মেহেদী হাসান, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: নানা শর্ত জটিলতায় প্রণোদনার ঋণে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক, খামারিরা। অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে ঋণ গ্রহীতাদের সেভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে না, বরং ঋণ গ্রহণে অনুৎসাহিত করা হচ্ছে।

অথচ এ ঋণ পাওয়ার যোগ্যতায় রয়েছেন ফুল, ফল, শস্য, মাছ, হাঁস, মুরগি, দুগ্ধ খামার এবং প্রাণিসম্পদ উৎপাদনের সাথে জড়িত গ্রামাঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষক, খামারি। করোনা পরিস্থিতিতে কৃষক, খামারির ক্ষতি পোষাতে সরকারের পক্ষ থেকে স্বল্প সুদে ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা ঋণ ঘোষণা করা হয়।

কিন্তু অধিকাংশ কৃষক ও খামারিরা ব্যাংক থেকে বিশেষ প্রণোদনার এ ঋণ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন এ প্রতিবেদকের কাছে। আলাপকালে তারা জানান, ব্যাংকের পক্ষ থেকে অসহযোগিতামূলক আচরণ, ঋণের টাকা পরিশোধের নিশ্চিয়তায় দলিল ও জামানত জমা রাখাসহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। একাধিকবার যেতে হচ্ছে ব্যাংকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রণোদনা প্যাকেজের কোনোটাই কোনো অনুদান নয়, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের এই ঋণ দেবে। ঋণের সুদের কিছু অংশ সরকার বহন করবে এবং বাকিটা ওই গ্রাহককে দিতে হবে। সরকার যে কিছু সুদ বহন করবে, এটাই এই প্রণোদনা প্যাকেজের মূল বৈশিষ্ট্য।

ফসল ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ঋণে বেশি আগ্রহ থাকলেও নানা কারণে ডেইরি ও ক্ষতিগ্রস্ত পোল্ট্রি খামারিদের আগ্রহ অনেকাংশে কমে গেছে। প্রণোদনা ঋণ ঘোষণার পর যতখানি আগ্রহ উদ্দীপনা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ছিল ঠিক ততটাই উল্টো বর্তমান পরিস্থিতি।
সরকারি ব্যাংকের ঋণ গ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের একধরনের অনীহা জন্মেছে। সরকারি ব্যাংকের বিপরীতে ঋণ বিতরণে মাঠে নেমেছে বেসরকারি এনজিও। ঋণ বিতরণে তারা অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে বলে ধারনা সংশ্লিষ্টদের।

আরোও পড়ুন: কৃষকদের প্রণোদনা ঋণ বিতরণ মেয়াদ বাড়ল

রাজশাহীতে কৃষি ঋণ বিতরণের গতি বেড়েছে

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকগুলো প্রণোদনা ঋণে খামারিদের আগ্রহ করার বিপরীতে অনুৎসাহিত করছেন। খামারিরা ঋণ গ্রহণে আগ্রহ থাকলেও তাতে ভাটা পড়েছে। ব্যাংকগুলো অলিখিত নানা শর্ত জুড়ে বিব্রত ও ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সেইসাথে ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষমতা দেখা দিতে পারে এমন ভয়ে নাজেহাল ও ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা সরকারি ঋণ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ অধিকাংশ পোল্ট্রি খামারিদের।

রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, প্রণোদনার জন্য একটা তালিকা করা হয়েছে। প্রণোদনার যে টাকা আসবে তা খুবই সামান্য, আট-দশ হাজার টাকা। ক্ষতির পরিমাণ বিবেচনায় খামারিদের আট-দশ লাখ টাকা করে ঋণের ব্যবস্থা করা সময়োপযোগী পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করলেও ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে আগ্রহী নন। নানা শর্ত জুড়ে খামরিদের অনুৎসাহিত করা হচ্ছে বলে একাধিক খামারি আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন। প্রণোদনা ঋণে খামারিরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

রাজশাহীর পবা উপজেলা হরিপুর এলাকার পোল্ট্রি খামারি মুস্তাকিম বিল্লাহ এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, প্রথমে প্রণোদনা ঋণের বিষয়ে জেনে ব্যাংকে যোগাযোগ করলে জমির দলিল, খারিজ কপিসহ নানা ঝামেলা ও উদ্ভট শর্ত পূরণ করে ঋণ নিতে বলে। সবার তো আর জমির দলিল নেই, নিজের কাছে থাকে না। তাই ব্রাক ব্যাংক থেকে ৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। তারা আবার লাখে ২০ হাজার টাকা রেখে দিয়ে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা ক্যাশ দিয়েছে।সরকারি ঋণ যদি সহজে পাওয়া যেত তাহলে এক অবস্থা হতো না।

একই এলাকার বাসিন্দা রাকিব এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, জটিলতার কারণে কয়েক লাখ টাকা ক্ষতি হওয়ার পরও সরকারি ঋণ নেইনি । আশেপাশে দু-একজন যদি ঋণ নিতে পারত, তাহলে তার দেখাদেখি ঋণ নিতে পারতাম। সরকারি ঋণ নিলে নানা ঝামেলা থাকে। আশেপাশের একজনও ঋণ পাননি। আর সরকারি ঋণ সবাই পায় না। যাদের ব্যাংকে ভালো যোগাযোগ আছে, উঠাবসা আছে তারাই ঋণ পাবে। সাধারণ খামারিদের এই ঋণ দিবে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই খামারি।

এদিকে রাজশাহী নগরীর পঞ্চবটি এলকার খামরি আরাফাত রুবেল ডেইরি খাতে বেসরকারি ঋণ নিতে গিয়ে পড়েন বিড়ম্বনায়। তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ঋণের জন্য শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংকে আবেদন করেছিলাম। শুরুর দিকে যারা আবেদন করেছিল তারাই পাবে, আমারটা বাতিল হয়ে গেছে। আমি এখন কৃষি ব্যাংকে অথবা কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে যোগাযোগ করব।

আরোও পড়ুন:মৎস্য খাতে ক্ষতিগ্রস্থদের আর্থিক প্রণোদনা, ভর্তুকি দেয়া হবে

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মিলারদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে

ব্যাংকের শর্ত জটিলতায় প্রণোদনা ঋণে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক, খামারিরা এর কারণ জানতে চাইলে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো: জামিল হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ১০-১৫ বছর আগে হয়ত কিছু বিষয়ে জটিলতা ছিল। এখন সম্পূর্ণ জটিলতামুক্ত। কোন ধরণের অনিয়ম করার সুযোগ নেই। যারা ঋণ পাওয়ার যোগ্য তারাই ঋণ পেয়েছেন এবং পাবেন। প্রান্তিক পর্যায়ে পোল্ট্রি খামরি, ডেইরি, ফসলসহ কৃষি প্রণোদনা খাতের ঋণ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমাদের সপ্তাহে ৭ দিনই মনিটরিং চলছে। স্বয়ং মাঠে নেমেছেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান স্যার। প্রণোদনা ঋণের বিষয়ে উপযুক্তরা আবেদন করলে প্রত্যেককে ঋণ সুবিধা দেওয়া হবে।এতগুলো ৩৮৩ টি শাখায় ঋণ বিতরণ চলছে দ্-ু এক শাখায় সামান্য সমস্যা হতে পারে। সেটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা।

তিনি আরোও বলেন, শুরুতে প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণ ছিল ১০ শতাংশ। ক্রমেই বাড়ছে কৃষকদের আগ্রহ। বর্তমানে ৫৫ শতাংশেরও বেশি। গত জুলাই- আগস্ট দুইমাসে ৬০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ প্রদান করা হয়েছে। প্রান্তিক কৃষকদের জন্য কিছুটা শিথিল করা হচ্ছে। যাতে তারা সহজেই এ ঋণ নিতে পারে। ঋণ নিতে কোন জটিলতা নেই।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ