কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: মাঠে সুগন্ধি ধান কাটতে নেমেছেন চাষিরা। ধান কেটে কেউ সরিষা আবার কেউ শীতকালীন বিভিন্ন ফসল চাষের চিন্তা করছেন। আসলে চলতি কার্তিক মাসের মাঝামাঝি বা মধ্য অক্টোবর থেকে অগ্রাহায়ন বা মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত কোন কোন ফসল চাষ করে লাভবান হওয়া যায় তা অনেক চাষি সঠিক ধারণা পান না। তাই জানুন (মধ্য অক্টোবর-মধ্য নভেম্বর) কোন কোন ফসল চাষ করবেন এবং অধিক লাভবান হবেন।

গম
বীজ বপন ও সার প্রয়োগ 
কার্তিক মাসের দ্বিতীয় পক্ষ থেকে গম বীজ বপনের প্রস্তুতি নিতে হয়। দো-আঁশ মাটিতে গম ভালো হয়। অধিক ফলনের জন্য গমের আধুনিত জাত যেমন- শতাব্দী, সুফী, বিজয়, প্রদীপ, বারি গম-২৫, বারি গম-২৬, আনন্দ, বরকত, কাঞ্চন, সৌরভ, গৌরব রোপণ করতে হবে। বীজ বপনের আগে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক দ্বারা বীজ শোধন করে নিতে হবে। সেচযুক্ত চাষের জন্য বিঘাপ্রতি ১৬ কেজি এবং সেচবিহীন চাষের জন্য বিঘা প্রতি ১৩ কেজি বীজ বপন করতে হবে। ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সার জমি তৈরির শেষ চাষের সময় এবং ইউরিয়া তিন কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। বীজ বপনের ১৩ থেকে ২১ দিনের মধ্যে প্রথম সেচ প্রয়োজন এবং এরপর প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর ২ বার সেচ দিলে খুব ভালো ফলন পাওয়া যায়।

আখ    
চারা রোপণ
এখন আখের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। ভালোভাবে জমি তৈরি করে আখের চারা রোপণ করা উচিত। আখ রোপণের জন্য সারি থেকে সারির দূরত্ব ৯০ সে.মি থেকে ১২০ সে.মি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৬০ সে.মি। এভাবে চারা রোপণ করলে বিঘাপ্রতি ২২০০ থেকে ২৫০০ চারার প্রয়োজন হয়।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

শ্রাবন মাসে কি কি সবজি চাষ করবেন, জানুন বিস্তারিত

অপ্রধান মসলা ধনিয়া চাষে ধনী ময়েজ

এ সময়ে যেসব সবজি চাষে বেশি লাভবান হওয়া যাবে

ভুট্টা    
বীজ বপন    
ভুট্টা চাষ করতে চাইলে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে এবং জমি তৈরি করে  বীজ বপন করতে হবে। ভুট্টার উন্নত জাতগুলো হলো বারি ভুট্টা-৬, বারি ভুট্টা-৭, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৬, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৭, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৮, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৯, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১০, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১১ এসব।

সরিষা ও অন্যান্য তেল ফসল    
বীজ বপন ও সার প্রয়োগ  
কার্তিক মাস সরিষা চাষেরও উপযুক্ত সময়। সরিষার প্রচলিত জাতগুলোর মধ্যে টরি-৭, রাই-৫, কল্যাণীয়া, সোনালি, সম্পদ, বারি সরিষা-৬, বারি সরিষা-৭, বারি সরিষা-৮, বারি সরিষা-৯, বারি সরিষা-১০, বারি সরিষা-১১, বারি সরিষা-১২, বারি সরিষা-১৩, বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৫, বারি সরিষা-১৬ উল্লেখযোগ্য।

জাতভেদে সামান্য তারতম্য হলেও বিঘাপ্রতি গড়ে ১ থেকে ১.৫ কেজি সরিষার বীজ প্রয়োজন হয়। বিঘা প্রতি ৩৩ থেকে ৩৭ কেজি ইউরিয়া, ২২ থেকে ২৪ কেজি টিএসপি, ১১ থেকে ১৩ কেজি এমওপি, ২০ থেকে ২৪ কেজি জিপসার ও ১ কেজি দস্তা সারের প্রয়োজন হয়। সরিষা ছাড়াও অন্যান্য তেল ফসল যেমন- তিল, তিসি, চিনাবাদাম, সূর্যমুখী এ সময় চাষ করা যায়।

আলু    
জমি তৈরি ও বীজ বপন  
আলুর জন্য জমি তৈরি ও বীজ বপনের উপযুক্ত সময় এ মাসেই। হালকা প্রকৃতির মাটি অর্থাৎ বেলে দো-আঁশ মাটি আলু চাষের জন্য বেশ উপযোগী।

জাত ও বীজহার  
ভালো ফলনের জন্য বীজ আলু হিসেবে যে জাতগুলো উপযুক্ত তাহলো ডায়মন্ড, মুল্টা, কার্ডিনাল, প্যাট্রেনিজ, হীরা, মরিণ, অরিগো, আইলশা, ক্লিওপেট্রা, গ্রানোলা, বিনেলা, কুফরীসুন্দরী এসব। প্রতি হেক্টর জমি আবাদ করতে ১৫০০ থেকে ২০০০ কেজি বীজ আলুর দরকার হয়।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

আষাঢ় মাসে চাষ করুন বিনাচিনাবাদাম-৭, ফলন আড়াই টন

জেনে নিন শীতকালে সদ্যজাত বাছুরের যত্ন ও পরিচর্যা

শীতকালে মাছের খাবার, অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় যত্ন জানুন

সার প্রয়োগ 
এক হেক্টর জমিতে আলু আবদ করতে ৩২৫ কেজি ইউরিয়া, ২২০ কেজি টিএসপি, ২৫০ কেজি এমওপি, ১৫০ কেজি জিপসাম এবং ১৪ কেজি দস্তা সার প্রয়োজন হয়। তবে এ সারের পরিমাণ জমির অবস্থাভেদে কম-বেশি হতে পারে। তাছাড়া হেক্টরপ্রতি ১০ থেকে ১২ টন জৈব সার ব্যবহার করলে ফলন অনেক বেশি পাওয়া যায়।

পরিচর্যা 
আলু উৎপাদনে আগাছা পরিষ্কার, সেচ, সারের উপরি প্রয়োগ, মাটি অলগাকরণ বা কেলিতে মাটি তুলে দেয়া, বালাই দমন, মালচিং করা আবশ্যকীয় কাজ। সময়মতো সবগুলো কাজ করতে পারলে খরচ কমে আসে, ফলন বেশি হয়।

মিষ্টি আলু    
জমি তৈরি ও  বপন  
নদীর ধারে পলি মাটিযুক্ত জমি এবং বেলে দো-আঁশ প্রকুতির মাটিতে মিষ্টি আলু ভালো ফলন দেয়। তৃপ্তি, কমলা সুন্দরী, দৌলতপুরী আধুনিক মিষ্টি আলুর জাত। প্রতি হেক্টরের জন্য তিন গিটযুক্ত ৫৬০০ থেকে ৬০০০ খ- লতা পর্যাপ্ত। হেক্টরপ্রতি ১০ থেকে ১২টন গোবর/জৈবসার, ৪০ কেজি ইউরিয়া, ১০০ কেজি টিএসপি, ১৫০ কেজি এমওপি সার দিতে হবে। আলুর মতো অন্যান্য পরিচর্যা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে কাক্সিক্ষত ফলন পাওয়া যাবে।

ডাল ফসল    
বপন    
ডাল হলো গরিবের আমিষ। আমিষের ঘাটতি পূরণ করতে ডাল ফসল চাষে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। মুসুর, মুগ, মাসকলাই, খেসারি, ফেলন, অড়হর, সয়াবিন, ছোলাসহ অন্যান্য ডাল এ সময় চাষ করতে পারেন। এজন্য উপযুক্ত জাত নির্বাচন, সময় মতো বীজ বপন, সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ, পরিচর্যা, সেচ, বালাই ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করতে হবে। সরকার ডাল ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২% হারে কৃষি ঋণ প্রদান করছেন।

শাকসবজি    
বীজ বপন, চারা রোপণ ও পরিচর্যা 
শীতকালীন শাকসবজি চাষের উপযুক্ত সময় এখন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বীজতলায় উন্নতজাতের দেশি-বিদেশি ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, শালগম, বাটিশাক, টমাটো, বেগুন এসবের চারা উৎপাদনের জন্য বীজতলায় বীজ বপন করতে হবে। আর গত মাসে চারা উৎপাদন করে থাকলে এখন মূল জমিতে চারা রোপণ করতে পারেন। রোপণের পর আগাছা পরিষ্কার, সার প্রয়োগ, সেচ নিকাশসহ প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করতে হবে। তাছাড়া লালশাক, মুলাশাক, গাজর, মটরশুঁটির বীজ এ সময় বপন করতে পারেন।

অন্যান্য ফসল    
বীজ বপন    
অন্যান্য ফসলের মধ্যে এ সময় পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, ধনিয়া, কুসুম, জোয়ার এসবের চাষ করা যায়। সাথী বা মিশ্র ফসল হিসেবেও এসবের চাষ করে অধিক ফলন পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে আধুনিক চাষাবাদ কৌশল অবলম্বন করতে হবে।

জানুন (মধ্য অক্টোবর-মধ্য নভেম্বর) কোন কোন ফসল চাষ করবেন লেখাটি লিখেছেন কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন সহকারী তথ্য অফিসার (শস্য উৎপাদন), কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা। লেখাটি কৃষি বাতায়ন থেকে নেওয়া হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ