এগ্রিকেয়ার প্রতিবেদক: দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় ‍তুলার উৎপাদন বাড়লেও, বাড়ছে না জমির পরিমাণ। গত ছয় বছরের ব্যবধানে তুলার উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণ। কিন্তু জমির পরিমাণ বেড়েছে মাত্র চার ভাগের এক ভাগ।

এছাড়া স্বল্প জনবল নিয়ে তুলার চাষ সম্প্রসারণেও গতি পাচ্ছে না তুলা উন্নয়ন বোর্ড। সবমিলিয়ে সম্ভাবনা থাকা সত্বেও তুলা চাষের সফলতা আটকে আছে।

তুলা উন্নয়ন বোর্ড বলছে, জমি ও জনবল উভয় সংকটে তুলার চাষ ও উৎপাদন আশানুরুপভাবে বাড়ানো যাচ্ছে না। তবে উৎপাদনে সাড়া মিলেছে।

আর সংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উচ্চ ফলনশীল নতুন নতুন জাতের সম্প্রসারণ, কৃষকদের সচেতনতার পাশাপাশি অপ্রচলিত জমিতে তুলার চাষ বৃদ্ধি করতে পারলেই তুলার সর্ব্বোচ্চ সফলতা পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ড’র নির্বাহী পরিচালক ড. মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, বিশ্বের মধ্য তুলা আমদানি ও ব্যবহারের দিক দিয়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। অথচ দেশে তুলা চাষ ও উৎপাদনের সম্ভাবনা অনেক বেশি।

তিনি জানান, এই পরিসংখ্যানই বলে দেয়, দেশে তুলার চাহিদা ও ব্যবহার কত বেশি। আর আমাদের দেশের মাটিও তুলা চাষের উপযোগী। সুতারাং এ বিষয়ে বড় পদক্ষেপ নিলে আট থেকে দশ লাখ বেল তুলা উৎপাদন সম্ভব। এতে রপ্তানী ব্যয় কমার পাশাপাশি ধরা দেবে সফলতা।

তুলার চাষ ও উৎপাদন বাড়াতে সরকারের প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা দরকার বলে মনে করেন এ ঊর্ধতন কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে ৩২ হাজার ৬০০ হেক্টর পাহাড়ী ও সমতল জমিতে তুলা উৎপাদন হয়েছে ৫০ হাজার ১৭৫ বেল। আর গত অর্থ বছর ২০১৪-১৫’তে ৪২ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে তুলা উৎপাদন হয়েছে এক লাখ ৫২ হাজার ৫৩৬ বেল।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে ছয় বছরের ব্যবধানে পাহাড়ী ও সমতল জমি বেড়েছে ১০ হাজার ৬০০ হেক্টর। আর ‍উৎপাদন বেড়েছে এক লাখ দুই হাজার ৩৬১ বেল।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গত অর্থ বছর বিদেশ থেকে ৫৫ লাখ বেল তুলা আমদানি হয়েছে। কিন্তু এই আমদানি করা তুলার মান নিয়ে আমদানিকারকদের মাঝে অসন্তুষ্টি আছে। কিন্তু দেশে উৎপাদিত তুলার গুণগত মান অনেক ভালো। বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তানের চেয়ে দেশের তুলার মান অনেক ভালো।

বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ড (সদর দফতর) উপ পরিচালক ড. তাসদিকুর রহমান বলেন, তুলার গুরুত্ব অপরিসীম। এর বহুমুখি ব্যবহার আছে। সুতারাং আমাদের দেশে তুলার চাষ ও উৎপাদন বাড়ানো খুবই জরুরি।

তিনি জানান, তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নেয়া পদক্ষেপে তুলার উৎপাদনের সঙ্গে সফল চাষীদের সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু তা চাহিদার তুলনায় খুবই সীমত। সবজি, আমন ধানসহ একাধিক ফসলের সঙ্গে লড়াই করে তুলার চাষ বৃদ্ধি করতে হচ্ছে।

এ কর্মকর্তা মনে করেন, তুলার চাষ সম্প্রসারণ বৃদ্ধিতে চাষীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর পাশাপাশি কমপক্ষে প্রতিটি জেলায় তুলা বোর্ডের অফিস ও জনবল থাকতে হবে।

সূত্র জানায়, জনবল সীমত থাকায় বর্তমানে মাত্র প্রত্যক্ষভাবে ৩২ জেলায় তুলার উন্নয়নে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে। আর মাত্র ১৩টি জেলায় অফিস রয়েছে। ৮৮০ জনের জনবলের বিপরীতে ৭০০ জনের মতো জনবল রয়েছে। অথচ দরকার কয়েক হাজার কর্মীবল।

তবে সারা দেশে অল্প পরিসরে বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদন করে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড।

কর্মকর্তারা জানান, চরাঞ্চল, বরেন্দ্রভূমি, লবাক্ত জমি, পাহাড়ী এলাকা, তামাক চাষের জমি, খরা সহিঞ্চুসহ প্রায সব এলাকাতেই এখন তুলা চাষ সম্ভব হচ্ছে। বিভিন্ন সমযে প্রকল্প ও কর্মসূচির মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে বোর্ড। এছাড়া ধানসহ বিভিন্ন ফসলের সঙ্গেও তুলা চাষে সফলতা পাওয়া গেছে।