ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আকর্ষণীয় ফুলের মধ্যে একটি ডালিয়া। অনেকে শখ করে ডালিয়া চাষ করতে গিয়ে মনক্ষুন্ন হয়ে থাকেন। মূলত ফুল চাষ করতে কিছু নিয়ম মানতে হয়। তাই আপনাদের সুবিধার্থে ডালিয়ার চাষ ব্যবস্থাপনা ও কিছু কৌশল দেওয়া হলো।

জাতের নাম : বারি ডালিয়া-১ বৈশিষ্ট্য: ১। এটি একটি কন্দজাতীয় ফুল, ২। পট প্লান্ট হিসেবে ব্যবহার বেশি তবে কাট-ফ্লাওয়ার হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে, ৩। গাঢ় লাল এবং সাদা মিশ্রনের ফুল এ জাতটির বৈশিষ্ট্য, ৪। গাছ প্রতি ফুলের সংখ্যা প্রায় ১৪-১৫ টি, ৫। পটে ফুলের স্থায়ীত্ব ৮-৯ দিন থাকে।

বপনের সময়: কন্দমূল বা কাটিং থেকে উৎপন্ন চারা ২০-২৫ দিন পর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে রোপনের উপযোগী হয়। চারা তৈরির সময়: জুলাই- আগস্ট মাসে কন্দমূল বা কাটিং থেকে চারা তৈরির উপযুক্ত সময়।

মাড়াইয়ের সময়:  সাধারণত চারা লাগানোর ৭০-৮০ দিন পর ফুল সংগ্রহ করা যায়। তবে পূর্ণ প্রস্ফুটিত অবস্থায় ফুল সংগ্রহ করা উচিত।

বিশেষ উদ্যানতাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনা:

শাখা ভাঙ্গা (Pinching): কান্ডের আগার অংশ কেটে ফেলাকে শাখা ভাঙ্গা বা পিনচিং বলে। সাধারণত ৩-৬টি শাখা রেখে দিলে গাছটি ঝোপালো হয় এবং অধিক ফুল পাওয়া যায়।

কুঁড়ি অপসারণ (Disbudding): অনাকাঙ্খিত অপরিপক্ক ফুলের কুঁড়ি অপসারণ কার্যক্রমকে কুঁড়ি অপসারণ বলা হয়। মুকুট কুঁড়িগুলিকে রেখে অবশিষ্ট কুঁড়িগুলি ছিড়ে দিলে বড় আকারের ফুল পাওয়া যায়।

ঠেকা দেয়া (Staking): ডালিয়ার ফুল শাখার তুলনায় বড় ও ভারী হয় বলে কাঠি দিয়ে ঠেকা দিতে হয়।

রোগবালাই  দমন ব্যবস্থা

পাতায় দাগ পড়া: এ রোগের আক্রমণে প্রথমে নিচের পাতায় হলদে দাগ পড়ে এবং আক্রমণের মাত্রার উপর নির্ভর করে বাদামী থেকে কালো দাগে পরিণত হয়। এ রোগ দমনে ব্যাভিস্টিন বা বেনলেট (০.১%) স্প্রে করতে হবে।

পোকামাকড়  দমন ব্যবস্থা:

জাব পোকা: ডালিয়ার সবচেয়ে বড় শত্রু জাবপোকা। এ পোকা গাছের পাতা, ডগা এবং ফুল থেকে রস চুষে খেয়ে গাছের ক্ষতি কর। আক্রান্ত নতুন কুঁড়ি ও পাতা কুঁকড়ে যায়। এ পোকা দমনে প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত পাতা বা ফুল ছিঁড়ে ফেলে পোকাসহ ধ্বংস করা উচিত।

হলুদ রংয়ের আঁঠালো ফাঁদ ব্যবহার করেও ভাল ফল পাওয়া যায়। সাবান গুড়া ৫ গ্রাম/লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করেও এ পোকা দমন করা যেতে পারে।

আক্রমণ বেশী হলে ডাইমেথয়েট জাতীয় কীটনাশক (পারফেকথিয়ন/সানগর/টাফগর ৪০ ইসি) ২.০ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

থ্রিপসএ পোকা খুব ছোট ও বাদামী বা কালো রঙের। এরা সাধারণত গাছের বর্ধনশীল অংগ যেমন কঁচি পাতা ও ফুলের কুঁড়ি থেকে রস শোষণ করে যার ফলে কুঁড়ি ফোঁটে না বা অংশিক ভাবে ফোঁটে এবং পাতা বিবর্ণ হয়ে যায়।

এরা পাতার এপিডার্মাল স্তর থেকেও রস চুষে খায়। এ পোকা দমনে জমিতে সাদা রঙের আঁঠালো ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া নিম তেল ৫ মিলি + ৫ মিলি ট্রিক্স প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। আক্রমণ বেশী হলে ফিপ্রনিল গ্রুপের কীটনাশক (অ্যারোনিল ৫০ এসসি/ ফোকাস ৫০ এসসি) ১.০ মিলি/লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর ২-৩ বা স্প্রে করতে হবে।

সার ব্যবস্থাপনা

মাঠে বা জমিতে: জমি তৈরীর পর হেক্টর প্রতি ১০ টন পঁচা গোবর সার, ১০০ কেজি ফসফরাস এবং ১০০ কেজি পটাশ সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। চারা/কন্দ রোপনের ১ মাস পর গাছের দৈহিক বৃদ্ধির জন্য ৭৫ কেজি ইউরিয়া এবং ৫০ কেজি পটাশ সার উপরিপ্রয়োগ করা উচিত। ফুলের কুড়ি আসার পর পরই একই নিয়মে ৭৫ কেজি ইউরিয়া সার আবার উপরি প্রয়োগ করা উচিত।

পটে বা টবেপটে জন্মানোর জন্য ২ ভাগ মাটি, ২ ভাগ গোবর সার, ১ ভাগ পাতাপঁচা সার ও ১ ভাগ হাড়ের গুড়ার সাথে ৫ গ্রাম টিএসপি, ৫ গ্রাম মিউরেট অব পটাশ এর মিশ্রন ব্যবহার করা উত্তম।

১০ গ্রাম ইউরিয়া সারের অর্ধেক কন্দ/চারা রোপনের ২৫-৩০ দিন পর গাছের দৈহিক বৃদ্ধির সময় একবার এবং বাকী অর্ধেক ফুলের কুড়ি আসার সময় উপরি প্রয়োগ করা উচিত।

ডালিয়ার চাষ ব্যবস্থাপনা ও কিছু কৌশল সংবাদের তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে নেওয়া হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ