গবাদি প্রাণির নীরব ঘাতক

মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন, তরুণ ও শিক্ষিত খামারি, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ/ডেইরি খামারে যে কয়েকটি নীরব ঘাতক রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো ব্লাড প্রোটোজোয়া। প্রিয় খামারি আসুন জেনে নেয়া যাক, গবাদি প্রাণির নীরব ঘাতক ব্লাড প্রোটোজোয়া’র লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

শুরুতেই বলি, মনে রাখতে হবে ডেইরি, গরু হৃষ্টপুষ্টকরণসহ যে কোন খামারে সফলতা পেতে হলে চিকিৎসা বিষয়ে সতর্কতা থাকতে হবে। তবেই মিলবে শতভাগ সফলতা।

লক্ষণ: বাচ্চা প্রসবের পর হঠাৎ করে গাভী শুয়ে যায় উঠার শক্তি পায় না। এছাড়া গর্ভবতী গাভী, বাছুর, বকনা, ষাড় অনেক সময় খাবার কম খায়। ডাক্তারের স্বরণাপন্ন হলে গরুকে বিভিন্ন চিকিৎসা দেয়ার পর সাময়িক সুস্থতা আসে। কিন্তু কয়েকদিন পর আবার অসুস্থ হয়ে পরে। অসুস্থতার ধরণ একেক সময় একেক রকম।

অনেক সময় তা মিল্ক ফিভার এর মত আবার কোন কোন সময়ে হাঁপানি ও কাঁশি থাকে। কিছু সময় তা কিটোসিস এর মত আবার অরুচি ও অন্যান্য উপসর্গও পাওয়া যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ জাতীয় ঘটনায় ব্লাড টেস্ট করলে প্রোটোজোয়া পজিটিভ পাওয়া যায়।

সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ঘটনা দেখার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে, ৭ মাসের গাভীন থেকে বাচ্চা দেওয়া পর্যন্ত বা যে কোনো বয়সে যদি গরুর জ্বর হয়।

আর জ্বর যদি খুব বেশি উঠানামা করে, খাবার কম খায়, প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে জ্বর আসে, চিকিৎসা দেওয়ার পর ও গরু সুস্থ্য না হয় তাহলে খামারীদের অবশ্যই গরুর ব্লাড প্রোটোজোয়া (ব্যাবিসিয়া, এনাপ্লাজমা, থাইলেরিয়া, টিপ্নোসমা) টেষ্ট করতে হবে।

কোথায় টেস্ট করাবেন: চট্টগ্রাম Chittagong Veterinary and Animal Sciences University তে অল্প খরচে গরুর ব্লাড টেষ্ট করা যায়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রানিসম্পদ বিভাগের বেশ কিছু ল্যাব রয়েছে যেখানে অল্প খরচে বা বিনামূল্যে এই টেস্ট করানো যায়।

তবে কোন টেষ্ট করতে চান তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। প্রোটোজোয়া পজিটিভ হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গরুর চিকিৎসা করাতে হবে।

সম্মানিত প্রাণি চিকিৎসকদের প্রতি অনুরোধ আপনাদের কর্মস্থলের আশে পাশে খামারের গরুর কিছু random blood test করুন। আমার নিজেরসহ একাধিক খামারে random test করে ৩০% পজিটিভ পেয়েছি।

সতর্কতা: মশা মাছি আক্রান্ত গরুকে কামড় দিয়ে সুস্থ্য গরুকে কামড় দিলে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে এটি নিরব ঘাতকের মত খামারীদের সর্বনাশ করছে। অনেক খামারী ভাইয়ের গাভী মারা গেছে। তাই আসুন সতর্ক হই। ব্লাড টেস্ট করে রোগ আইডিন্টিফিকেশন করতে পারলে অল্প খরচে এর চিকিৎসা সম্ভব।

তাছাড়া এটি মহামারী আকারে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আগেই প্রানিসম্পদ বিভাগের উচিৎ দ্রুত এই সমস্ত রোগের টিকা দেশে উৎপাদন করা বা আমদানির কার্যকর ব্যাবস্থা গ্রহণ করা।

আরও পড়ুন: গাভীকে কোন সিমেন ব্যবহার করবেন, তা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ

গবাদি প্রাণির নীরব ঘাতক ব্লাড প্রোটোজোয়া’র লক্ষণ ও প্রতিকার শিরোনামের লেখক মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন দীর্ঘ সময় ধরে খামারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এছাড়া শিক্ষিত এ তরুণ খামারি চট্টগ্রাম বিভাগীয় ডেইরী ফার্মারস এসোশিয়েসন এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।