ঠাকুরগাঁও (বাসস): ঠাকুরগাঁও চিনিকলের চিনি উৎপাদনে লক্ষ্য পূরণ হওয়ার আশা করছে কর্তৃপক্ষ। চলতি অর্থ বছরের চিনি উৎপাদন ও আহরনের মাত্রার কারণে এই আশা করছে তারা। এদিকে আখের চাষ, চিনির উৎপাদন ও চিনি আহরোণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া ও লোকসান কমতে শুরু করায় চিনিকলের কার্যক্রম ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে।

মিলে এখন পুরোদমে চলছে আখ থেকে চিনি উৎপাদন কার্যক্রম। এ পর্যন্ত ৩ হাজার ২০০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদিত হয়েছে। এ মৌসুমে চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। মিল কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এই মৌসুমে চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে। মিলে এ মৌসুমে আখ মাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭০ হাজার মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত ৬২ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করা হয়েছে।

চিনিকল কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২৩-২০২৪ মাড়াই মৌসুমে চিনিকলে আখ মাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭০হাজার মে. টন। চিনি আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬.৫০%। চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৫০মে. টন। ঠাকুরগাঁও সুগার মিলের ২ হাজার ৮০০ একর নিজস্ব জমি রয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৪০০ একর জমি ব্যবহার করা হয় আখ উৎপাদনে। এ ছাড়া বাইরের চাষিদের কাছ থেকে প্রায় ৫ হাজার ৮০০ একর জমির ফসল আসে মিলটিতে।

চিনিকল সূত্র আরো জানায়, রংপুর অঞ্চলের একমাত্র সচল ও বৃহত্তর চিনিকল ঠাকুরগাঁও সুগার মিল’স। ১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে আখ মাড়াই কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে যাত্রার পর ভালো চলছিল মিলটি। মাঝখানে কয়েক বছর নিয়মিত লোকসানের কারণে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তবে গত কয়েকটি অর্থ বছরে মিলটির উৎপাদন, আখচাষের আহরণ মাত্রা বৃদ্ধি, আখ চাষিদের আখ উৎপাদন বৃদ্ধি ও শ্রমিকদের আন্তরিক শ্রমসহ বিভিন্ন কারণে আবারো ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে ঠাকুরগাঁও চিনিকল।

এদিকে বেশ কয়েক বছর ধরে সরবরাহ করা আখের মূল্য পরিশোধ করতে পারায় ভোগান্তি কমেছে চাষিদের। এতে তাদের আখ চাষে আগ্রহ বেড়েছে। ফলে অন্যান্য বছরের মতো চলতি মৌসুমেও আখ মাড়াই কার্যক্রম ভালো ভাবে চলা ও ভালো চিনি উৎপাদনের আশা করছে চিনিকল কর্তৃপক্ষ।
গত বছর ২২ ডিসেম্বর মিলটির মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন করেন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক (ডিসি) মাহবুবর রহমান। এ সময় শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শামিমা সুলতানা, জেলা পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠকসহ আরো অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শিবগঞ্জ এলাকার আখ চাষি আবদুর রহমান রহমান জানান, আখ চাষের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, সরকার কর্তৃক আখের দাম বৃদ্ধি ও সময়মতো আখের মুল্য পাওয়ায় কৃষকদের মাঝে আখ চাষের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত কয়েক বছরে এই এলাকায় আখের চাষ অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে আখচাষে লাভ বা মুনাফার পরিমাণও বেড়েছে।
জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার কৃষক হুরমত আলী ও সদর উপজেলার গড়েযা ইউনিয়নের কৃষক আকবর আলী বলেন, বার বার আখের দাম বাড়ানোর কারণে আখ চাষে মুনাফা বেড়েছে। এতে কৃষকদের মধ্যে আখ চাষে আগ্রহ বেড়েছে। আখের সাথে অন্যান্য সাথী ফসল চাষের সুযোগ থাকায় আখ চাষের গুরুত্বও বেড়ে যাচ্ছে। তবে যেভাবে চিনির দাম বেড়েছে, সেই হারে আখের দাম আরো বাড়ানো হলে আখ চাষিরা আরো উপকৃত হবে বলেও জানান তিনি।

চিনিকলের ডিজিএম কৃষি গৌর চন্দ্র বসাক বলেন, এই কলের আওতাধীন জমিতে কয়েক বছরের তুলনায় আখ চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। যথাসময়ে প্রশিক্ষণ পাওয়া, লোন ও লজিষ্টিক সার্পোট পাওয়া, সাথী ফসল করতে পারা, মুনাফা বৃদ্ধি পাওয়া এবং উৎপাদিত আখের টাকা কৃষকরা সময় মতো পাওয়ায় কৃষিতে বা আখের চাষে সাম্প্রতিক সময়ে অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। আমাদের এ সাফল্য ধরে রাখতে হলে আখ চাষ ও উৎপাদন আরো বৃদ্ধি করতে হবে। সেই লক্ষ্য নিয়ে চিনিকল কর্তৃপক্ষ তৎপর রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ডিজিএম (উৎপাদন) আশফাকুর রহমান বলেন, এ মৌসুমে অন্যান্য বারের চাইতে চিনি উৎপাদন ও আখ থেকে চিনি আহরণের মাত্রা অনেক ভালো। তাই চিনি উৎপাদনের লক্ষ্য পূরণ হওয়ার আশা করছি।

কলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজাহান কবির বলেন, বর্তমানে চিনির দাম ভাল থাকায় বিগত সময়ের চেয়ে ঋণ ও লোকসানের বোঝা কমছে। অপরদিকে আখের চাষ ও উৎপাদনও বেড়েছে। এটা আমাদের জন্য আশাব্যঞ্জক।

জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ঠাকুরগাঁও চিনিকলটি এ জেলার একমাত্র ভারিশিল্প। এই কলটি নিয়ে আমরা অনেক বেশি আশাবাদী। চলতি মৌসুমের আখ মাড়াই কার্যক্রমের উদ্বোধন করতে গিয়ে আখ চাষ, চিনি উৎপাদনসহ বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছি। এই চিনিকলের প্রতি সব সময় প্রশাসনের আন্তরিক সহযোগিতা রয়েছে।