মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালনে

ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সাধারণত ছাগলের সবচেয়ে বেশি যে রোগ হয় তারমধ্যে তড়কা ও ওলান পাকা রোগ অন্যতম। তাই ছাগলের তড়কা ও ওলান পাকা রোগের লক্ষণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকার জানা জরুরি।

১. তড়কা

গ্রীষ্ম প্রধান দেশে তড়কা ছাগলের একটি মারাত্মক রোগ। স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে ছাগল এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। রোগটি এতই মারাত্মক যে, তড়কার জীবাণু ছাগলে প্রবেশ করার ১২-১৮ ঘণ্টার মধ্যেই লক্ষণ প্রকাশ পায়। এমনকি লক্ষণ দেখা দেওয়ার আগেই ছাগল মারা যেতে পারে। ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামক জীবাণু দ্বারা রোগটি হয়ে থাকে।

লক্ষণসমূহ
প্রবল জ্বর হয়। ক্ষুধা থাকে না এবং জাবর কাটে না। পশু অস্থির হয়ে ওঠে এবং পেট ব্যথা আরম্ভ হয়। বার বার রক্ত মিশ্রিত পায়খানা হয়। রোগাক্রান্ত ছাগল খুব তাড়াতাড়ি অজ্ঞান হয়ে পড়ে এবং মারা যায়।

প্রতিরোধ
পালের কোন ছাগল হঠাৎ মারা গেলে বা তড়কা হয়েছে বলে সন্দেহ হলে অন্য ছাগলকে দ্রুত শুষ্ক ও উঁচু স্থানে সরিয়ে ফেলতে হবে। আক্রান্ত ছাগলের দ্রুত মৃত্যু হলে কোন নির্জন স্থানে ৬ ফুট গভীর গর্ত করে মৃতদেহ ও অন্যান্য জিনিসপত্র মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।

প্রতিকার
তড়কা হয়েছে বুঝতে পারলে ৫ লাখ প্রোকেইন পেনিসিলিন রানের মাংসে বা ৫ মিলিলিটার টেরামাইসিন মাংসপেশীতে ইনজেকশন করতে পারলে উপকার পাওয়া যায়।

২. ওলান পাকা বা ম্যাসটাইটিস
গরু, মহিষ বা ভেড়ার মতো ছাগলেরও ওলান পাকা রোগ হয়। বাচ্চা দেওয়ার কিছুদিন আগে বা পরে এ রোগ দেখা দেয়। কোন সময় ছোটখাট ক্ষতের সংক্রমণ থেকে এ রোগ হয়। ছাগলের বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ এ রোগের কারণ।

লক্ষণসমূহ
গায়ে জ্বর থাকে, নাড়ির গতি দ্রুত হয়। ওলান শক্ত হয় ও বাঁটসহ ফুলে ওঠে। বাঁট দিয়ে পাতলা কখনও জমাট বাঁধা দুধ বেরিয়ে আসে এবং হঠাৎ মৃত্যু ঘটতে পারে। কখনও দুধের সঙ্গে রক্তও বেরিয়ে আসে।

প্রতিরোধ
দুধ দোহনের সময় বা বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময় যাতে কোন ক্ষত সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ক্ষত সৃষ্টি হলেও সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতের জায়গাটি পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করতে হবে। বাচ্চা ছাগলকে অন্য ছাগলের দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রতিকার
প্রথমত, পরিচ্ছন্ন জায়গায় স্থানান্তর করতে হবে। সংক্রমিত ওলান থেকে দুধ দিনে ২-৩ বার বের করে আয়োডিন দ্রবণ দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। সম্ভব হলে ক্যানুলা দিয়ে আয়োডিন দ্রবণ ওলানে ঢোকাতে হবে। এছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে। এমপিসিলিন প্রতি ৮ ঘণ্টা পর পর ৩ মিলিগ্রাম বা কেজি ইনজেকশন প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। সঙ্গে কিটোপ্রোফেন ১.৪ মিলিগ্রাম বা কেজি হিসেবে ৩৬-৪৮ ঘণ্টা পর পর শিরায় ইনজেকশন দিলে দ্রুত সেরে ওঠে।

ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (প্রাণিসম্পদ) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ/২০২৩