মেহেদী হাসান, রাজশাহী: বৈশ্বিক কভিড-১৯ মহামারিতে কৃষি খাতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল সরকার। এই প্যাকেজের আওতায় ঋণ বিতরণে শীর্ষে রয়েছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। অন্যদিকে, লাভের পরিবর্তে গত চার বছর ধরে লোকসান দিয়ে চলতে হচ্ছে বিশেষায়িত এ ব্যাংককে।

প্রণোদনা ঋণ বিতরণসহ বেশ কিছু সহায়তা ঋণ বিতরণে দেশের শীর্ষে অবস্থান করলেও বর্তমানে ব্যাংকটির নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। গত চার বছর আয়ের তুলনায় ব্যয় হয়েছে বেশি। তবে, খুব শিগগিরই লোকসান কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলেও জানিয়েছেন রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ইসমাইল হোসেন।

ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, মোট ৩৮৩টি শাখা রয়েছে ব্যাংকটির। গতবছরের এপ্রিল হতে ঘোষণাকৃত প্রণোদনা ঋণ বিতরণ হয়েছে সবকটি শাখাতেই। এই শাখাগুলোর মধ্যে শহরে ৫০টি এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৩৩৩টি শাখা রয়েছে । খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এসব শাখার মধ্যে ১৫১টি শাখাই লোকসানে রয়েছে। এমনকি চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ২৬ আগস্ট ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে ব্যাংকটির।

পড়তে পারেন: প্রণোদনা ঋণ বিতরণে শীর্ষে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক

ব্যাংকটির আয়-ব্যয় হিসাবে দেখা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা লাভ করে ব্যাংকটি। এরপর
২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যাংকটি লোকসান দেয় ৪৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা। সে বছর ব্যাংটির আয় ছিল ৫৮৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্যয় ছিল ৬২৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরেও ৩৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়। সে তুলনায় আয় ছিল ৫৩৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা এবং ব্যয় ছিল ৫৭৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরেও ৫৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে ৫৮৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয় করে ব্যাংকটি। ফলে লোকসান গুণতে হয় ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা।

গত পাঁচ বছরে আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও ব্যর্থ হয় ব্যাংকটি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মাত্র ৪১ শতাংশ এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২১ শতাংশ অর্জনে সমর্থ হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩৪৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা অর্জন হলেও লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৫০ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৯০০ কোটি টাকার আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আদায় হয় ১৯০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। একইভাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩১ শতাংশ, ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১৯ শতাংশ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৭ শতাংশ আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে ব্যাংকটি। চলতি অর্থ বছরের ৫০০ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত থাকলেও গত ২৬ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে আদায় হয়েছে মাত্র ৭৬ কোটি টাকা যা মোট হিসাবের মাত্র ১৫ শতাংশ।

এদিকে আমানত সংগ্রহ ও আয় করতে ব্যর্থ হলেও ঋণ বিতরণ হয়েছে শতভাগ। কৃষি খাতে চলতি প্রণোদনার প্রথম ধাপে ৯ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে। গত জুন শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বিতরণ হয়েছে শতভাগ। কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে (সিএসএমই) খাতে ১ হাজার ৪৭৮ জনকে প্রণোদনা ঋণ দেওয়া হয়েছে ৬০ কোটি টাকা যা শতভাগ বিতরণ হয়েছে। একইভাবে দ্বিতীয় মেয়াদে গত জুলাই থেকে চলতি মাসের (১০ অক্টোবর) পর্যন্ত ১৮০ জনকে ৫০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যাংকটির জনসংযোগ কর্মকর্তা জামিল হোসেন।

টানা চার বছর লোকসানের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, গ্রাহকদের জন্য সরকার সুদহার কমিয়েছে। সে তুলনায় ভর্তুকি পাচ্ছি না। আমাদের গত জুন শেষে অপারেটিং লোকসান ৪০ কোটি থেকে ৩ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। আশা করছি আমাদের খেলাপি ঋণ বাড়বে না।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ