রাকিবুল আলম মিরাজ, এগ্রিকেয়ার২৪.কম:  দক্ষিণ আমেরিকার উন্নতমানের পারা ঘাস চাষ করা সহজ। দেশের অধিকাংশ কৃষক উন্নত জাতের ঘাস সম্পর্কে অবগত নন। এ ঘাসের চাষ পদ্ধতি ও গুণাগুণ সম্পর্কে তারা অবগত হলে আরও উৎসাহিত হবেন।

পারা ঘাস দক্ষিণ আমেরিকার ঘাস কিন্তু বর্তমানে দেশের সর্বত্রই এর চাষ হয়ে থাকে। পারা একটি স্থায়ী জাতের অর্থাৎ একবার চাষ করলে কয়েক বছর ধরে ফসল পাওয়া যায়। জলীয় ও আর্দ্র অঞ্চলে এ ঘাস ভালো হয় তাই আমাদের দেশের আবহাওয়ায় এটি খুবই উপযোগী। এ ঘাস দেখতে লতার মতো, কাণ্ড গোলাকৃতি ও সবুজ বর্ণের। সারা গায়ে প্রচুর সূক্ষ্ম লোম আছে।

উঁচু নিচু সব মাটি-জমিতেই জন্মে। এমনকি আবদ্ধ পানি ও লোনা মাটিতেও এ ঘাস জন্মানো সম্ভব। বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলের জন্য এ ঘাস চাষ খুবই সম্ভাবনাপূর্ণ। আম কাঁঠালের বাগানের ফাঁকে ফাঁকে, রাস্তার দুই পাশে সেঁতসেঁত জায়গায়, জলাবদ্ধ স্থানে, এমনকি সমুদ্র উপকূলবর্তী জেলাগুলোর লবণাক্ত জমিতে যেখানে সাধারণত অন্য ফসলের চাষ হয় না, সেসব জমিতেও পারা ঘাস স্বার্থকভাবে চাষ করা যায। অবশ্য শীতকালে অধিক ঠাণ্ডায় এ ঘাসের উৎপাদন কমে যায়।

ঘাস লাগানো : বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত এ ঘাস লাগানো যায়। তবে গ্রীষ্মের আগে জমি চাষ দিয়ে প্রস্তুত করে রাখতে হবে। গ্রীষ্মে এক পশলা বৃষ্টি হলেই এ ঘাস লাগানো যায়। এ ঘাস লাইন করে ১.৫x১.৫ ফুট ব্যবধানে রোপণ করতে হয়। তবে এক লাইন হতে অন্য লাইনের দূরত্ব তেমন ধরা বাধা নিয়ম নেই। কারণ এ ঘাস অল্প সময়ে সব জমিতে বিস্তার লাভ করে। কাণ্ডাংশগুলো মাটির সাথে ৬০ ডিগ্রি কোণ করে লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায়। ঘাসের কাণ্ড অথবা শিকড়যুক্ত ঘাসের গোড়া চারার জন্য ব্যবহৃত হয়। কাণ্ড ছেদনের সময় লক্ষ রাখতে হবে প্রতি খণ্ডে যেন ২-৩টি গিঁট থাকে।

পারা ঘাসের চাষের জন্য বিশেষ কোনো যত্ন নিলেও চলে। তবে ভালো ফসলের জন্য জমি প্রস্তুতের সময় প্রতি একরে ৪ টন গোবর অথবা কম্পোস্ট সার এবং ৩৫ কেজি টিএসপি প্রয়োগ করতে হবে। ঘাস লাগানোর ২-৩ সপ্তাহ পর একরপ্রতি ৩৫ কেজি ইউরিয়া সার দিতে হয়। প্রতিবার ঘাস কাটার পর একরপ্রতি ৩৫ কেজি ইউরিয়া সার দিলে ভালো ফলন আসে।

সাভার ডেইরি ফার্মের রিপোর্ট অনুসারে একরপ্রতি বছরে ১১২ কেজি নাইট্রোজেন, ৮০ কেজি ফসফরাস এবং ৪০ কেজি পটাশ প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ময়লাযুক্ত পানি এবং গোয়াল ঘর ধোয়া পানি ও আবর্জনা এ ঘাসের জমিতে প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের চাষিদের কাছে এ ঘাস চাষ নতুন বিষয়। তাই ঘাসের চাষ পদ্ধতি এবং গুণাগুণ সম্পর্কে চাষিদের ভালোভাবে জানার সুযোগ দিতে হবে। এজন্য ব্যাপক প্রচারের প্রয়োজন।

যেসব স্থানে চারা বা কাটিং ও চাষ পদ্ধতির তথ্য পাওয়া যায়-
০ বাংলাদেশ সরকারের সব গো-উন্নয়ন ও দুগ্ধখামারগুলো। গো-উন্নয়ন ও দুগ্ধখামার, সাভার ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম ও বগুড়া;
০ সব জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র; সব জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়; সব জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়; বন বিভাগ ও নার্সারিগুলো;
চারা কাটিংস পাওয়া সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আগেই যোগাযোগ করে নেয়া ভালো। আজকাল এ ঘাস বিক্রয় করেও লাভবান হওয়া যায়।

ঘাসের ব্যবহার ও ফলন : পারা ঘাস দ্রুতবর্ধনশীল ঘাস। যখন ২৪-৩২ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয় তখনই এ ঘাস কাটার উপযুক্ত সময়। ঘাস লাগানোর ৩ মাস পরই কাটার উপযুক্ত হয় এবং এরপর প্রায় প্রতি মাসেই ঘাস কাটা যায়। বছরের প্রায় ৮-১০ বার ঘাস কাটা যায় এবং প্রতি একরে বছরে ২০-২৫ টন কাঁচার ঘাস পাওয়া সম্ভব। এ ঘাস কেটে খাওয়ানো যায়।

এ ঘাসে শতকরা ১২ ভাগ আমিষ রয়েছে। এটি একটি সুস্বাদু ঘাস। গবাদিপশুর কাছে এ ঘাস খুবই পছন্দনীয়। সর্বশেষে বলা যায়, সংশ্লিষ্ট সবাইকে উৎসাহিত করা এবং এসব উন্নতমানের চাষের প্রচলন করা আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে লাভজনক হবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ