মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাজশাহীর পবা উপজেলার পদ্মার চর মাজারদিয়া পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আতাউর রহমান। মহামারি করোনায় খুব কষ্টে দিন কাটছে তাঁর। তবে, এবার দুঃখ ঘুঁচতে শুরু করেছে। ৭ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন বাদাম। বিঘাপ্রতি ১৮ হাজার হিসেবে লাভ আশা করছেন ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা।

আতাউর রহমান এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, “চরের মাটি নিম্নমানের, শুধু বালু। এবারে তাপমাত্রা অত্যাধিক থাকার পরও বিঘায় ৮ মণের কম হবে না আশা করছি। ৮ মণ হলে ১ মণ শ্রমিকদের দিয়ে ৭ মণ টিকে। বাজারে বাদাম ৩ হাজার টাকা মণ বিক্রি হয়। অন্যান্য আবাদের চাইতে বেশি ভালো লাভ হবে বলে মনে করছি।”

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চরের সবচেয়ে বড় বাদামচাষি হিসেবে পরিচিত আতাউর। প্রতিবছর পদ্মার জেগে উঠা চরে বাদাম চাষ করেন। এছাড়াও উপজেলার উঁচু বেলে-দোঁয়াশ মাটিতে এই লাভজনক ফসলে ঝুঁকছে চাষিরা। এক বিঘা জমিতে কম খরচের ফসলের মধ্যে বাদাম অন্যতম। সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা খরচে ফসল উঠানো যায়, কারণ খরচের ৫ গুণ লাভ।

আরোও পড়ুন: ইউটিউব দেখে হলুদ তরমুজ চাষে ইমনের চমক

পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, পদ্মার মাটি বেশ উর্বর হয়। পলিমিশ্রিত বালি মাটি বাদাম চাষের জন্য বেশ উপযোগী। চরের মাজারদিয়ার চর, চর মাজারদিয়া, খানপুর, হারুপুর এলাকায় বাদাম চাষ হয়। কৃষি বিভাগ থেকে প্রণোদনার সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে। যাতে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলায় বাদামের চাষ হয়েছে ৩৬ হেক্টর জমিতে। গতবারের চেয়ে এ বছর বাদাম চাষ বেড়েছে। ঐ বছর ছিল অর্ধেকেরও কম মাত্র ১৫ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে ফলন হয় ১ দশমিক ৬ মেট্রিকটন হারে।

মাজারদিয়ার চর পূর্বপাড়া এলাকার কামরুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষের মোট খরচ সর্বোচ্চ আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। বাদামে একান্ত প্রয়োজনে সেঁচ দিতে হয়, না দিলেও হয়। কিন্তু সেটাতে টাকা লাগে না, কারণ শ্যালো মেশিন রয়েছে প্রায় সবারই। বাদাম চাষ করার পর অন্যান্য ফসলের মতো কীটনাশক, সার ও সেচ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রথম অবস্থায় প্রতি বিঘায় ১০ কেজি টিএসপি, ১০ কেজি পটাশ দিলেই শেষ। তারপর তেমন যত্ন নেওয়ারও তেমন প্রয়োজন নেই। জাবপোকা বা আঁচাপোকা হলে কীটনাশক দিতে হয়। তবে সেই খরচ ধরার মধ্যে না।

আরোও পড়ুন: মান্দায় পানিফল চাষে ভাগ্য বদলেছে সাইদুরের

এই চাষি আরোও বলেন, বাদাম পরিপক্ব হওয়ার পর খেত থেকে তোলার খরচ বিঘাপ্রতি আরও দুই হাজার টাকা। অর্থাৎ চাষ ও তোলা বাবদ মোট খরচ পাঁচ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় আট মণ ফলন পাওয়া যায়। তিন হাজার টাকা হিসাবে এর দাম ২৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ বিঘায় লাভ ১৮ থেকে ১৯ হাজার টাকা। অথচ বোরো আবাদে বিঘাপ্রতি ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা খরচ করে এ বছর আট থেকে নয় হাজার টাকার ধান পাওয়া যায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, একটির পর একটি বাদামের জমি। বেশ জমকে উঠছে। দু-একটি গাছ তুলে দেখা গেছে থোকায় থোকায় বাদাম। আর কিছুদিন পর বাদাম তোলা শুরু করবেন চাষিরা।

চরের এসব বাদাম বিক্রি হয় রাজশাহীর সাহেববাজার নিউমার্কেটে। বাদাম বস্তাবন্দি করে নৌকাযোগে চলে আসে বাজারে। এক একটি দোকানে পাইকারিতে ২৮’শ থেকে ৩ হাজার টাকা মণ বিক্রি হয়। সেখান থেকে খুচরা দোকানিরা ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি করেন।

আরোও পড়ুন: করোনায় চাকরি হারিয়ে অভাব জয়ের পথ দেখাল মাসরুম!

একই এলাকার বাদামচাষি আলম হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, “আমি প্রতি বছরই ৩ বিঘা মাটিতে বাদাম চাষ করি। আরো কিছু ফসলের সাথে সাথে মোটরসাইকেল দিয়ে ভাড়া মারি (রাইডার)। এবার করোনায় খারাপ অবস্থা। তারপও তিন বিঘায় ৭ মণ করে ফলন হলেও ২০ মণ বাদাম পাব। দাম হিসেবে ৫০ হাজারের উপর। ধানে কিন্তু এতো লাভ নাই। আমি কোন প্রণোদনার সার বা বীজ পাইনি। সরকার সাহায্য করলে আরো লাভ করতে পারব।”

বাদামের রোগ ও চাষ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. আব্দুল আউয়াল এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, চিনা বাদামের টিক্কা রোগ হয়। পাতায় দাগ পড়া এ রোগের কারণে ফল ছোট হয়। চাষিরা বিঘা প্রতি ৫০০ গ্রাম বোরন ও ৫ কেজি হারে জিপসাম প্রয়োগ করলেই ঠিক হয়ে যাবে।

এই কর্মকর্তা আরোও বলেন, বেলে দোঁয়াশ মাটিতে বাদাম ভালো চাষ হয়। খরিপ মৌসুমে রাজশাহীতে ৪০৮ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছিল। রবি মৌসুমে অনেকটাই কম হয়, মাত্র ৬০ হেক্টর। সরকারি প্রণোদনার বীজ ও সার বেশিরভাগ কৃষককেই দেওয়া হয়েছে। চাষ সম্পর্কিত বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয় নিয়মিত।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ