গুড়া দুধের সাথে দেশে

নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আমদানিকৃত গুড়া দুধের সাথে দেশে উৎপাদিত দুধের অসম প্রতিযোগতা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন ডেইরী খাতের উদ্যোক্তারা। এ বিষয়ে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তারা।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে অক্সফ্যাম ও বাংলাদেশ ডেইরী ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (বিডিডিএফ) আয়োজিত প্রান্তিক দুগ্ধ খামারিদের বিকাশে সরকারি-বেসরকারি নীতিমালা ও সেবা:সমস্যা ও সম্ভাবনা শীর্ষক আলোচনা সভায় ডেইরী খাতের উদ্যোক্তার এ দাবি জানান।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী  মো: আশরাফ আলী খান খসরু দুধ প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠানগুলোকে কম মুনাফা করে প্রান্তিক খামারিদের ন্যায্য মূল্যে দেয়ার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, প্রান্তিক খামারিদেরকে আপনারা দুধের ন্যায্য মূল্য দিন, কৃষকদেরকে বাঁচিয়ে রাখুন। আপনারা আরেকটু লিবারেল হলে এবং মুনাফা কম করলে ডেইরি সেক্টর টিকে থাকবে।

অনুষ্ঠানে ডেইরি শিল্পের সাথে জড়িত উদ্যোক্তারা বলেন, আমাদের দেশে আমদানিকৃত গুড়া দুধের সাথে দেশে উৎপাদিত দুধের অসম প্রতিযোগতা বন্ধে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

এক্ষেত্রে বাল্ক আকারে আমদানি করা গুড়া দুধের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করার দাবী জানানো হয়।

উন্নয়নের এই ধারাকে টেকসই ও মজবুত করতে সরকারের পাশাপাশি ডেইরি শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যেমন- দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান, গবাদিপ্রাণির কৃত্রিম প্রজজনকারী প্রতিষ্ঠান, প্রাণিখাদ্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান, দুগ্ধ খামারী, বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংক, ব্যবসায়ী সংগঠন, গণমাধ্যম ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরী বলে মনে করেন ডেইরিখাত সংশ্লিষ্টরা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রান্তিক দুগ্ধ খামারিদের বিকাশে ও  স্বার্থরক্ষায় সরকার সবধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং তা বাস্তবায়ন করছে।  দেশের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি খাতের উন্নয়নে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, যেসব ফার্ম দেশে গড়ে উঠবে, তাদের সাহায্য করার জন্য এই প্রকল্প। এছাড়া, ক্ষুদ্র খামারি ও নারী উদ্যোক্তাদের প্রাধান্য দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকার পুন:অর্থায়ন তহবিলের মাধ্যমে বন্ধকবিহীন ৪% সরল সুদে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। এই স্কীমকে আরও বৃহৎ ও কার্যকর করার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

প্রতিমন্ত্রী জানান, গত দশ বছরে দুধের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ, এখন জনপ্রতি প্রাপ্যতা ১৬৫ মিলি। ২০০9-10 অর্থবছরে দুধ উৎপাদন ২৩.৭০ লাখ মেট্রিক টন থেকে বেড়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে ৯৯.২৩ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে, যা ৪.১৯ গুণ বেশী।

বাংলাদেশ ডেইরি ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (বিডিডিএফ) এর সভাপতি উম্মে কুলসুম স্মৃতির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য মোঃ আফতাব উদ্দিন সরকার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও এলডিডিপির প্রকল্প পরিচালক কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবদুল জব্বার শিকদার, বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. নাথুরাম সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার হাবিবুর রহমান।

সভায় মূলনিবন্ধ পাঠ করেন বিডিডিএফের প্রচার সম্পাদক ও অক্সফ্যামের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মো. মুতাসীম বিল্লাহ। অনুষ্ঠানে এই শিল্পের সাথে জড়িত সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার ও ফার্মের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদিত দুধ যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য সারা দেশে প্রান্তিক জনপদে ৩৫টি  চিলিং প্লান্ট ( দুধ শীতলিকরণ) স্থাপন করা হবে।

তিনি বলেন, তাছাড়া, দেশের ডেইরি শিল্পের বিকাশে আমরা গত বছর গুড়ো দুধের উপর ৫% আমদানি শুল্ক বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। বিদেশ থেকে ধীরে ধীরে গুড়ো দুধ আনা বন্ধ করে দিবো। আমাদের দেশের দুধ দিয়েই আমাদের চাহিদা পূরণ হবে। এজন্য দরকার বেশী বেশী মান সম্মত দুধ উৎপাদন ও সঠিক বিপণন।

গুড়া দুধের সাথে দেশে উৎপাদিত দুধের অসম প্রতিযোগতা বন্ধের দাবি এর সাথে উপস্থিত সবাই একমত পোষণ করেন।

আরও পড়ুন: কোন জাত বা ব্রিডের গরু নিয়ে হৃষ্টপুষ্টকরণ খামার শুরু করবেন