মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: গাছে থোকায় থোকায় দুলছে আমের গুটি। উঠতি যৌবন লুকিয়ে রাখতে পারছে না তারা। যেই দিন বাড়ছে সাথে বাড়ছে আকারও। এভাবে গুটি বড় হওয়ার সাথে সাথে স্বপ্ন বাড়ছে আম চাষির। এই আমেই যে তার সবকিছু নির্ভর করছে।

গাছে মুকুল আসার আগ থেকেই পরিচর্যা শুরু হয় রাজশাহীর আম চাষিদের। মুকুলের পর সবুজ গুটিগুলো যেন আম চাষির অন্যতম ভরসার জায়গা দখল করে। গুটি যত বড় হয় ততই বাড়ে চাষির মনের আনন্দ।

চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এখন পর্যন্ত তেমন কোন বড় প্রতিবন্ধকতা সামনে দাঁড়ায় নি আম চাষিদের। আমের গুটির দিকে তাকিয়ে স্বপ্ন দেখছেন রাজশাহী অঞ্চলের আম চাষীরা।

কৃষকরা বলছেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। আশা করছেন বড় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমের বাম্পার ফলন হবে। গাছে গুটি আসার আগে থেকেই গাছগুলোর পরিচর্যা এবং পরামর্শ অনুযায়ী মুকুল আসার পর থেকে বিভিন্ন রোগবালাই দমনের ব্যবস্থা করায় গুটি বড় হয়ে উঠছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমি। গত বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ৫৭৩ হেক্টর জমি। বেড়েছে ৩৭৩ হেক্টর জমি। আর এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ১১ দশমিক ৯ মেট্রিক টন। গতবছর হেক্টর প্রতি এ পরিমান ছিল একই ছিল।

চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আম উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন চাষী এবং কর্মকর্তারা । সেইসাথে চাষীদের প্রয়োজনমতো পরামর্শ প্রদান করছেন তারা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক( শস্য) উম্মে ছালমা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো আছে। গতবছর আম্ফানের কারনে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা কমে গিয়েছিল। অন্যান্য বছরের মতো এবারও আমরা নিয়মিত চাষীদের পরামর্শ দিয়ে পাশে থাকছি। রাজশাহীর কৃষক আম চাষে অভ্যস্ত। তারা পোকা বা ছত্রাকজনিত বিভিন্ন সমস্যায় বালাইনাশক প্রয়োগ করে এবং করছে। সামনে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে আমের বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের রাজশাহী বিভাগীয় মনিটরিং ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা মো: আহসান হাবীব খাঁ বলেন, ‘গাছগুলোতে গুটি আসতে শুরু করেছে। গতবারের চেয়ে এখন পর্যন্ত আমগাছগুলোয় বেশি গুটি দেখা যাচ্ছে। প্রিভেন্টিভ হিসেবে ডিসেম্বর মাসে (মুকুলের রস চুষে খাওয়া) হপার পোকার জন্য ইমিটাক্লোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করতে বলা হয়। মুকুল বের হওয়ার আগে বা গুটি মটর দানার মতো হলে ম্যানকোজেব এবং মুকুল যদি কালো হয়ে আসে বা দাগ দেখা যায় তাহলে ট্রুপার জাতীয় বালাইনাশক ব্যবহার করতে পরামর্শ দেওয়া হয়। সবকিছু মিলিয়ে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, এবারের লক্ষ্যমাত্রা ১৭ হাজার ৫৭৩ হেক্টর জমি। হেক্টর প্রতি আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র বিগত বছরকে ছড়িয়ে যাবে আশা করা হচ্ছে। গতবছর হেক্টর প্রতি এ পরিমান ছিল ১১ দশমিক ৯ টন। তবে সবচেয়ে বেশি হয় বাঘা, চারঘাট। এছাড়াও বাগমারা, পুঠিয়া, দুর্গাপুরেও আমের চাষ হয়। এবছর ৫০ হেক্টও জমিতে আম চাষ বেড়েছে। কিছু কিছু জায়গায় হয়েছে নতুন নতুন আমবাগান।

প্রতিবছর প্রায় আড়াইশ জাতের আম উৎপন্ন হয়। এগুলোর মধ্যে এ বছর ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাতি, বোম্বাই, হিমসাগর, ফজলি, আম্রপালি, আশ্বিনা, বৃন্দাবনী, লক্ষণভোগ, কালীভোগ, তোতাপরী, দুধসর, লখনা ও মোহনভোগ জাতের আমের চাষ বেশি হয়েছে।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দীন জানান, চলতি মৌসুমে আমের মুকুল বেশি হয়েছে। সাধারণত আমগাছে মুকুল আসার পর হপার পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে নিয়মানুযায়ী পোকা মারা কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক ব্যবহার করেছেন চাষীরা। ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাক নাশক এবং ইমিটাক্লোপিড জাতীয় কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে (ম্যানকোজেব ২ গ্রাম ও ০.৫ মিলি ইমিটাক্লোপিড) তিন বার স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়। একবার মুকুল আসার আগে, মুকুল ফোটার আগে এবং আম মটর দানার মতো হলে। রাজশাহীর আম চাষীরা আগে থেকেই যেহেতু অভিজ্ঞ সেহেতু তারা খুব সহযেই আমের যত্ন নিতে পারেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।

রাজশাহীর সবকটি উপজেলায়ই আম চাষ হয়। ৯টি উপজেলার বাঘায় সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয়। এখন আমের বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন আম চাষীরা। বাগমারার তাহেরপুর পৌর সদর এলাকার চাষী শামীম রেজা জানালেন, ‘এ বছর এ পর্যন্ত যে পরিমাণ গুটি আছে তা যদি থাকে তাহলেই হয়ে যাবে। আবহাওয়া মুটামুটি ভালো। সামনে আবার কালবৈশাখী ঝড় আছে। ঝড়ের পর আসলে বোঝা যাবে কি হবে।’

বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম এলাকার আম ব্যবসায়ী ও আম চাষী জিল্লুর রহমান জানান, ‘আমি প্রতিবছরই আম চাষ করি। এবার আমের ভালো গুটি আছে। আমরা চাষীরা মুকুল আসার আগে থেকেই গাছের পরিচর্যা করছি । এখন বর্তমানে গুটির পরিচর্যা চলছে। গাছের গুটি কীটনাশক ও বিভিন্ন ধরনের বালাইনাশক দিয়ে ধুয়ে দিচ্ছি।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ