দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উপকূলে চাষযোগ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উপকূলে চাষযোগ্য প্রযুক্তিসমূহ চাষিদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেছেন, এর ফলে ওই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন হবে, থাকবে না দারিদ্রবিমোচন ও অভাব।

তিনি বলেছেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষিবিজ্ঞানীরা লবণাক্ততাসহিষ্ণু উন্নতজাতের ধান ব্রি ৬৭, ভুট্টা, সূর্যমুখী, গম, বার্লি এবং বিনা চাষে আলু ও রসুনের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন এবং ইতোমধ্যে এসবের পরীক্ষামূলক প্রদর্শনী সম্পন্ন করেছেন।

তিনি জানান, উদ্ভাবিত এসব প্রযুক্তি এবং ফসল চাষীরা চাষ করার সুযোগ পাবেন। এর মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ উপকূলবর্তী এলাকায় কৃষি বিপ্লব ঘটবে।

আজ বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ, ২০২০) খুলনার দাকোপ উপজলোর চরডাঙ্গায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রদর্শনী প্লট সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।

খুলনার দাকোপ উপজলোয় চরডাঙ্গায় প্রায় ১০০ বিঘা প্লট জমির উপর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রদর্শনী প্লট রয়েছে।

পরিদর্শন শেষে কৃষিমন্ত্রী বলেন, যুগযুগ ধরে আমাদের উপকূলীয় এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এসব জমিতে সারা বছরে একবার ফসল হয়। আমন ধান তোলার পর বছরের বাকি সময়টা মাঠের পর মাঠ জমি অলস পড়ে থাকত।

তিনি বলেন, লবণাক্ততার কারণে এসব অঞ্চলে বছরে দুইবার বা তিনবার ফসল চাষ করা যায় না। এসব বিবেচনায় আমাদের লক্ষ্য ছিলো কীভাবে, কী ফসল লাগালে, কীভাবে পরিচর্যা করলে এই প্রতিকূলতার মাঝে, নানা বিপত্তি এবং জটিল পরিবেশে ফসল উৎপাদন করা যায়।

ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরেই লবণাক্ততাসহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবনে কাজ করে আসছিলেন। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আমরা উন্নত মানের এসব জাত উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যে যে নতুন জাতের ব্রি-৬৭ ধান আবিষ্কার করেছে। এটির উপাদনশীলতা অনেক বেশি।

মন্ত্রী বলেন, উপকূলীয় এলাকা এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলের লবণাক্ত জমিতে ফসল উৎপাদনের সমস্যা দুটি: লবণাক্ততা এবং সুপেয় পানির অভাব। যে খালগুলো দিয়ে সুপেয় পানি আসতো সেগুলো পলিজমে ভরাট হয়ে গেছে। সেজন্য খালগুলো পুন:খননের উদ্যোগ নেয়া হবে। এবং লবণাক্ততাসহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবনে আমরা সক্ষম হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, এ অঞ্চলের কৃষিক্ষেত্রের অপার সম্ভাবনা সীমাহীন। এসব প্রযুক্তি উপকূলবর্তী বিপুল এলাকার সকল চাষীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিব। চাষিরা এসকল ফসলের চাষ করলে এ এলাকার মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়বে। মানুষের জীবনযাত্রার মানের, পরিবর্তন হবে, দারিদ্রবিমোচন ও অভাব দূর হয়ে যাবে।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণাঞ্চলের কৃষির উন্নয়নে অনেকগুলো বিশেষ প্রকল্প দিয়েছেন। অনেক বরাদ্দ এসেছে ভবিষ্যতে আরো আসবে।

উল্লেখ্য, খুলনাসহ উপকূলীয় অঞ্চলের সমস্যাগুলোর মধ্যে প্রধান সমস্যা হল লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা, সেচের পানির লবণাক্ততা, অনাবাদি ও স্থায়ী পতিত জমি প্রভৃতি।

মৃত্তিকা গবেষণা ও উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের জরিপ মতে, খুলনার মোট ২ লাখ ১৩ হাজার হেক্টর আবাদযোগ্য জমির মধ্যে লবণাক্ত জমির পরিমাণ এক লাখ নব্বই হাজার হেক্টর। যা মোট আবাদযোগ্য জমির ৮৯ শতাংশ। এছাড়া লবণ পানির ভয়াবহতার কারণে শুষ্ক মওসুমে  সেচের পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়ায় প্রতিবছর শুষ্ক মওসুমে উপকূলীয় এলাকায় ৫ লক্ষাধিক হেক্টর জমি অনাবাদি থেকে যাচ্ছে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উপকূলে চাষযোগ্য প্রযুক্তিসমূহ চাষিদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার ঘোষণা শিরোনামের সংবাদের তথ্য কৃষিমন্ত্রণালয়ের তথ্য অফিসার মো: কামরুল ইসলাম ভূইয়া নিশ্চিত করেছেন।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের ফ্রুট ফ্লাই কিটমুক্ত আম আমদানিতে আগ্রহ জাপানের