ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বাংলাদেশ রেলওয়ের চার হাজার একরের বেশি পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী।

তিনি বলেন, রেলওয়ের যেসব কৃষি জমি আছে কিন্তু এখন কাজে লাগছে না, সেগুলোতে কৃষিকাজ করা বা ফলজ গাছ লাগাতে বলেছে সংসদীয় কমিটি। মন্ত্রণালয় এখন এই কাজ করবে।

বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য খাদ্যসংকট মোকাবিলায় সরকারি মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অব্যবহৃত চাষযোগ্য জমি চাষাবাদের আওতায় আনার নির্দেশনার অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

করোনা মহামারি এবং রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে। দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে, এমন আশঙ্কার কথাও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার নির্দেশনা দিয়েছেন যেন এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা না হয়।

সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ জমি আছে, তার একটি রেলওয়ে। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার প্রেক্ষাপটে গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বৈঠকে রেলপথ মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি মন্ত্রণালয়কে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রেলওয়ের পতিত জমিতে চাষাবাদের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য একটি কৌশলপত্র তৈরি করার সুপারিশ করে।

২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত রেলপথ মন্ত্রণালয়সম্পর্তিক সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে একটি কৌশলপত্র তুলে ধরে রেলপথ মন্ত্রণালয়। তাতে বলা হয়, বর্তমানে রেলওয়ের ১৩ হাজার ৭৬৫ একর জমি ইজারা দেওয়া আছে। এর বাইরে ৩ হাজার ৫১৪ দশমিক ২১ একর চাষাবাদযোগ্য কৃষিজমি আছে, যেগুলো ইজারা দেওয়া যাবে।

এর মধ্যে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে আছে ৩৫০ দশমিক ৪৯ একর আর পশ্চিমাঞ্চলে আছে ৩ হাজার ১৬৩ দশমিক ৭২ একর জমি। এসব জমির বাইরে আরও প্রায় ৭৯৫ একর অব্যবহৃত জমি আছে, যেগুলো কৃষিকাজের উপযোগী।

রেলওয়ের কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, রেলেওয়ের জমি চাষাবাদের লক্ষ্যে ইজারা দেওয়া হবে। নিলাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটি করা হবে। এ ছাড়া স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রেলওয়ে কোয়ার্টার, স্টেশন এলাকা, অফিস চত্বর ও ওয়ার্কশপ এলাকায় অব্যবহৃত জমি ও সেসবের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে।

রেলওয়ের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের পতিত জমিতে চাষাবাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হবে। জমির গঠন, অবস্থান ও প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে গাছ বা শস্য নির্ধারণ করা হবে। বিনা মূল্যে চারাগাছ ও বীজ বিতরণ করা হবে। কৃষি জমি অন্য কোনো বাণিজ্যিক কাজের জন্য ইজারা না দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে কৌশলপত্রে।

এর আগে গত নভেম্বরে চিনিকল, পাটকল, বস্ত্রকল ও রেলের চাষযোগ্য পতিত জমিতে আবাদের উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট তিন মন্ত্রণালয়ে আধা সরকারি পত্র (ডিও) দেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। ওই আধা সরকারি পত্রে বলা হয়, বৈশ্বিক প্রতিকূল অবস্থায় সম্ভাব্য খাদ্যসংকট মোকাবিলায় সরকারি মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অব্যবহৃত চাষযোগ্য জমিতে খাদ্যশস্য, শাকসবজি, ডাল ও তেলবীজ চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান, চিনিকল, পাটকল, বস্ত্রকল ও রেলপথের অব্যবহৃত বা পতিত জমিতে আবাদের উদ্যোগ গ্রহণ করলে তা দেশে খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। আবাদের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবেন।

২৭ নভেম্বর সরকারি প্রতিষ্ঠানসম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিকে বাংলাদেশ জুট মিলস্‌ করপোরেশন (বিজেএমসি) জানায়, বন্ধ থাকা পাটকলগুলোর পতিত জমিতে চাষাবাদের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাটকলগুলো বন্ধ হওয়ায় শ্রমিক কলোনি খালি হয়েছে।

এসব খালি জায়গা, ইজারার জন্য নির্ধারিত পাটকলগুলোর ইজারা এলাকার বাইরের খালি জায়গা এবং ইজারার বাইরে থাকা অন্য পাটকলগুলোর খালি জায়গায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী চাষাবাদ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ