অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ইউক্রেনের কৃষ্ণ সাগর বন্দর থেকে গম ও ভুট্টা নিয়ে দুটি জাহাজ রওয়ানা হয়েছে। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর দেশটি থেকে খাদ্যপণ্য নিয়ে এ পর্যন্ত ১৪টি জাহাজ ছেড়ে গেছে। শুক্রবার তুরস্কের প্রতিরক্ষা দপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বেলিজ-পতাকাবাহী জাহাজ সোরমোভস্কি ইউক্রেনের চোরনোমর্স্ক বন্দর ছেড়েছে। জাহাজটি তুরস্কের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় টেকিরদাগ প্রদেশে তিন হাজার ৫০ টন গম নিয়ে গেছে।

ফেব্রুয়ারি মাসের পর এটি ছিল ইউক্রেন থেকে যাওয়া গমের প্রথম চালান। যুদ্ধ শুরুর আগে বিশ্বে গম রপ্তানির প্রায় এক তৃতীয়াংশ আসতো ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে। তুর্কি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মার্শাল দ্বীপ পতাকাবাহী স্টার লরা নামের আরেকটি জাহাজ ৬০ হাজার টন ভুট্টা নিয়ে ইরানের উদ্দেশ্যে ইউঝনি শহরের পিভডেনি বন্দর থেকে রওনা হয়েছে।

পড়তে পারেন: দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণে গম-ভুট্টা উৎপাদন বাড়ানোর পরামর্শ

বিশ্ববাজারে ইউক্রেনীয় খাদ্যশস্যের ঘাটতির কারণে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার কথা গত মাসে জানিয়েছিল জাতিসংঘ। এরপরই তুরস্কের সহযোগিতায় ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় খাদ্যশস্য রপ্তানিতে রাজী হয় ইউক্রেন। এরআগে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর তিনটি খাদ্যশস্য বোঝাইকারী জাহাজ ইউক্রেনের বন্দর ছেড়ে গেছে। মোট ৫৮ হাজার টন ভুট্টা জাহাজ তিনটিতে বহন করা হচ্ছে।

তুরস্কের ইস্তাম্বুলের জয়েন্ট কোঅরডিনেশ সেন্টার জানায়, দুটি জাহাজ চর্নমোর্স্কে বন্দর ও একটি জাহাজ ওদেসা বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করেছে। এ সেন্টার রাশিয়া, ইউক্রেন, তুর্কি ও জাতিসংঘের কর্মকর্তা দ্বারা পরিচালিত।

এক টুইট বার্তায় তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, পানামার পতাকাবাহী নাভি স্টার জাহাজটি ইউক্রেন থেকে আয়ারল্যান্ডে যাবে। জাহাজটিতে ৩৩ হাজার টন ভুট্টা রয়েছে। আর দ্বিতীয় জাহাজ মাল্টার পতাকাবাহী রোজেনে ব্রিটেনে যাবে। জাহাজটিতে ১৩ হাজার টন ভুট্টা রয়েছে। আর তৃতীয় জাহাজটি তুরস্কের। জাহাজটিতে ১২ হাজার টন ভুট্টা রয়েছে। এর আগে সামরিক অভিযান শুরুর পর প্রথমবার তিনটি খাদ্যশস্য বোঝাইকারী জাহাজ ইউক্রেনের বন্দর ছেড়ে গিয়েছিল।

পড়তে পারেন: ১০ বছরের সর্বনিম্নে নামতে পারে গমের বৈশ্বিক ব্যবহার

ইউক্রেন বিশ্বের চতুর্থ খাদ্যশস্য রপ্তানিকারক দেশ। বিশ্বের ৪২ ভাগ সূর্যমুখী তেল দেশটিতে উৎপাদিত হয়। এছাড়া মোট ভুট্টার ১৬ ভাগ ও ৯ ভাগ গম দেশটিতে উৎপাদিত হয়। আর রাশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় গম রপ্তানিকারক দেশ।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু পরই বিশ্বে ইউক্রেন-রাশিয়ার স্বাভাবিক খাদ্যশস্য বাধাগ্রস্ত হয়। রাশিয়া ইউক্রেনের প্রধান বন্দরগুলো প্রবেশমুখ গুলো আটকে রেখেছে। যুদ্ধের আগে ইউক্রেন তার ৯০ শতাংশ শস্য সাগর পথে রপ্তানি করতো। ইউক্রেনের শস্যবাহী জাহাজগুলো কৃষ্ণ সাগরে প্রবেশ করতে না পারার কারণে বিশ্বে মুদ্রাস্ফীতি কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

আর রাশিয়ার খাদ্যশস্যের ওপর পশ্চিমা বিশ্ব নিষেধাজ্ঞা না দিলেও পেমেন্ট সিস্টেমের কারণে ইন্সুরেন্স ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে রাশিয়ার খাদ্যশস্য রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এক বিবৃতিতে আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক জানিয়েছে, আফ্রিকার প্রয়োজনীয় গমের ৪০ ভাগই সরবরাহ করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। কিন্তু যুদ্ধের কারণে মহাদেশটিতে প্রায় তিন কোটি টন খাদ্যের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। যার ফলে পুরো মহাদেশজুড়ে খাদ্যের দাম ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

পড়তে পারেন: দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণে গম-ভুট্টা উৎপাদন বাড়ানোর পরামর্শ

খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে বিশ্বে ভয়ানক খাদ্য সংকটের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গত মাসে তুরস্কের মধ্যস্থতায় ইস্তাম্বুলে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে একটি চুক্তি হয়।

চুক্তির সময় উপস্থিত তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেছিলেন,‘‘আমরা একটি উদ্যোগে সহায়ক হতে পেরে গর্বিত যেটি বৈশ্বিক খাদ্য সঙ্কট সমাধানে একটি বড় ভূমিকা পালন করবে যেটি দীর্ঘদিন ধরে এজেন্ডায় রয়েছে।’

ওই চুক্তির আওতায় বর্তমানে ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য বোঝাইকারী জাহাজ পরিবহন করা হচ্ছে। এর ফলে বিশ্বে খাদ্যের দাম কিছুটা সহনীয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ