ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: গরুর কানের গোড়ায় হাত দিয়ে দেখলেন জ্বর জ্বর লাগছে।গরুর গায়ের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। একদিন দেখলেন গাভীটির প্রস্রাব রক্তের মতো লাল।পায়খানাও লালচে। এ ধরণের অবস্থার সম্মুখীন হলে আসালে কি করবেন? আসুন জেনে নিই গরুর প্রাণঘাতী ব্যাবেসিওসিস রোগ সম্পর্কে।

যেকোনো গরুরই এ ধরনের রোগ হতে পারে, যার নাম ব্যাবেসিওসিস। পরজীবীঘটিত একধরনের রোগ। Boophilus microplus নামের এক ধরনের উকুনের কামড়ে এই পরজীবী গরুর দেহে প্রবেশ করে রক্তের লোহিত কণিকায় আশ্রয় নেয়, সেখানেই বংশ বৃদ্ধি করে। ক্রমেই অন্যান্য লোহিত কণিকায়ও আক্রমণ করে। এতে লোহিত কণিকা ভেঙে হিমোগ্লোবিন রক্তে ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে আসে।বেশি লোহিত কণিকা আক্রান্ত হলে গরুর রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।

রোগের লক্ষণ : জ্বর হচ্ছে এই রোগের প্রথম লক্ষণ। জীবাণু বহনকারী উকুনের কামড়ের প্রায় তিন সপ্তাহের মধ্যেই জ্বর দেখা দেয়। গরু ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়। শ্বাস গ্রহণের চেয়ে শ্বাস একটু জোরে ত্যাগ করে। খাবারের রুচি কমে যায়।আক্রান্ত গরু দুর্বল হয়ে যায়। চোখ এবং দাঁতের মাড়ি ফ্যাকাশে হয়ে যায়।প্রস্রাবের সাথে রক্ত বের হয়। অনেক সময় পায়খানার সাথেও রক্ত বের হতে পারে। গর্ভবতী গাভীর ক্ষেত্রে গর্ভপাত হতে পারে। গরু কোনো কিছুর সাথে মাথা ঘষা, বৃত্তাকারে চার দিকে ঘোরাসহ এই ধরনের নানান অসংলগ্ন আচরণ করতে পারে।পক্ষাঘাত, অচেতন হয়ে যাওয়া এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুও হতে পারে।

পোস্টমর্টেম লক্ষণসমূহ : মৃত গরুর দেহ পোস্টমর্টেম করলে হৃৎপিণ্ড ও অন্ত্রে সাব সেরোসাল হেমোরহেজ দেখা যায়। প্লীহা কিছুটা বড় হয়ে যায়। দেখতে লালচে ও নরম হয়। যকৃৎ আকারে স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হতে পারে।

রোগ সনাক্তকরণ : রোগের লক্ষণ দেখে এ রোগ নিরুপণ করা যায়। নিশ্চিত হওয়ার জন্য আক্রান্ত গরুর রক্ত পরীক্ষা করা হয়।

আরোও পড়ুন: গরুর বাদলা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

গরুর তড়কা রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি

চিকিৎসা : রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা দিলে দ্রুত সেরে যায়। এই রোগের চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের ওষুধ রয়েছে। বাজারে এখন যেসব ওষুধ পাওয়া যায় সেগুলোর মধ্যে ইমিডোকার্ব ও ডিমিনাজেন এসিচুরেট বেশি ব্যবহার করা হয়।ট্রিপেন ব্লুও প্রয়োগ করা হয়। মনে রাখা প্রয়োজন, কিছু ওষুধ রয়েছে বিষাক্ত। তাই সব সময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত।

প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা : প্রতিরোধমূলক ব্যবস্খার মধ্যে উকুন নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। এ জন্য যেসব এলাকায় এই উকুনের প্রাদুর্ভাব বেশি সেখানে পানির মধ্যে একারাসিড জাতীয় ওষুধ গুলে গরুকে গোসল করাতে হবে। তাতে গরুর শরীর উকুনমুক্ত হবে। চার থেকে ছয় সপ্তাহ পর পর গোসল করালে উকুনের আক্রমণের সম্ভাবনা কমে। দেশীয় গরুগুলোর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি বলে এই রোগে কম আক্রান্ত হয়। কিন্তু সঙ্কর জাতের কিংবা বিদেশী জাতের গরু সহজেই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ জন্য ভ্যাকসিন দেয়া প্রয়োজন।

অবশ্য কোনো গরু একবার এই রোগে আক্রান্ত হলে পরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে। কারণ আক্রান্ত হওয়ার ফলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্ম নেয়। গরুকে রোগবালাই থেকে রক্ষার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্খা সবচেয়ে বেশি কার্যকর। এ ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সুষ্ঠু ও যত্নশীল পরিচর্যা গরুকে এ রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। কোনো কারণে রোগগ্রস্ত হলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এ রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি হ্রাস করবে।

গরুর প্রাণঘাতী ব্যাবেসিওসিস রোগ সম্পর্কে জানেন কি? শিরোনামে সংবাদের তথ্য ঢাকা সাভার শিমুলিয়া ইউনিয়নের তথ্য আর্কাইভ থেকে নেওয়া হয়েছে।