মৎস্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ দিন দিন বাড়ছে। সেইসাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খাদ্যের দাম। মাছ চাষকে আরও বেশি লাভজনক করতে হলে প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি মাছকে অতিরিক্ত সম্পূরক খাদ্য দিতে হবে। আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষে যা খরচ হয় তার প্রায় শতকরা ৬০ ভাগই খরচ হয় খাদ্য ক্রয় করতে। অনেক চাষি খাদ্য তৈরি করে থাকেন কিন্তু সংরক্ষণ পদ্ধতি নিয়ে ভুল ধারণাও করেন। তাই মাছের খাদ্য সংরক্ষণের সঠিক নিয়ম জানা একান্ত জরুরি।

সম্পূরক খাদ্য হিসাবে আমাদের দেশে সচরাচর যে উপাদানগুলো ব্যবহার করা হয় তা হলো, চালের কুঁড়া, গমের ভুসি, সরিষার খৈল, তিলের খৈল, ফিশমিল, গরু-ছাগলের রক্ত ও নাড়ি-ভুঁড়ি। এ ছাড়া জলজ উদ্ভিদ যেমন, কচুরিপানা, ক্ষুদিপানা ইত্যাদি।

এসব উপাদান প্রয়োজনমতো মিশিয়ে চাষিরা মাছের খাদ্য তৈরি করেন। কারখানায় তৈরি বাণিজ্যিক খাদ্যও মাছের খামারে ব্যবহার করা যায়। যে ধরনের খাদ্যই মাছ চাষের পুকুরে ব্যবহার করা হোক না কেন তার গুণগতমান ভালো হওয়া আবশ্যক।

খাবারের গুণগতমান ভালো না হলে সুস্থসবল পোনা ও মাছ পাওয়া যাবে না। অন্যদিকে মাছ সহজেই রোগাক্রান্ত হবে এবং মাছের মৃত্যুহার বেড়ে যাবে। আবার মাছের বৃদ্ধিও আশানুরূপ হবে না। খাদ্যের গুণগতমান ভালো রাখার জন্য যথাযথ নিয়মে খাদ্য উপকরণ বা তৈরি খাদ্য সংরক্ষণ ও গুদামজাতকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই নিয়ম মেনে খাদ্য সংরক্ষণ ও গুদামজাতকরণের দিকে নজর দিতে হবে।

এগ্রিকেয়া২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

মহাদেবপুরে মৎস্যজীবীদের মাঝে ছাগল ও মাছের খাদ্য বিতরণ

জেনে নিন কোন জাতের মাছের খাদ্য চাহিদা কতটুকু

পাঙ্গাস মাছের পিলেট খাদ্য তৈরির কৌশল

টেংরা মাছের নার্সারী পুকুরে খাদ্য প্রয়োগ, পোনা উৎপাদন ও আহরণের কৌশল

মাছের খাদ্যে আর্দ্রতার পরিমাণ ১০% এর বেশি থাকলে ছত্রাক বা পোকা-মাকড় জন্মাতে পারে। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৬৫% এর বেশি থাকলে খাদ্যে ছত্রাক বা পোকামাকড় জন্মাতে পারে। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় খাদ্যের পুষ্টিমান নষ্ট হয়। পোকামাকড়সমূহ ২৬-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় জন্মাতে পারে। সেই সঙ্গে এরা খাদ্য খেয়ে ফেলে ও তাদের মলমূত্র দ্বারা ব্যাকটোরিয়া ছড়াতে পারে।

সূর্যালোকে খোলা অবস্থায় খাদ্য রাখলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে কিছু কিছু ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায়। খোলা অবস্থায় খাদ্য রাখলে বাতাসের অক্সিজেন খাদ্যের রেন্সিডিটি (চর্বির জারণ ক্রিয়া) ঘটাতে পারে যা খাদ্যের গুণগতমানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে । অক্সিজেন ছত্রাক ও পোকা-মাকড় জন্মাতেও সহায়তা করে।

জেনে নিন খাদ্য সংরক্ষণের সঠিক নিয়ম-

শুকনো খাদ্য ও খাদ্য উপাদান, খাদ্য বায়ুরোধী পলিথিনের বা চটের অথবা কোনো মুখ বন্ধ পাত্রে ঠান্ডা ও শুষ্ক জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে। মাঝে মাঝে এই খাদ্য পুনরায় রোদে শুকিয়ে নিলে ভালো হয়।

খাদ্য পরিষ্কার, শুকনো, নিরাপদ এবং পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ঘরে রাখতে হবে। গুদাম ঘরে সংরক্ষিত খাদ্য মেঝেতে না রেখে ১২ থেকে ১৫ সে.মি. উপরে কাঠের পাটাতনে রাখতে হবে। পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণের জন্য খাদ্যের বস্তার নিচে এবং আশপাশে ছাই ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। খাদ্য তিন মাসের বেশি গুদামে রাখা যাবে না। এর মধ্যেই এটি ব্যবহার করে ফেলা উচিত। ইঁদুর বা অন্যান্য প্রাণীর উপদ্রবমুক্ত স্থানে খাদ্য সংরক্ষণ করতে হবে। খাদ্য কীটনাশক ও অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থের সাথে রাখা যাবে না।

খাদ্য তৈরির জন্য তাজা ছোট মাছ হলে তাৎক্ষণিক খাওয়াতে হবে, অন্যথায় রেফ্রিজারেটরে রেখে দিতে হবে। তৈলাক্ত ও চর্বিযুক্ত খাদ্য কালো রঙের বা অস্বচ্ছ পাত্রে নিম্ন তাপমাত্রায় রেখে দিতে হবে। ভিটামিন ও খনিজ লবণসমূহ বাতাস এবং আলোকবিহীন পাত্রে রেফ্রিজারেটরে রেখে দিতে হবে। এসব নিয়ম মেনে মাছের খাদ্য সংরক্ষণ করলে খাবার ভালো থাকবে। জেনে নিন মাছের খাদ্য সংরক্ষণের সঠিক নিয়ম সংবাদের তথ্য জাগো নিউজ থেকে নেওয়া হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ