গাভীর দেরিতে গরম আসার

ডেইরি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: খামারী ও গাভী পালন করেন যারা তারা কমবেশি গাভীর গরম আসা ও প্রজননন নিয়ে সমস্যায় পরে থাকেন। আজ গাভীর দেরিতে গরম আসার কারণ ও সঠিক কৃত্তিম প্রজনন ব্যবস্থাপনা নিয়ে নিচে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো।

প্রথমেই জেনে নেয়া যাক গাভীর প্রজননের সঠিক সময়: কোনো গাভী রাতে গরম হয়েছে বোঝা গেলে তাকে পরদিন সকালে একবার এবং আরও নিশ্চিত হবার জন্য ঐদিন বিকেলের মধ্যে আরেকবার প্রজনন করাতে হবে৷

একইভাবে যে গাভী সকালে ডাক এসেছে বোঝা যাবে তাকে ঐদিন বিকেলে ও পরদিন সকালে আরেকবার প্রজনন করাতে হবে ৷ এ নিয়ম মেনে চললে গাভীর গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

গাভী বা বকনার দেরীতে ডাকে আসার বা গরম হওয়ার কারণ: অনেক খামারের বকনা অনেক দেরিতে বা কখনোই ডাকে আসে না এবং প্রসবের পর অনেক গাভীর ডাক দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে৷ এ সমস্যার অন্যতম কারণগুলি হলো: পুষ্টি-হীনতা ও গাভীর ওলানের বাঁটে মুখ দিয়ে বাছুরের দীর্ঘক্ষণ ধরে চুষে ঘন ঘন দুধ খাওয়া।

দুগ্ধবতী গাভীর প্রসব পরবর্তীতে জননাঙ্গের ব্যাধি, কৃমি, দৈনিক দুধ উৎপাদনের হার ইত্যাদি।

বাছুরের দুধ ছাড়ানোর সময় দীর্ঘ হলেও গাভীর প্রসবের পর পুনর্বার বাচ্চা ধারণক্ষমতা ফিরে পেতে দেরি হয় (ঌ০ থেকে১২০ দিন বা এর চেয়ে বেশি দেরি হয়)।

গবাদিপশুর কৃত্রিম প্রজনন: সাধারণত ষাঁড়ের বীজ সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট কয়েকটি পদ্ধতির মাধ্যমে গাভীর প্রজনন অঙ্গে স্থাপন করাকে কৃত্রিম প্রজনন বলে।

কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য উন্নত ষাঁড়ের শুক্রাণু ব্যবহার ও সুস্থ গাভীর প্রজনন অঙ্গে স্থাপন করতে পারলে বছরে বাচ্চা উৎপাদন দু’লক্ষেরও বেশি পাওয়া সম্ভব। গাভী ডাকে আসার ১২ থেকে ১৮ ঘন্টার মধ্যে গাভীকে কৃত্রিম প্রজনন করাতে হবে। একটি ষাঁড়ের বীজ থেকে প্রতি বছর ৬০ থেকে ৮০টি গাভীর প্রজনন করানো সম্ভব।

কিন্তু কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ গাভী প্রজনন করানো যায়। স্বাভাবিকভাবে একটি ষাঁড়ের সর্বমোট ৭০০ থেকে ৯০০টি বাছুর প্রসবে ভূমিকা রাখতে পারে।

কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে অনেকাংশে সংক্রামক ব্যাধি রোধ করা যায় এবং গাভী ষাঁড়ের দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত হয় না। আমাদের দেশে ষাঁড়ের বীজ সংগ্রহ, সংরক্ষণ, পরিবহন বা সংস্থাপনে অজ্ঞতার কারণে অনেক সময় গাভীর উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়।

বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে ষাঁড়ের অভাব থাকায় কৃত্রিম প্রজনন জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু কৃত্রিম প্রজননে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পদ্ধতিগত ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অসাবধানতা ও অনভিজ্ঞতার কারণে নানা সমস্যার সন্মুখিন হতে হয়।

রোগাক্রান্ত ষাঁড়ের বীজ গাভীর প্রজনন অঙ্গে স্থাপন করা হলে পরবর্তীতে দেখা যায় নানাবিধ সমস্যা। যার প্রভাব পরবর্তী বংশবিস্তারের উপর বর্তায়। এ ছাড়া অনেক গাভী বার বার গরম হয়ে থাকে।

রাসায়নিক দ্রব্য, ধূলিকণা, মাত্রারিক্ত তাপমাত্রার সংস্পর্শে খুব সহজেই ষাঁড়ের বীজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আবার যে সমস্ত জিনিস পত্রের সংস্পর্শে বীজ আসে তাতে রাসায়নিক পদার্থ থাকলেও বীজ নষ্ট হতে পারে।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বীজ তরল হলে কিংবা প্রজনন অঙ্গের বাইরে স্থাপন করা হলেও গাভী গর্ভধারণ করতে পারে না। ডিম্বাণু নির্গমনের আগে অথবা নির্গমনের পরে বীজ স্থাপন করলে গাভীর উর্বরতা হ্রাস পায়। তাই প্রথমবার বীজ স্থাপনের পর অন্তত ৬ ঘন্টা পর দ্বিতীয়বার বীজ স্থাপন করলে সুফল পাওয়া যায় বেশি।

বীজ স্থাপনের সময় প্রজনন অঙ্গ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে গাভীর নানাবিধ সমস্যা হতে পারে। যেমন ব্রুসেলেসিস, ভিব্রিওসিস, ট্রাইকোমনোসিসসহ বিভিন্ন বংশগত রোগের সন্মুখিন হতে হয়। এ জন্য কোন সমস্যা দেখা দিলে প্রাণিচিকিৎকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

গাভী গর্ভবতী কিনা, নিয়মিত গরম হয় কিনা তা নির্ণয় করা, উন্নত ও উর্বর ষাঁড় নির্বাচন করা, গাভীর গর্ভধারনের ক্ষমতা নির্ণয় করা, গর্ভধারনের হার বৃদ্ধি করা, গাভীর দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং ভেটেরিনারিয়ানের সাহায্যে গাভীর নিয়মিত পরিচর্যা ও চিকিৎসাসেবা দেওয়া অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ডাক্তার দিয়ে করতে হবে। গাভীর দেরিতে গরম আসার কারণ ও সঠিক কৃত্তিম প্রজনন ব্যবস্থাপনা সংবাদটির তথ্য লাইভস্টক ডায়েরি থেকে নেয়া হয়েছ।

আরও পড়ুন: বকনা ও গাভীর হিটে অথবা ডাকে আসার লক্ষণ