মেহেদী হাসান, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে কৃষি খাতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল সরকার। বর্তমানে এই প্যাকেজের আওতায় ৭৮ হাজার ৫২৬ জন কৃষক ১ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছেন। এ ঋণ বিতরণে শীর্ষে রয়েছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষিখাতের জন্য ৫ শতাংশ সুদে এই তহবিল ঘোষণা করেন। এখন পর্যন্ত সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা ঋণ বিতরণ হয়েছে ৪২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এর মধ্যে রাকাব ৭ হাজার ২৯ জন কৃষকের মাঝে ৩২১ কোটি ২৯ লাখ টাকা বিতরণ করেছে। কৃষিঋণের প্রণোদনা প্যাকেজের (৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

৪ শতাংশ সুদে ঋণ ঘোষণার পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও ব্যাংকগুলো এ খাতে এখন পর্যন্ত মাত্র ১ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে। অন্যান্য ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে পিছিয়ে থাকলেও রাকাব লক্ষ্যমাত্রার ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা বেশি বিতরণ করেছে।

প্রণোদনার ৯৫৯ কোটি টাকা বিতরণ করেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) যা কৃষি ব্যাংক লক্ষ্যের ৮০ শতাংশ। রাকাব বিতরণ করেছে শতভাগেরও বেশি।

আরোও পড়ুন: শর্ত জটিলতায় প্রণোদনা ঋণে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক, খামারিরা

কৃষকদের প্রণোদনা ঋণ বিতরণ মেয়াদ বাড়ল

গণমাধ্যমের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রণোদনা ঋণ বিতরণ করেছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) ৫১ শতাংশ, রূপালী ব্যাংক ৮৬ শতাংশ, এক্সিম ব্যাংক ৭৮ শতাংশ ও উত্তরা ব্যাংক ৫৩ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে। কোনো ঋণ দেয়নি মধুমতি ও ওয়ান ব্যাংক। আর লক্ষ্যের ১০ শতাংশের নিচে ঋণ দিয়েছে ইউসিবিএল, ইউনিয়ন, ট্রাস্ট, স্ট্যান্ডার্ড, সাউথইস্ট, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স, সোশ্যাল ইসলামী, সীমান্ত, প্রাইম, এনআরবি গ্লোবাল, এনআরবি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, যমুনা, আইএফআইসি, ঢাকা, বাংলাদেশ কমার্স, এবি, জনতা ও বেসিক ব্যাংক।

তবে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে প্রণোদনা ঋণ ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই কৃষি খাতে ঋণ বিতরণে তেমন গতি দেখা যাচ্ছে না। কম সুদে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না ব্যাংকগুলো। নানা শর্ত জটিলতায় প্রণোদনার ঋণে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক, খামারিরা। অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে ঋণ গ্রহীতাদের সেভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে না, বরং ঋণ গ্রহণে অনুৎসাহিত করা হচ্ছে।

কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানায়, রাজশাহী অঞ্চলে ঋণ বিতরণে ব্যাংকের পক্ষ থেকে আন্তরিকতার কোন ঘাটতি নেই। অনেক সময় প্রয়োজনীয় নথিপত্রে ঘাটতি থাকে সেজন্য দু-একটি শাখায় সমস্যা হতে পারে। এটার পরিমান খুবই কম। আবার ঋণ গ্রহণে উপযুক্ত গ্রাহকরা ঋণ নিতে আগ্রহী হচ্ছে না। পরিচিত বা আগে যাঁরা ঋণ নিয়েছেন, তাঁদেরই ঋণ দেওয়া হচ্ছে। সেইসাথে অন্যান্যদের ঋণ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

অপরদিকে, ব্যাংকের পক্ষ থেকে অসহযোগিতামূলক আচরণ, ঋণের টাকা পরিশোধের নিশ্চিয়তায় দলিল ও জামানত জমা রাখাসহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। একাধিকবার যেতে হচ্ছে ব্যাংকে। সেইসাথে ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোর ইচ্ছায় যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা জামিল হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, আমাদের ৩৮৩ টি শাখায় ঋণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান। সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সাথে ঋণ বিতরণ চলছে। যারা প্রকৃত ঋণ পাওয়ার যোগ্য তাদেরকেই ঋণ দেওয়া হচ্ছে।

এ পর্যন্ত ৭ হাজার ২৯ জন কৃষককে ৩২১ কোটি ২৯ লাখ টাকা ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আমরা লক্ষ্যমাত্রার বেশি ঋণ বিতরণ করেছি। প্রণোদনা ঘোষণার পর একটু ধীরগতিতে ঋণ বিতরণ হলেও বর্তমানে দ্রুত গতিতে ঋণ বিতরণ চলছে।

প্রণোদনা ঋণ বিতরণে শীর্ষে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। পর্যায়ক্রমে রয়েছে রূপালী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক,বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ