নিজস্ব প্রতিবেদক: দিনাজপুরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে তেজপাতা। জেলার ফুলবাড়ী উপজেলায় নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রহমত আলী চাষ শুরু করেছেন তেজপাতার।

উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের আকিলাপাড়া গ্রামে ব্যতিক্রম ফসলের চাষ দেখতে প্রতিদিনই মানুষ ভিড় করছে তার বাগানে।

জানা যায়, মো. রহমত আলী বাংলাদেশ নৌবাহিনীর পিটি অফিসার হিসেবে চাকরি শেষে ২০০৯ সালে অবসরে যান। গ্রামে ফিরে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষাবাদ করতেন। ইন্টারনেটে দেখে বাণিজ্যিকভাবে তেজপাতা চাষ করার কথা মাথায় আসে তার। ২০১৭ সালে ১ একর ২০ শতক জমিতে ৮শ তেজপাতার চারা রোপণ করেন।

পরে চারাগাছ বড় হলে ২ বছরের মাথায় পাতা সংগ্রহ ও বাজারজাত করতে শুরু করেন। তা থেকে এখন বছরে দেড়লাখ টাকার তেজপাতা বিক্রি করছেন তিনি। বছর খানেক আগে তেজপাতার বাগানের চারপাশে নতুন করে ৪শ সুপারির চারা লাগিয়েছেন। গাছ বড় হয়ে সুপারি ধরলে তার আয় বছরে বেড়ে দাঁড়াবে ৪ লাখে।

উপজেলার কৃষকরা মূলত জমি থেকে ধান, ভুট্টা, সরিষা ও রবি শস্য চাষ করে থাকেন। তবে বাজারে তেজপাতার ব্যাপক চাহিদা থাকায় এলাকায় নতুন ফসল হিসেবে রহমত আলী বাণিজ্যিকভাবে তেজপাতা চাষ করেছেন। একটি তেজপাতা গাছ পরিপূর্ণ চারাগাছ রোপণের দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যে পাতা সংগ্রহ করার উপযুক্ত হয়। বছরে দুই থেকে তিনবার গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করা যায়।

রহমত আলীর তেজপাতা বাগান এখন পাতায় পাতায় পরিপূর্ণ। প্রতিটি গাছে কচি পাতা বের হয়েছে। বাগানের চারপাশে ৮শ সুপারি গাছ লাগানো আছে। ভবিষ্যতে বাগান সম্প্রসারিত করে চারদিকে রাস্তা করে তেজপাতার বাগানকে একটি পিকনিক স্পট বানানোর ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি ও তার স্ত্রী।

রহমত আলী বলেন, অনেকে অনেক ধরনের চাষাবাদ করে থাকেন। শ্বশুরের কাছ থেকে আমার স্ত্রীর পাওয়া ১ একর ২০ শতাংশ জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ৮শ তেজপাতার চারাগাছ রোপণ করি। বাগান করতে খরচ হয়েছে ৫ লাখ টাকা। প্রথমবার এক লাখ টাকার পাতা বিক্রি হয়েছে। ১ কেজি কাঁচা তেজপাতা ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় বাগান থেকেই।

তবে এখানে তেজপাতা চাষ হয়, এ খবর ব্যবসায়ীরা না জানায় তার বাগান থেকে উৎপাদিত তেজপাতা বাজারজাত করতে একটু সমস্যা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা পেলে আরও ভালোভাবে চাষ করা যেতো। তবে আগামীতে বাজার পেলে বাগান আরও সম্প্রসারণ করবেন রহমত আলী।

রহমত আলীর স্ত্রী লায়লা আরজুমান বানু বলেন, তেজপাতা এত লাভজনক, তা আগে জানতাম না। আমার স্বামী রংপুর থেকে চারা এনে এ বাগান করেছেন। প্রথমেই যা খরচ হয়েছে। এখন আর তেমন খরচ নেই। শুধু পাতা কর্তন ও পরিবহন খরচ ছাড়া অন্য খরচ নেই বললেই চলে। যা লাভ আসছে, তাতে আমরা খুশি। ঝড়-বৃষ্টি-বাদলে কোনো ক্ষতি নেই।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, তেজপাতা একটি লাভজনক ফসল। একবার চারা লাগালে পরে আর তেমন খরচ নেই। তেজপাতা চাষের সাফল্য উপজেলার কৃষকের মধ্যে এনে দিয়েছে নতুন প্রেরণা। এ উপজেলার তেজপাতা এলাকার মসলার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ/২০২৩