ছবি: রয়টার্স

আন্তর্জাতিক কৃষি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ভারতে গমের মজুদ ছয় বছরের সর্বনিম্নে অবস্থান করছে। চলতি বছরের মে মাসে ভারত গম রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বৈরী আবহাওয়ায় উৎপাদন কমে যাওয়া ও রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ওয়ার্ল্ড গ্রেইন ডটকম তথ্য প্রকাশ করেছে, মজদু কমার পরও এর মধ্যেই মজুদ থেকে স্থানীয় বাজারে ২০-৩০ লাখ টন গম সরবরাহ করতে যাচ্ছে দেশটি। মজুদ কমার কারণে শস্যটির দাম অব্যাহত বাড়ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতেই রাষ্ট্রীয় মজুদ থেকে গম সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সরকারি তথ্য বলছে, চলতি মাসের শুরুতে গুদামগুলোয় গমের মজুদ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ টনে, যা ২০১৬ সালের পর সর্বনিম্ন। গত বছরের একই সময় মজুদ ছিল ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৫০ হাজার টন।

মুম্বাইভিত্তিক ডিলাররা বলছেন, প্রতি মাসেই সরকারের জন্য গমের বাজার নিয়ন্ত্রণ চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়াচ্ছে। চার মাসের মধ্যে নতুন গম বাজারে উঠতে পারে। তখন পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

রেকর্ড গম উৎপাদনের সম্ভাবনা অস্ট্রেলিয়ার

ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের শীর্ষ গম আমদানিকারক। সাধারণত অস্ট্রেলিয়া থেকেই এশিয়ার দেশটি সবচেয়ে বেশি গম আমদানি করে। এই আমদানি রফাতনির সুখবর হিসেবে রেকর্ড গম উৎপাদনের সম্ভাবনা নিয়ে  নতুন বিপণন মৌসুম শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়া।

বছরের প্রথমার্ধে এশিয়ায় শস্যটির চাহিদা মেটাতে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করবে দেশটি। তবে এ সময় ইউক্রেন ও আর্জেন্টিনা থেকে সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় কমতে পারে ভারতের সরবরাহও। খবর এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্লাটস।

অস্ট্রেলিয়ান ব্যুরো অব এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রিসোর্স ইকোনমিকস অ্যান্ড সায়েন্সেসের (এবিএআরইএস) প্রাক্কলন অনুযায়ী, নতুন মৌসুমে (অক্টোবর-সেপ্টেম্বর) অস্ট্রেলিয়ায় ৩ কোটি ৬৬ লাখ টন গম উৎপাদন হতে পারে। ২০২১-২২ মৌসুমের তুলনায় তিন লাখ টন বেশি উৎপাদনের প্রত্যাশা করছে সংস্থাটি। ওই মৌসুমে উৎপাদন হয়েছিল ৩ কোটি ৬৩ লাখ টন।

তবে দেশটির আবহাওয়ায় প্রতিকূলতার আভাসও রয়েছে। চলতি বছরই লা নিনার প্রভাবে আবহাওয়ায় আর্দ্রতার মাত্রা বেড়েছে। ফলে গমের বাম্পার ফলন হলেও জমি থেকে শস্যটি উত্তোলন করার সময় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। এছাড়া বন্যায় কিছু অঞ্চলে গম উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। লজিস্টিকস সংকট ও গুণগত মান নিয়ে চিন্তিত রফতানিকারকরা। তবে এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও শস্যটির উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে আশাবাদী খাতসংশ্লিষ্টরা।

রাবোরিসার্চের কৃষিবিষয়ক বিশ্লেষক ডেনিস ভজনেসেনস্কি বলেন, ২০২১-২২ বিপণন মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ায় রেকর্ড গম উৎপাদন হয়েছে। এ সময় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করেছে। তবে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় গম সংগ্রহ কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। নিউ সাউথ ওয়েলসের কিছু এলাকায় বন্যার কারণে ব্যাহত হয়েছে সংগ্রহ কার্যক্রম। ফলে পুরোপুরিভাবে গম সংগ্রহ সম্পন্ন হতে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।

এদিকে রেকর্ড উৎপাদন হলেও অস্ট্রেলিয়ান গমের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ ভাঙানো গমের সরবরাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কা এশিয়ার ক্রেতাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সংশ্লিষ্টরা জানান, অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি প্রোটিনসমৃদ্ধ গম উৎপাদন হয়েছে, যা এশিয়ার ক্রেতাদের উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ গমের চাহিদা মেটাতে সহায়তা করবে।

 তবে গত মৌসুমের আগে খরার কারণে অস্ট্রেলিয়ায় গম উৎপাদনে মন্দা দেখা দিলে কৃষ্ণসাগরীয় অঞ্চলের সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠে দেশ। কিন্তু ওই অঞ্চলে সরবরাহ অনিশ্চয়তার মুখে পড়লে আবারো অস্ট্রেলিয়ার বাজার থেকে আমদানি বাড়াতে শুরু করে ইন্দোনেশিয়া।

আগামী বছর এশিয়ার দেশগুলোয় কৃষ্ণসাগরীয় অঞ্চল থেকে গম সরবরাহ বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এশিয়ার ক্রেতারা এ অঞ্চল থেকে গম কিনতে সাবধানতা অবলম্বন করছেন। কারণ জাহাজীকরণে বিলম্ব, অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা ও বিক্রেতাদের ওপর বিশ্বাসযোগ্যতাসহ নানা বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা। ফিলিপাইনের গম আমদানির ২০ শতাংশই আসে কৃষ্ণসাগরীয় অঞ্চল থেকে। কিন্তু যুদ্ধের কারণে আমদানির পরিমাণ অনেক কমেছে।

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ গম উৎপাদক দেশ ভারত ২০২১-২২ বিপণন মৌসুমে বেশ ভালো পরিমাণ গম রফতানি করেছে। তবে আগামী মাসগুলোর রফতানি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কারণ মে মাসে দেশটি গম রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ভারতের রফতানি কমে গেলে বিশ্ববাজারে যে ঘাটতি দেখা দেবে, তা বেশ ভালোভাবে সামাল দিতে সক্ষম হবে অস্ট্রেলিয়া, এমনটাই প্রত্যাশা বিশ্লেষকদের।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ