নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ইলিশের উৎপাদান বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতি বছরের মত এবারও জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ শুরু হচ্ছে ৩১ মার্চ। আগামী ৩১ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল মোট সাত দিনের জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার।

এ কর্মসূচির আওতায় জেলেদের জাটকা ধরতে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য নানা কর্মসূচি পালন করা হবে।

রোববার রাজধানীর মৎস্য ভবনে ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্সের’ সভায় জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এসব কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী।

সচিব বলেন, “দেশের ইলিশ সম্পদ রক্ষায় জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উদযাপনের গুরুত্ব অপরিসীম। জাটকা সংরক্ষণের জন্য দেশের জনসাধারণকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।”

তিনি জানান, জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহে সমাবেশ, নৌ-র‌্যালি ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করার পাশাপাশি টেলিভিশনে জাটকা রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরতে টকশো ও টিভিসি প্রচার, পোস্টার-লিফলেট বিতরণ এবং জেলে-মৎস্যজীবীদের নিয়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সেমিনারের আয়োজন করা হবে।

পাশাপাশি জাটকা ধরা বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালাবে বলে জানান সচিব। ইলিশ সম্পদের উন্নয়নে দেশে ২০০৭ সাল থেকে প্রতিবছর জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উদযাপন করা হচ্ছে।

মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন গত ১২ বছরে বেড়েছে। মাছের আকার ও ওজন বাড়ছে। সবমিলিয়ে দীর্ঘ ১ যুগে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৭৯ শতাংশ। সারাবিশ্বের ১১টি দেশের মধ্যে ১০টিতে ইলিশের উৎপাদন কমেছে। এদিকে আশ্চর্যজনকভাবে একমাত্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশেই প্রতি বছর বাড়ছে ইলিশ। মৎস্য বিভাগের বিভিন্ন কর্মসূচি ও জাটকা নিধন রোধে ব্যাপক তৎপরতাসহ বেশ কিছু উদ্যোগের কারণেই এমনটি হচ্ছে।

২০২১ অর্থবছরে এপ্রিল মাসে প্রকাশিত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর ইলিশ উৎপাদনের গড় প্রবৃদ্ধি প্রায় ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। হিসাবে দেখা যায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯৮ হাজার টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৫০ হাজার টন। এ ছাড়া ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৩ লাখ ১৩ হাজার, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৩ লাখ ৪০ হাজার। এর ১০ বছরের মাথায় ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৫ লাখ ৩৩ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আগামী অর্থবছরে ৬ লাখ টনের ওপরে ইলিশের উৎপাদন হবে বলে আশা করছে।

বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ প্রথম; দ্বিতীয় স্থানে ভারত। বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের ৮৬ শতাংশ বাংলাদেশের। পাঁচ বছর আগে আগে এ পরিমাণ ছিল ৬৫ শতাংশ। প্রতিবেশী ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে ইলিশের উৎপাদন কমেছে। পাঁচ বছর আগে ভারতে বিশ্বের প্রায় ২৫ শতাংশ ইলিশ উৎপাদিত হতো। তবে চলতি বছর তাদের উৎপাদন প্রায় সাড়ে ১০ শতাংশে নেমেছে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা মিয়ানমারে উৎপাদন হয়েছে ৩ শতাংশের মতো। ইরান, ইরাক, কুয়েত ও পাকিস্তানে উৎপাদন হয়েছে বাকি ইলিশ। মৎস্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ওয়ার্ল্ডফিশের তথ্যে এসব জানা যায়।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়, ২০১৭ সালে বাংলাদেশের ইলিশ ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ইলিশ। যা দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ইলিশের অবদান ১ শতাংশ। প্রায় ৫ লাখ মানুষ ইলিশ আহরণে সরাসরি নিয়োজিত এবং ২০ থেকে ২৫ লাখ লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। তাদের সারাবছরের মোট আয়ও বেড়েছে।

এদিকে আজকের সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ছাড়াও বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন অধিদপ্তর, বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি, র‌্যাব, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, নৌপুলিশ, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি, জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি ও বাংলাদেশ ফিশিং বোট মালিক সমিতিসহ ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্সের সদস্যরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ