মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: রাজশাহীতে চলতি মৌসুমে ২৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর গম চাষ কমে ৬০০ হেক্টর জমিতে। যা ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ২৬ হাজার ১০০ হেক্টর। কৃষি বিভাগ বলছে, সম্ভাবনাময় ফসলের দিকে বেশি ঝুঁকছে কৃষকরা। ফলে কমছে গমের আবাদ। গম ছেড়ে সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছে রাজশাহীর চাষিরা।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, গত ২০২০-২১ মৌসুমে জেলায় ২৬ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। সে বছর রাজশাহীতে ২৫ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে । ওই বছর ফলন ছিলো হেক্টর প্রতি ৩ দশমিক ৭৩ মেট্রিক টন। চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ২৪ হাজার ২৩৬ হেক্টর জমিতে গম চাষ করা হয়েছে। ফলন ধরা হয়েছে ৩ দশমিক ৬২ মেট্রিক টন। এরমধ্যে এখনও ফুল ফোটা অবস্থায় রয়েছে ১৫২০ হেক্টর জমি।

কৃষি গবেষণা অনুযায়ী, বিগত বছরের ফলন চলতি মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ধরা হয়। ফলে ৬০০ হেক্টর জমি গমের আবাদ থেকে বাদ পড়েছে। কৃষক ও কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাকালীন সময়ে সবজির ও মসলা জাতীয় ফসলের বেশ ভালো দাম পেয়েছেন চাষিরা। ফলে ধানের ও গমের আবাদ কমছে। পেঁয়াজ, রসুন ও সবজিজাতীয় ফসলে আগ্রহ বাড়ছে।

কৃষি বিভাগ আরও জানায়, ২০২০-২১ মৌসুমে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় ৬ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় যা এবার কমেছে। কারণ জেলার সবচেয়ে বেশি সবজি উৎপাদন হয় গোদাগাড়ীতে। এছাড়া বাঘায় ৫ হাজার ৫২৫ হেক্টর, চারঘাটে ৫ হাজার ৪০০ হেক্টর, পবায় ২ হাজার ১৯৫ হেক্টর, তানোরে ১ হাজার ৫৫০ হেক্টর, পুঠিয়ায় ২ হাজার ৫১৫ হেক্টর, বাগমারায় ১ হাজার ৫৬০ হেক্টর, দূর্গাপুরে ১ হাজার ১০ হেক্টর, মোহনপুরে ৮৫ হেক্টর, মতিহারে ৩০ এবং ৫০ বোয়ালিয়ায় হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। প্রতি উপজেলাতেই এবার কমেছে গমের আবাদ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহীর পবা, মোহনপুর, বাঘা, চারঘাট ও তানোর উপজেলায় বেশি গম চাষ হয়। বাকি উপজেলায় গম চাষ হলেও খুব বেশি নয়।

বাঘা উপজেলার কলিগ্রাম এলাকার চাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, এ বছর ৯ বিঘা জমিতে গমের চাষ করেছি। তবে গমের গমের বীজ পেলেও সারের সংকট দেখা দিয়েছে। আবার সার পেলেও লাগামহীন দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে সার। সারের এই লাগাম ছাড়া দামের পেছনে এক সিন্ডিকেট চক্রের হাত রয়েছে বলে ধারণা করছেন তিনি।

একই এলাকার চাষি আ: হালিম বলেন, গত চার বছর আগে বাড়িতে খাওয়ার জন্য এক থেকে দেড় বিঘা জমিতে গম চাষ করতেন। গত দুই বছর থেকে ৪-৫ বিঘা জমিতে গম চাষ করছেন। বিঘা প্রতি ১৬ মণ হারে গমের ফলন হয়। হাজার টাকা মণ বিক্রি করলেও ১৬ হাজার টাকা পাওয়া যায়। তবে, এক বিঘা জমিতে সবজির আবাদ করলে ৪-৫ গুণ বেশি লাভবান হওয়া যায়।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: মোজদার হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ২৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা করছি। জেলায় বারি-২৫, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১ ও ৩২ জাতের গম বেশি চাষ হয়। তবে, বারি- ৩৩ জাতের গম চাষে চাষিদের আগ্রহ বেশি রয়েছে।

তিনি জানান, রাজশাহীতে দেশি জাতের গম বিঘা প্রতি ৮-১০ মণ হারে হয়। কিন্তু নতুন উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল গম বিঘা প্রতি ১১-১৩ মণ পর্যন্ত হবে। বিশেষ করে গমে দুই থেকে তিনবার সেচ দিতে হয়। এ অঞ্চলে পানির সমস্যার কারণে অনেকে গম চাষ করছেন বললে ভুল হবে। কারণ যেখানে ধান চাষ হয় সেখানে গম চাষের সমস্যার কথা নয়। বরং পানি সংকট অঞ্চলে গমের আবাদ বাড়ে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ