ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: চলতি বছরে অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছেন। দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে আমন ধান। প্রতি মণ ধান বাজারে ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ধানের চড়া দামে খুশি চাষিরা।

দিনাজপুর, হিলি, বগুড়া ও নওগাঁ সহ বিভিন্ন বাজারে বতর্মানে প্রতি মণ আমন সর্বনিম্ন ৯০০ থেকে সর্বোচ্চ ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এরআগে বিভিন্ন জাতের আমন ধান গড়ে ৭০০-৮০০ টাকা দরে প্রতি মণ বিক্রি হয়েছিল।

কৃষি কর্মকর্তারা মৌসুমের শুরুতে ধানের দাম বৃদ্ধিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন । মৌসুমের শুরুতে ধানের দাম বৃদ্ধি প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষীদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। এতে যেসব কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছেন।

হিলির ছাতনি মোড়ের ধানের আড়তদার শাহ মোহাম্মদ বলেন, আমরা স্বর্ণা জাতের ধান গৃহস্থর বাড়ি থেকে কিনছি ১১২০-১১৩০ টাকায়, আর গুটি স্বর্ণা জাতের ধান কিনছি ১০১০-১০২০ টাকা মণ দরে। যদিও সরকার প্রতি মণ ধানের দাম ১ হাজার ৪০ টাকা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু বেঁধে দেয়া দামে তা কিনতে পারছি না।

আরোও পড়ুন: রাণীনগরে আমন ধানের বাম্পার ফলন

জালালপুর গ্রামের কৃষক সুজন হোসেন বলেন, বর্তমানে প্রতি মণ ধান ১ হাজার ৫০ থেকে ১১০০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারছি। এতে ধানের উৎপাদন খরচ মিটিয়ে আমাদের কিছু লাভ হচ্ছে। তবে ধানে পোকার আক্রমণ না হলে উৎপাদন আরো বাড়ত।

দিনাজপুরে এবার বিনা-৭ জাতের প্রতি মণ থান ১০৪০-১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গুটি স্বর্ণা ধান প্রতি বস্তা (৪০ কেজি) ১০৪০-১০৫০ টাকা এবং অন্যান্য জাতের ধানের প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১০১০-১০৪০ টাকার মধ্যে।

বাংলাদেশ কৃষক সমিতি দিনাজপুর জেলা কমিটির সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল বলেন, দীর্ঘদিন বঞ্চিত থাকার পর এবার কৃষকরা সরকারি দামের চেয়ে হাটে-বাজারেই বেশি দামে ধান বিক্রি করছেন।

এদিকে, উত্তরাঞ্চলের জেলা নওগাঁয় আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। জেলায় এ বছর ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৮৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৮৪ হাজার ৯৪৫ টন। এরই মধ্যে মাঠের ৫১ শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। কৃষকদের উৎপাদিত নতুন ধান জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার জানান, আমন মৌসুমের শুরুতেই বাজারে চড়া দামে ধান কিনতে হচ্ছে। গুটি স্বর্ণা ধান বর্তমানে প্রতি মণ মানভেদে ১১২০-১১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া স্বর্ণা-৫ ধান ১১৫০-১১৬০ টাকা মণ ও সম্পা কাটারি প্রতি মণ ১১৯০-১২০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

বগুড়া অটো মেজর হাসকিং ও চালকল সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, গতকাল প্রতি মণ স্বর্ণা ১০২০, জিরা শইল ১১৩০-১১৫০, রনজিত ১০৫০, খাটো বাজার (দেশী আমন) ১১৫০-১১৬০ টাকা দরে কিনেছি। গত বছর এ সময় এসব ধানের দাম গড়ে ৭০০-৮০০ টাকার মধ্যে ছিল। যদিও পরবর্তী সময়ে দাম আরো কমে ৬০০ টাকা প্রতি মণ বিক্রি হয়।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামসুল ওয়াদুদ বলেন, বাজারে আমন ধান উঠতে শুরু করেছে। তাই প্রাথমিক অবস্থায় প্রতি মণ আমন সর্বোচ্চ ১২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে ব্যাপক পরিমাণে আমন ধান উঠলে এ দাম কমে যাবে। তবে ধানের দাম বৃদ্ধিতে আমরা সন্তুষ্ট, কারণ এতে কৃষকের উপকারই হচ্ছে।

সার্বিক বিষয়ে সাবেক খাদ্য সচিব আবদুল লতিফ মণ্ডল বলেন, মৌসুমের শুরুতে ধানের দাম বৃদ্ধিকে আমি ইতিবাচকভাবেই দেখি। কারণ এখন যারা ধান বিক্রি করছেন তারা অধিকাংশই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী। বর্তমানে যে দামে ধান বিক্রি হচ্ছে তা আগামী এক মাসও যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আমাদের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষীদের উপকার হবে।

দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ দামে আমন বিক্রি, মণ ১২০০ টাকা সংবাদের তথ্য বণিক বার্তা থেকে নেওয়া হয়েছে।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ