কৃষকের মাথায় হাত

নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দেশের দক্ষিণে বইছে ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডব। তার রেশ যেন সারাদেশের কৃষকের ওপর দিয়ে যাচ্ছে। দেশের অধিকাংশ এলাকাতেই কৃষকের ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে ধান চাষিদের অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে। ঝড় বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি; কৃষকের মাথায় হাত থাকার দৃশ্য ধরা পরেছে এগ্রিকেয়ার২৪.কম এর হাতে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম এর ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি মাহফুজার রহমান জানান, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে গত ২ দিনের টানা বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রোপা আমনসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি খেতের। শতশত কৃষকের স্বপ্নের আমন খেতের ফসল বর্তমানে কাদাপানিতে লেপ্টে আছে। দিনের পর দিন অক্লান্ত পরিশ্রমে করে এমন পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কৃষকরা। খেতের ফসল দেখতে গিয়ে এখন কৃষকের মাথায় হাত।

চলতি রোপা আমন চাষের শুরু থেকে প্রকৃতির সাথে লড়াই চলছে ফুলবাড়ীর কৃষকদের। আমনের চারা রোপনের পরে খরার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই অনেক ক্ষেতে দেখা দেয় পোকার আক্রমণ। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তৎপরতা আর কৃষকদের হার না মানা লড়াইয়ে জয় কৃষকের।

ফুলবাড়ীর দিগন্তজুরে খেলা করে সবুজের ঢেউ। কৃষাণ-কৃষাণীরা আশায় বুক বাঁধেন। স্বপ্ন দেখেন ফসল ঘরে তুলে নবান্ন উৎসবে মেতে ওঠার। তবে তাদের আশার পাতে ছাঁই। তাদের স্বপ্নের আমন খেতের ধান গাছ এখন মাটির সাথে লেপ্টে আছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে শত শত কৃষকের পাকা, আধাপাকা, কাঁচা ধান মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। বৃষ্টি আর বাতাসের তোড়ে নষ্ট হয়ে গেছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, লাউসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি ক্ষেত।

আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড়ে কৃষিতে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় কৃষিকর্মকর্তাদের ছুটি বাতিলসহ ১০ নির্দেশনা

বড়ভিটা ইউনিয়নের নওদাবস গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, তার সাড়ে তিন বিঘা জমির সদ্য শীষ বের হওয়া স্বর্ণ জাতের ধানের গাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের কৃষক বাদল সরকার জানান, তার নিজের তিন বিঘাসহ তার ভাই ও চাচির পাঁচ বিঘা জমির ধান গাছ এলোমেলো ভাবে জমির কাদাপানিতে লেপ্টে আছে। এতে জমির ধান পঁচে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন তিনি।

ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের খোঁচাবাড়ী গ্রামের শামসুল হক জানান, তিনি এবারে দশ বিঘা জমিতে আমন চারা রোপন করেছেন। তার মধ্য প্রায় আড়াই  বিঘা জমির ধান গাছ মাটিতে পড়ে গেছে। এতে ফলন হানির পাশাপাশি গো-খাদ্যে সংকটের সম্ভাবনার কথাও বলেন তিনি। একই পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষক।

আউশ ও রোপা আমন ধান চাষাবাদের বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবারে ১১ হাজার ৩৫২ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। এছাড়াও ১ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে আউশ চাষাবাদ হয়েছে। এরমধ্যে বন্যায় ৫১০ হেক্টর জমির আউশ ধান নষ্ট হয়ে গেছে। সবশেষ বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে ৩৬৫ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, বৃষ্টি ও বাতাসের তোড়ে যেসকল খেতের ধান গাছ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে সেসব ধান খেতের পানি দ্রুত নিস্কাসনের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি জমিতে লুটিয়ে পড়া ধান গাছগুলিকে মুটো করে বেঁধে দেয়ার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, যেসব খেতের ধান আশি ভাগ পেকেছে তা কেটে নেয়ার জন্যও কৃষকদের বলা হচ্ছে। জমিতে ধানগাছ লুটিয়ে পড়ায় ফলনহানির কোন সম্ভাবনা আপাতত দেখছি না। ঝড় বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি; কৃষকের মাথায় হাত শুধু কুড়িগ্রামে নয় দেশের অধিকাংশ স্থানেই এ পরিস্থিতি হয়েছে বলে একাধিক সূত্র আমাদের নিশ্চিত করেছে।