আন্তর্জাতিক কৃষি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ইন্টারন্যাশনাল কটন অ্যাডভাইজরি কমিটি (আইসিএসি) সম্প্রতি এক পূর্বাভাস দিয়েছে করোনাভাইরাসের প্রভাবে ২০২০-২১ মৌসুমে তুলার বৈশ্বিক ব্যবহারে ধস নামতে পারে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি আরোও জানিয়েছে, করোনায় বিশ্বজুড়ে শ্রমবাজারে অভূতপূর্ব পরিবর্তন এনেছে, যা বেকারত্বের হার বাড়িয়ে তুলতে পারে। এতে তুলার বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে পারে। খবর বিজনেস লাইন ও ফ্যাশনেটিংওয়ার্ল্ড, বণিক বার্তা।

তুলার বাজার নিয়ে আইসিএসির মে মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনীতির এ স্থবির অবস্থার মধ্যে ২০২০-২১ মৌসুমে তুলার বৈশ্বিক ব্যবহার কমে ২ কোটি ২৯ লাখ টনে নামতে পারে, ২০১৯-২০ মৌসুমের তুলনায় যা ১১ দশমিক ৮ শতাংশ কম। এ সময় পণ্যটির সরবরাহ শৃঙ্খলে ভাঙন ও ভোক্তা চাহিদা কম থাকায় কমে যেতে পারে বৈশ্বিক বাণিজ্যও। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ মৌসুমে তুলার বৈশ্বিক বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৮২ লাখ ৬০ হাজার টন।

এদিকে তুলার বৈশ্বিক ব্যবহার কমে যাওয়ার আভাসে বিশ্বজুড়ে কৃষিপণ্যটির উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারেন কৃষকরা। এর জের ধরে কমে যেতে পারে ফাইবার পণ্যটির দামও। আইসিএসির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২০-২১ মৌসুমে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি পাউন্ড তুলার গড় দাম কমে ৫৬ দশমিক ৯ সেন্টে নামতে পারে। যেখানে চলতি মৌসুম শেষে প্রতি পাউন্ড তুলার গড় মূল্য দাঁড়াতে পারে ৭২ দশমিক ৪ সেন্টে।

আইসিএসির এক নোটে বলা হয়েছে, মহামারীর মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাজার অনিশ্চয়তা ও বাণিজ্যে নানা ধরনের বাধা কৃষকদের ফসল আবাদের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনতে পারে। এতে আগামী মৌসুমে বিশ্বজুড়ে তুলার আবাদ ব্যাপক হারে কমে আসতে পারে। প্রতিষ্ঠানটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২০-২১ মৌসুমে বিশ্বজুড়ে মোট ৩ কোটি ৩০ লাখ হেক্টর জমিতে কৃষিপণ্যটির আবাদ হতে পারে, চলতি মৌসুমের তুলনায় যা ৪ শতাংশ কম।

এদিকে আবাদ কমে আসায় এ সময় তুলার বৈশ্বিক উৎপাদনে নিম্নমুখী প্রবণতা পড়তে পারে। আইসিএসির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২০-২১ মৌসুমে তুলার বৈশ্বিক উৎপাদন দাঁড়াতে পারে ২ কোটি ৫০ লাখ টন, চলতি মৌসুমের তুলনায় যা ৪ শতাংশ কম।

দাম হ্রাসের কারণে বিশ্বের শীর্ষ তুলা উৎপাদনকারী দেশ ভারতের কৃষকরাও পণ্যটির আবাদ কমিয়ে আনতে পারেন। তুলার পরিবর্তে অধিক লাভবান ফসল আবাদে ঝুঁকতে পারেন তারা। আইসিএসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ মৌসুমে ভারতে তুলার আবাদি জমির পরিমাণ কমে ১ কোটি ২০ লাখ হেক্টরে নামতে পারে। চলতি মৌসুমে দেশটির মোট ১ কোটি ২৭ লাখ হেক্টর জমিতে কৃষিপণ্যটির আবাদ হয়েছে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ভারতে পণ্যটির আবাদি জমির পরিমাণ সাত লাখ হেক্টর কমে যেতে পারে।

এছাড়া নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর সংক্রমণ রোধে ভারতে বর্তমানে লকডাউন চলছে। জরুরি প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির বাইরে দেশটির অধিকাংশ আর্থিক ও শিল্প খাত কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। দেশটিতে তুলার আবাদ কমে যাওয়ার পেছনে এ পরিস্থিতিও অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে। উৎপাদনের সঙ্গে দেশটিতে পণ্যটির ব্যবহার ও মূল্য ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হতে পারে। তবে এর পরও ২০২০-২১ মৌসুমে পণ্যটির উৎপাদনের বৈশ্বিক তালিকার শীর্ষস্থানে অনড় থাকতে পারে ভারত।

একই পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ তুলা উৎপাদনকারী দেশ চীনে। আগামী মৌসুমে দেশটিতে পণ্যটির আবাদ কমে যেতে পারে। এর জের ধরে কমে যেতে পারে পণ্যটির উৎপাদন। আইসিএসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ মৌসুমে চীনের মোট ৩০ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে তুলার আবাদ হতে পারে। চলতি মৌসুমে দেশটির ৩৩ লাখ হেক্টর জমিতে কৃষি পণ্যটির আবাদ হয়েছে। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে চীনে তুলার আবাদি জমির পরিমাণ কমে যেতে পারে ২ লাখ ২০ হাজার হেক্টর।

তবে তুলার তৃতীয় শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রে আগামী মৌসুমে পণ্যটির আবাদ ও উৎপাদন স্থিতিশীল অবস্থায় থাকতে পারে। আইসিএসির পূর্বাভাস অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ বাজারে ক্রমেই দরপতনের পরও ২০২০-২১ মৌসুমে দেশটিতে কৃষিপণ্যটির আবাদি জমির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৪৭ লাখ হেক্টরে, চলতি মৌসুমের তুলনায় যা অপরিবর্তিত।