ড. এম. মনজুরুল আলম মন্ডল: ডাল বাংলাদেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠিত খাদ্যতালিকায় উদ্ভিদ উৎস থেকে প্রাপ্ত শুরুত পুর্ণ আমিষ সমৃন্ধ খাদ্য উপাদান। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ছাড়াও শর্করা, চর্বি ও খনিজ রয়েছে। মুগ, মসুর, মাষকলাই, ছোলা, মটর প্রভৃতি যে কোন ডাল ই হোক না কেন তা শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং উপকারী।

তবে নিরামিষ ভোজী দের জন্য মুগডাল জনপ্রিয় একটি খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যামাইনো এসিড ও উচ্চমাত্রার প্রোটিন রয়েছে যা শরীরে আমিষের ঘাটতি পূরণ করে। কাজেই প্রতিদিনের ডায়েটে এই খাবারটি রাখা ভাল। মুগডালের প্রধান কিছু স্বাস্থ্য উপকারী তা হলো-হজমে সহায়তা করে শরীরের পরিপাকনালীর মধ্যে যে বিষাক্ত পদার্থ আছে তা বের করে দেয়, ফলে হজম শক্তি বাড়ে।

এছাড়া এতে লেসিথিন নামে এমন এক ধরণের পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা যকৃতে চর্বি জমাতে বাধা দেয়। অপরদিকে, মুগডেিল প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় ক্ষুধা কম লাগে। এতে ভিটামিন বি১ ৭ নামে এমন একটি উপাদান রয়েছে যা কান্সারের কোষ গুলো ধ্বংস করতে সহায়তা করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো হজমে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রাখায় ডয়িাবেটিস রোগীদের জন্য একটি চমৎকার খাবার হলো মুগডাল। এটি রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং বিভিন্ন রোগের হাত থেকে বাচায়।

মুগের এতগুণাবলি থাকা সত্বেও বর্তমানে বাংলাদেশে ৬ লক্ষ হেক্টর জমিতে ৫ লক্ষ টন ডাল উৎপাদিত হয় যা চাহিদার এক-পঞ্চমাংশ। উপরন্ত প্রতি বছর দেশে ডাল উৎপাদন কমছে কিন্তু বাড়ছে ডালের চাহিদা। তবে আশায় কথা হচ্ছে বিগত কয়েক বছরে অন্যান্য ডালের আবাদ কমলেও কিন্তু মুগের আবাদ বাড়ছে। এরকারণ হল মুগই একমাত্র ফসল যা শীতকালীন ফসল কর্তনের পর চাষ করা যায়।

কিন্তু মুগচাষের প্রধান অসুবধাগুলোরমধ্যেএ কটি হল মুগের ফল এক ইসাথে পাকেনা ফলে একাধিক বার ফল সংগ্রহ করাত হয় যা শ্রমঘন কাজ। বর্তমানে প্রচলিত জাতগুলোর ফল একই সাথে পাকে না। মুগের ফল গুলো যেন একই সাথে পাকে সে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিউট, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিট এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যারয়ের বিজ্ঞানী গণ গবেষণার মাধ্যমে কয়েকটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন যা ফল গুলো প্রায় একই সাথে পাকে এবং ফলনও ভাল।

নতুন জাতগুলো হলোঃ বারিমুগ-৫, বারিমুগ-৬, বিনামুগ-৫, বিনামুগ-৭, বিনামুগ-৮ এবং বিইউ মুগ-৪। জাতগুলোর বৈশিষ্ট হলো গাছের উচ্চতা খাট থেকে মাঝারী (৩৫-৪০সে.মি.), জীবন কাল কম (বীজ বপন থেকে পরিপক্ক পর্যন্ত সময় লাগে ৬৫-৭০দিন), বীজের আকার মাঝারী ও উজ্জল সবুজ, গ্রীষ্মকালে চাষের উপযোগী। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ১.৮ টন এবং পাতা হলুদ মোজাইক ভাইরাস সহ্য ক্ষমতা সম্পন্ন।