মাহফুজার রহমান মাহফুজ, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ মাঘের শুরু, জমিতে বোরোধানের চারা রোপণের প্রস্ততি নেওয়ার পালা। কিন্তু বাধ সেধেছে প্রকৃতি। গত কয়েকদিন দেখা মিলছে না সূর্যের। ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডায় জবুথবু অবস্থা। তবু্ও থেমে নেই দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কৃষকদের সংগ্রাম।

উপজেলার ১২ হাজার ৪৪৫ হেক্টর আবাদি জমিতে ৩৮ হাজার কৃষক পরিবার বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করেন। তবে বেশিরভাগ কৃষক আমন ও ইরি-বোরো মৌসুমে বছরে দু’বার প্রধান ফসল হিসেবে জমিতে ধান চাষাবাদ করে জীবন-জীবিকায় টিকে আছেন। জমিতে চাষাবাদ করতে প্রকৃতির সাথে চলছে এ অঞ্চলের কৃষকের অবিরাম লড়াই। এবারের বোরো মৌসুমে তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে না।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবারে ১০ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চারার চাহিদা পূরণের জন্য প্রায় ৫৫০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই নিচু অঞ্চলের ৫০ হেক্টর জমিতে চারা রোপণ করা হয়েছে। তীব্র শীত উপেক্ষা করে কৃষকরা জমিতে চারা রোপণ করছেন। তারা আরও জানান, শীতের তীব্রতা থেকে বীজতলা বাঁচাতে ১৬ লিটার পানিতে ৫০ গ্রাম করে ইউরিয়া, পটাস, থিয়োভিট, সালফার ও ১০ মিঃলিঃ থিমিট মিশিয়ে স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে জমিতে বোরোধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। কেউ বৈদ্যুতিক সেচ পাম্প চালু করে জমিতে সেচ দিচ্ছেন। কেউ আবার পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করে নিচ্ছেন। অনেকে কনকনে ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে জমির কাদাপানিতে নেমে মই টানছেন। কৃষি শ্রমিকরা কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে বীজতলা থেকে চারা তুলে বিকাল পর্যন্ত জমিতে রোপণ করেছেন। সব মিলিয়ে শীতকে উপেক্ষা করে বোরোধান চাষাবাদ করতে ফসলের মাঠে শুরু হয়েছে কৃষকদের কর্মযজ্ঞ।

উপজেলার পানিমাছ কুটি এলাকার কৃষক এহসান আলী, আব্দুল কুদ্দুস, রিয়াজুল ইসলাম, মজিবর রহমান ও মোজাম্মেল হক জানান, জমিতে আগাম চারা রোপণ করলে ফলন ভালো হয়। তাই শীতকে উপেক্ষা করে জমিতে চারা রোপণ করছেন। তবে শীতের তীব্রতার কারণে পর্যাপ্ত কৃষি শ্রমিক না থাকায় তারা এখন পর্যন্ত পুরোপুরি চারা রোপণ কাজ শেষ করতে পারেন নাই।

শাহবাজার এলাকার কৃষক সফিয়ার রহমান রব্বানী বলেন, ‘আমি এবারে সাত একর জমিতে ধান চাষাবাদের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। বীজতলায় চারার বয়স ৪০ দিন পাড় হয়েছে। কনকনে ঠান্ডার মধ্যে জমিতে চারা রোপণের কাজ শুরু করেছি। শীতের ভয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তো আর চলবে না। একই এলাকার কৃষক শাহজাহান আলী বলেন, ‘শীতের মৌসুম, শীত তো থাকবেই। প্রতিবছরই পৌষের শেষ থেকে মাঘের মাঝামাঝি সময়ে জমিতে বোরোধানের চারা রোপণ করি। এই সময়ে জমিতে চারা রোপণ করলে ফলন ভালো পাওয়া যায়। তাই এবারেও চারা রোপণ শুরু করছি। আশা করি এবারেও ভালো ফলন পাব।

উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, তীব্র শীত উপেক্ষা করে কৃষকরা জমিতে চারা রোপণের কাজ শুরু করেছেন। শীতের তীব্রতা বেশি থাকায় বীজতলা বাঁচাতে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। শীতের তীব্রতা কমলে দ্রুত সময়ে কৃষকরা জমিতে চারা রোপণ কাজ শেষ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। কৃষকদের আগ্রহ দেখে বুঝা যাচ্ছে উপজেলায় চলতি মৌসুমে বোরো চাষাবাদের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জিত হবে ইনশাআল্লাহ।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ