মেহেদী হাসান, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুতেই রাজশাহীতে দু-দিনে মারা যায় প্রায় ১২ কোটি টাকার মাছ। অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে মরে ভেসে উঠে রুই, কাতল, সিলভারকার্প, জাপানিসহ কার্পজাতীয় মাছ। এমন বৃহৎ ক্ষতির পরও বর্তমানে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন রাজশাহীর ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিরা।

গত সেপ্টেম্বরের এক ও দুই তারিখে মাত্র দুইদিনে জেলার ৪ হাজার ৯৩০ জন মাছ চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই মাছের আনুমানিক বাজারমূল্য ছিল ১১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আবহাওয়া গুমোট, দফায় দফায় বৃষ্টির কারণে পানিতে অক্সিজেন স্বল্পতায় ৬১৬ মেট্রিকটন মাছ মারা যায়।

রাজশাহী মৎস্য অধিদপ্তর জানায়, জেলায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে মোট ৫০ হাজার পুকুর রয়েছে। এখানে বছরে মাছ উৎপাদন হয় প্রায় ৮৪ হাজার টন। আর স্থানীয়ভাবে মাছের চাহিদা রয়েছে ৫২ হাজার টন। ফলে রাজশাহীতে চাহিদার বিপরীতে ৩২ হাজার টন বেশি মাছ চাষ হয়। এবার হটাৎ অক্সিজেন স্বল্পতায় মাছ মারা যায়। মাছ মারা গেলেও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার কোন পরিবর্তন হবেনা এবং বর্তমানে মাছ চাষিরা পুরোদমে মাঠে নেমেছেন বলে জানায় মৎস্য বিভাগ।

রাজশাহীর বাগমারা, পবা, মোহনপুর, পুঠিয়া, দূর্গাপুর উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিরা বর্তমানে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। এসব এলাকার চাষিরা পুকুরের পানি বিশোধনের মাধ্যমে আবার নতুন করে মাছ ছাড়ছেন। মারা যাওয়া পুকুরের মাছ স্থানান্তর করছেন অন্য পুকুরে। কিনছেন লাখ লাখ টাকার মাছ। এমনকি এক থেকে দেড় কেজি ওজনের মাছ বাজার থেকে সংগ্রহ করছেন তারা।

জেলার সবচেয়ে বেশি মাছ মারা যায় পবা উপজেলায়। তিন’শ থেকে চার’শ পুকুরের মাছ মরে ভেসে উঠে। এসব পুকুরে আবারও ছাড়া হচ্ছে রুই, কাতল, মিড়কা, সিলভারকার্প, জাপানি, গ্রাসকার্পসহ বিভিন্ন জাতের মাছ। নতুন করে মাছ চাষে বাড়তি খরচ হওয়ায় দমে গেছেন এ অঞ্চলের চাষিরা। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছেন সরকারি সহায়তা।

উপজেলার পারিলা এলাকার মাছ চাষি আইনাল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, আমার ৮টা পুকুরের প্রায় ৩ হাজার কেজি মাছ মারা গেছে। রাজশাহীর সাহেববাজার, নিউমার্কেট, আমচত্ত্বর, কেশরহাটসহ বিভিন্ন জায়গায় মরা মাছ বিক্রির জন্য পাঠিয়েছিলাম। আজ পর্যন্ত টাকা পাইনি। যেসব পুকুরে মাছ মারা গিয়েছিল সেসব পুকুরে চুন দিয়ে পানি বিশোধন  করে আবারও মাছ ছেড়েছি।

তিনি আরোও বলেন, কিছু পুকুরে এক-দেড় কেজি ওজনের মাছ বাজার থেকে ১২০-১৩০ টাকা কেজি দরে কিনে ছাড়া হচ্ছে। আবার পুকুরের অবশিষ্ট মাছ অন্য পুকুরে স্থানান্তর করে টার্গেট পূরণ করছি। ১২ লাখ টাকার মাছ কিনেছি এবং অন্য পুকুরে ছিল প্রায় ৮ লাখ টাকার মাছ। ১০টি পুকুরে প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ নতুন করে ছাড়তে হলো।’

একই এলাকার মাছ চাষি সোহরাব হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন,‘ আমার ৪ পুকুরের মাছ কিছু কিছু মারা গিয়েছিল। যেসব পুকুরে মাছ মারা গেছে সেই পুকুরে আবার মাছ ছাড়া হয়েছে। মাঝে শুধু লোকসান গুণতে হলো। মৎস্য কর্মকর্তারা যথেষ্ট পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু সরকার থেকে আর্থিক কোন সহায়তা করা হয়নি।’

ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিদের বিষয়ে জানতে চাইলে পবা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ‘ অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে মাছ মারা যাওয়ায় মাছ চাষিরা অনেকটাই দমে গেছে। পরবর্তীতে এমন দূর্ঘটনা যেন আর না ঘটে সেজন্য পুকুরে অ্যারেটর যন্ত্র লাগনো, তাৎক্ষণিক সমস্যা এড়াতে অক্সিজেন সংগ্রহে রাখা, আবহাওয়া পরিবর্তন বুঝে পরিমিত খাবার দেওয়াসহ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করার কারণে চাষিরা অন্যের পুকুরে অ্যারেটর লাগতে পারছেন না। তাছাড়া কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। পুকুরের মালিকের বাধা, বিদুৎ সংযোগের অভাবে অ্যারেটর সুবিধা নিতে পারছেন না।

এই মৎস্য কর্মকর্তা আরোও বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিদের সরকারিভাবে কোন সহযোগিতা করা হয়নি। তবে, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে বিবেচনা হবে।’

জানতে চাইলে রাজশাহীর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা বলেন, অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিদের ক্ষতির তালিকা মৎস্য অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি।এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো প্রণোদনা আসেনি। তবে কৃষিখাতের ৪ শতাংশ হার সুদে প্রণোদনার প্যাকেজ ২৩ জন মৎস্যচাষি পেয়েছেন। তারা প্রায় ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা পেয়েছেন। আশা করছি চাষিরা অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।

 

আরপি/এমএইচ