত রাখার উপায়
গবাদিপশুর বাসস্থানের জন্য নির্ধারিত স্থানের মাটি শুষ্ক ও আশপাশের জমি থেকে উঁচু হওয়া প্রয়োজন। সম্ভব হলে নদীনালা, খালবিল, হাওর-বাঁওড় থেকে দূরে করতে হবে। গবাদিপশুর খামারের আশপাশে যেন বৃষ্টির পানি এবং অন্যান্য বর্জ্য জমে না থাকে । খামারের জন্য নির্ধারিত স্থানের মাটিতে বালির ভাগ বেশি হওয়া প্রয়োজন যেন বর্ষাকালে খামারের মেঝে কর্দমাক্ত না হয় । পশুর মলমূত্র ও আবর্জনা অল্প সময় পরপর পরিষ্কার করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন ঘরে মলমূত্র ও আবর্জনা জমা না থাকে। গবাদিপশুর বাসস্থান প্রতিদিন আদর্শ ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে এবং জীবাণুনাশক মেশানো পানি দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। প্রতি চার মাস পর পর কৃমির ওষুধ নিয়মিত খাওয়াতে হবে। সকালে খালি পেটে কৃমির ওষুধ খাওয়ালে সবচাইতে ভালো হয়। সকালে কৃমির ওষুধ খাওয়ালে বেশি কার্যকর হয়।

কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর নিয়ম
গরুকে কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর সময় কিছু নিয়ম জানা খুবই জরুরী। গরুর কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ানোর সময় ট্যাবলেটটি গুড়া করে চিটাগুড়ের সাথে মাখিয়ে অথবা কলা পাতাতে করে খাওয়ানো যায়। গরুকে কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ানোর পর কমপক্ষে এক ঘন্টা কোন ধরনের খাদ্য প্রদান করা যাবেনা। কোনোভাবেই দানাদার খাদ্যের সাথে কৃমির ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। গরুকে দানাদার খাদ্যের সাথে মিশলে কীটনাশক ট্যাবলেট ওষুধে তেমন কোনো কাজ করে না। প্রয়োজনে তুলনায় বেশি নয় যদিও কীটনাশক ট্যাবলেট নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশী পরিমান খাওয়ালে গরু তেমন বেশি ক্ষতি হয় না।

গর্ভবতী গাভীতে ঔষধ প্রদানের কমপক্ষে ৪৫ দিন পর কীটনাশক ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে। তবে গর্ভবতী গাভীকে খাওয়ালে সমস্যা নেই। কোনভাবে মাত্রার চেয়ে কম পরিমাণে খাওয়ানো যাবে না। মাত্রার চেয়ে কম খাওয়ালে কৃমি না মরে গিয়ে আরো বেশি আক্রমণ করবে। গর্ভবতী গাভীকে ট্যাবলেট খাওয়ানোর সময় অবশ্যই সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।

কৃমি যেভাবে ছড়ায়
গরুর ঘাস এর মাধ্যমে একটা গরু যখন অন্য গরুর খাবার খাই সেই গরুর নালা থেকে কৃমি ছড়াতে পারে।

গরুর কৃমি রোগের লক্ষণ
গরুর কৃমি রোগের লক্ষণ বেশ কিছু পাওয়া যায় যেমন গরুর খাবারে অরুচি হয়ে থাকবে ঘনঘন পেট ফাঁপা দেখা দিবে। শক্ত না হয়ে নরম পায়খানা বের হবে, গরুর শরীরে রক্ত কমে গরু দুর্বল হয়ে পড়বে। গরুর স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে না। গাভী গরু হিটে আসবেনা। গাভী গরু কনসেপ্ট করবে না। অনেক খাবার খাওয়ার পরে উন্নতি ঘটে না। লোম উস্কোখুস্কো হয়ে যায়। পায়খানা দুর্গন্ধযুক্ত পাতলা পায়খানা হয়। মাঝে-মাঝে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। কোন কোন সময় গলার নিচে পানি জমে ফুলে ওঠে রক্তস্বল্পতা দেখা যায়।

কৃমির ওষুধ
ট্যাবলেট অ্যালবেনডাজল বা প্যারাজল অথবা ফেনভিক। এছাড়া ইঞ্জেকশন নাইট্রোকসিনিল আইভারমেকটিন সাথেই লিভার মিসল। এগুলো গরম পানির সাথে খাওয়ানো যায়। এগুলো ৪ মাস পর পর দিতে হবে।

প্রিয় খামারি মনে রাখতে হবে, গাভী বা গরুর যে কোন সমস্যা হলে প্রথমে আপনাকে যেতে হবে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অফিসে। অভিজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে আপনাকে সেবা দিতে হবে। এছাড়া এগ্রিকেয়ার২৪.কম এর ফেসবুক পেজে ম্যাসাঞ্জারে আপনার সমস্যা জানাতে পারেন, আমরা বিশেষজ্ঞ এর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে আপনাদের জানাবো।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ