জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আষাঢ় শেষে শ্রাবণ মাস শুরু হলেও বৃষ্টির দেখা মেলেনি। আমন ধান মূলত বৃষ্টি নির্ভর। কিন্তু এ বছর বৃষ্টির দেখা নাই। বৃষ্টি না হওয়ায় ব্যহৃত হচ্ছে আমন ধান রোপন। বিকল্প পদ্ধতিতে পানি দিয়ে বীজতলা তৈরী করা হলেও বৃষ্টি না হওয়ায় চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার অনেকে বিকল্প পদ্ধতিতে নদী, নালা, খাল ও বিলের পানি দিয়ে জমিতে চাষাবাদ করেছেন। এখন জমিতে পানি দিতে না পারায় মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।
এদিকে প্রচন্ড তাপদাহ থেকে মুক্তি ও বৃষ্টির আশায় নওগাঁর সাপাহার উপজেলার গোয়ালা ঈদগাহ মাঠে দুই রাকাত ইস্তেখার নামায শেষে বিশেষ মোনাজাত করেছেন স্থানীয় মুসল্লিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর ১ লাখ ৯৭ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে ৮ হাজার ৮০০ হেক্টর জমির বীজতলা তৈরী করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপন করা হয়েছে। এছাড়া এবছর আউশ ধান রোপন করা হয়েছে ৫৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে।
পড়তে পারেন: জেনে নিন আপনার এলাকায় চাষ উপযোগী আমন ধানের জাতটির নাম
বিগত বছরগুলোতে আষাঢ় মাসের শুরুতে বৃষ্টির দেখা মেলে। বৃষ্টির পানি জমিতে বেঁধে রেখে চাষাবাদ করা হতো। চারিদিকে পানি থৈ থৈ করতো। নদী-নালা, খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি দেখা যেতো। এসব পানি দিয়ে জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হতো। আবার অনেক কৃষক ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়ে বোরো জমিতেও আমন ধান রোপন করতো। এতে ভাগ্য ভাল হলে কোন বছর আমন ধান ঘরে উঠতো। আবার কখনো লাগানোর কিছুদিনের মধ্যে ফসল ডুবে যেতো।
কিন্তু এ বছর আষাঢ় মাস শেষ হলেও বৃষ্টির দেখা নাই। কাঠ ফাটা তপ্ত রোদে ও ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। বৃষ্টির দিকে চেয়ে আছে মানুষসহ প্রাণিকুল। লাগানো জমিতে ধান বাঁচাতে গভীর ও অগভীর নলকুপ থেকে সেচ দেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষক মাওলানা এমদাদুল হক বলেন, বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে চারদিক থৈ-থৈ করে। এ বছর ঠিক তার উল্টো। আষাঢ় মাস শেষ হলেও এ বছর বর্ষায় তেমন বৃষ্টির দেখা নেই। তাই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে দুই রাকাত নামাজ পড়ে আমরা তাপদাহ থেকে রক্ষা ও বৃষ্টির জন্য দোয়া করেছি। আল্লাহ যেন এই পরিস্থিতির অবসান ঘটান।
পড়তে পারেন: আমন মৌসুমের উচ্চফলনশীল জাত ব্রি-৭৫, বিঘায় ফলন ২০ মণ
মহাদেবপুর উপজেলার হামিদপুর গ্রামের কৃষক সাদ্দাম হোসেন বলেন, গত কয়েক বছর থেকে তিনবিঘা জমিতে আমনের আবাদ করতাম। আষাঢ় মাসের শুরুতে বৃষ্টির পানি দিয়ে চাষাবাদ করতাম। এ বছর বৃষ্টি না হওয়া ধান রোপন করা পিছিয়ে পড়ছিল। এ কারণে গভীর নলকুপের (ডিপ) পানি দিয়ে কয়েকদিন আগে আড়াই বিঘা জমি জমি লাগানো হয়েছে। বাঁকী ১০ কাঠাতে পানির অভাবে লাগানো সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, অনাবৃষ্টির কারণে ডিপের পানি দিয়ে জমি রোপন করতে গিয়ে পানি সেচ, শ্রমিক খরচ, হালচাষ ও সার-কীটনাশক দিয়ে বিঘাপ্রতি প্রায় ৪ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে ইরি-বোরো আবাদ করতে যে ৯-১০ হাজার টাকার মতো খরচ হতো আমনেও তেমন খরচ হবে। বৃষ্টির পানি দিয়ে আবাদ করতে খরচ হতো ৫-৬ হাজার টাকা। বৃষ্টির জন্য আমরা আল্লাহর দিকে চেয়ে আছি এবং দোয়াও করেছি।
মান্দা উপজেলার নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের কৃষক মোখলেসুর রহমান বলেন, এ বছর ৫ বিঘা জমিতে আমনের আবাদ করার ইচ্ছা আছে। সে লক্ষ্যে ১ মণ স্বর্ণা-৫ জাতের ধান দিয়ে বীজতলা তৈরী করা হয়েছে। জমিতে চারা রোপনের সময় হয়ে গেছে। কিন্তু অনাবৃষ্টির কারণে জমি চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। ওই জমিতে ডিপের পানি যায় না। বৃষ্টি না হওয়ায় জমিতে চাষবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না।
পড়তে পারেন: উচ্চ ফলনশীল ব্রিধান ৮৯ ও ব্রি ৯২, শতকে ফলন ১ মণ
নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামে কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, আমন ধান বৃষ্টি নির্ভর। কিন্তু এখনো বৃষ্টির কোন দেখা নাই। বৃষ্টির আশায় ডোবার পানি দিয়ে ৫ বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছি। এখন ডোবা-নালার পানি শেষ হওয়ায় জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পানি না দেওয়ায় জমির মাটি সাদা হয়ে গেছে।
ধানের গাছ শুকিয়ে হলুদ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এখন আকাশের দিকে চেয়ে আছি কখন বৃষ্টি হবে। আর যদি এভাবে চলতে থাকে ধানের গাছ মারা যাবে আমরা কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হবো। অনেকেই তাদের ধান বাঁচানোর জন্য ২০০-২৫০ টাকা ঘন্টা হিসেবে জমিতে সেচ দিচ্ছে। আবার অনেকেই পানির অভাবে জমিতে আবাদ করতে পারেনি।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) একেএম মনজুরে মাওলা এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে বৃষ্টি হবে। এখন যদি বৃষ্টি না হয় ফসল বাঁচানোর জন্য কৃষকদের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আবাদ করতে পানি সেচ করায় খরচও অনেক বেড়ে যাবে। যারা জমিতে ধান রোপন করেছেন যদি সেচ না দেয় তাহলে ধান মারা যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। বরেন্দ্র এলাকায় কৃষকরা চাষাবাদের জন্য বৃষ্টির অপেক্ষা করছে। আর বৃষ্টি না হওয়ায় ধান রোপনেও বিলম্ব হচ্ছে।
এগ্রিকেয়ার/এমএইচ