ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: গত মাসের প্রবল বৃষ্টি ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধা ভাঙার জেরে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কৃষকেরা আর্থিক ক্ষতিতে পরেছেন। কোটি কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের তিন জেলায় প্রায় ৩৫ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার কৃষক।

চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচ জেলা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এ ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করেছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমন ও আসন্ন শীতকালীন সবজি চাষে বিশেষ প্রণোদনা দাবি করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা জানান, ৯ থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীতে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয় এবং ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় ফসলি জমি। চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচ জেলায় এবার আউশের আবাদ হয় ৮৭ হাজার ৮৯৫ হেক্টর জমিতে।

এর মধ্যে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর বাদে বাকি তিন জেলার ১০ হাজার ১৯ হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে যায়। ১৮০ হেক্টর আউশের বীজতলাও জলমগ্ন থাকে। এতে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০২ হেক্টর রোপা আউশ ও আট হেক্টর বীজতলা। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯ হাজার ৮১৭ হেক্টর জমির আউশ।

এছাড়া পরবর্তীতে আবার ভারি বর্ষণ হওয়ায় আংশিক ক্ষতি থেকে সম্পূর্ণ ক্ষতিতে রূপান্তরিত হয়েছে ৩৫৬ হেক্টর জমির ফসল। অর্থাৎ মোট ক্ষতি হয়েছে ৫৬৭ হেক্টর জমির ধান। আউশের এ ক্ষতির পরিমাণ টাকার অংকে ধরা হয়েছে সাড়ে ৫ কোটি টাকা আর বীজতলায় ক্ষতি ধরা হয়েছে ৯ লাখ টাকা।

তবে জুনের টানা বৃষ্টিতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রীষ্মকালীন সবজিক্ষেত। তবে কৃষি বিভাগের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় সামান্য বৃষ্টি হওয়ায় কোনো ক্ষতি হয়নি। বাকি তিন জেলায় বন্যা আক্রান্ত সবজিক্ষেতের পরিমাণ প্রায় ছয় হাজার হেক্টর।

এর মধ্যে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে ৯৬৫ হেক্টর, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ৪ হাজার ৯৬৮ হেক্টর। আর আংশিক থেকে সম্পূর্ণ ক্ষতিতে পরিণত হয়েছে ৩৬৩ হেক্টর জমির সবজি। সব মিলিয়ে মোট ক্ষতিগ্রস্ত সবজিক্ষেত ১ হাজার ৩২৮ হেক্টর। টাকার অংকে ক্ষতির পরিমাণ দেখানো হয়েছে ২৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এছাড়া ফেনী জেলায় আবাদকৃত মোট ২৮ হেক্টর মরিচক্ষেতের মধ্যে ১৩ হেক্টর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ও সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে আট হেক্টর জমির মরিচ।

এদিকে জেলা পর্যায়ে চট্টগ্রাম জেলায় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৮২ হেক্টর জমির আউশ ও ৯৫১ হেক্টর জমির সবজি। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত আউশের পরিমাণ ৬ হাজার ৫৩০ হেক্টর ও সবজি ৪ হাজার ৫৯৪ হেক্টর। কক্সবাজার জেলায় সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে রোপা আউশ ৫৫ হেক্টর ও সবজি ১৬০ হেক্টর।

ফেনী জেলায় আংশিক ক্ষতির পরিমাণ আউশে ৩ হাজার ৪১৩ হেক্টর ও সবজিতে ২২৮ হেক্টর জমিতে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচ জেলার উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে— ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, বোয়ালখালী উপজেলার আউশ ধান ও সবজি।

এদিকে প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, অতিবৃষ্টি ও বন্যায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের তিন জেলার মোট ১৩ হাজার ৯৫৪ জন কৃষক। এর মধ্যে রয়েছে আউশক্ষেত, আউশের বীজতলা, গ্রীষ্মকালীন সবজি ও মরিচ।

ক্ষতি নির্ধারণ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সৌরভ দাশ জানান, এ প্রতিবেদন প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। তারা ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের একটা আনুমানিক দাম ধরে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন। ফলে টাকার অংকটা সামান্য কমবেশি হতে পারে। তবে সবজির ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ একটু বেশিই হবে বলে তার ধারণা।

ফটিকছড়ি উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা লিটন দেবনাথ জানান, জুনে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে এ উপজেলার ফসলি জমিসহ রাস্তা, ঘরবাড়িতে পর্যন্ত পানি ঢুকে গিয়েছিল। তারপরও স্থানীয় কৃষকদের তত্পরতার কারণে ক্ষতি কমই হয়েছে। সূত্র: বণিক বার্তা।

বর্ষার শুরুতে ৮০ হেক্টর জমির আউশ নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মো. আনোয়ার। আমন মৌসুমে এ ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবেন তিনি।