চলতি বছরে কৃষি ঋণের

নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: চলতি অর্থবছরের (জুলাই-আগস্ট) এই দুই মাসে ব্যাংক থেকে দুই হাজার ৬৭৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা কৃষিঋণ পেয়েছেন কৃষকরা।

তবে, এই ঋণ বিতরণের হার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৭৮১ কোটি টাকা কম। অপরদিকে ২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষি বরাদ্দ আগের ২০১৯-২০ অর্থবছরের তৃলনায় বেড়েছে ১ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতে বাজেট বরাদ্দ ছিল ২১ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা।

২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং খাদ্যনিরাপত্তায় সব মিলিয়ে ২২ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়ে চলতি অর্থবছর কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২৮ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিতরণ করবে ১১ হাজার ৪৫ কোটি টাকা। আর দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিতরণ করবে ১৭ হাজার ৩৪৬ কোটি। আর অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ বা দুই হাজার ৬৭৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বিতরণ করেছে।

আগের বছরের তুলনায় এবার ঋণ গ্রহণের হার কমার কারণ হিসেবে দেখছেন করোনার ভয়াবহ আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়া। পল্লি অঞ্চলের কৃষক-উদ্যোক্তারা কাজে বের না হওয়ার কারণে ঋণও নিতে পারেননি বলে জানা গেছে। গত অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বিতরণ করা হয়েছিল তিন হাজার ৪৫৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা বা লক্ষ্যের ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আলোচ্য সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো এক হাজার ৪৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বিতরণ করেছে, যা তাদের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এছাড়া বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলো তাদের লক্ষ্যমাত্রার ৯.৩৯ শতাংশ বিতরণ করেছে, অঙ্কে যার পরিমাণ এক হাজার ৬২৯ কোটি টাকা।

চলতি বছরের আগস্ট শেষে কৃষি খাতে ঋণের বিতরণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। জুলাই-আগস্ট মাসে দুই হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা বিতরণে করলেও আদায় হয়েছে তিন হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে এই ঋণ আদায় হার ৭.৪৪ শতাংশ। বিতরণকৃত মোট ঋণের মধ্যে চার হাজার ৬৩ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে, যা বিতরণের ৮.৯৮ শতাংশ।

তথ্য বলছে, আলোচ্য সময়ে ১৫টি ব্যাংকের কৃষি খাতে ঋণ বিতরণের হার এক শতাংশেরও কম। এর মধ্যে ৮টি বেসরকারি ও ৭টি বিদেশি ব্যাংক। বেসরকারি ব্যাংকগুলো হলো এবি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স, বেঙ্গল কমার্শিয়াল, কমিউনিটি, যমুনা, মধুমতি, এনআরবি ও ইউনিয়ন ব্যাংক। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে সিটি ব্যাংক এনএ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, হাবিব ব্যাংক, এইচএসবিসি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং উরি ব্যাংক।

এদিকে কৃষিঋণ বিতরণে শীর্ষে ছিল তিনটি ব্যাংক। এগুলো হলো বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক।

এর আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিতরণ করা হয়েছে ২৫ হাজার ৫১১ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, গত অর্থবছরে ৩০ লাখ ৫৫ হাজার ১৬৬ জন কৃষিঋণ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৬ লাখ নারী ঋণ পেয়েছেন ৯ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরে কৃষি ও পল্লি ঋণ নীতিমালায় সরকার করোনা মহামারির কারণে সৃষ্ট আর্থিক সংকট মোকাবিলা ও সরকারের কৃষি ও কৃষকবান্ধব নীতির সঙ্গে মিল রেখে দারিদ্র্য বিমোচন, ক্ষুধা মুক্তি ও গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য গ্রামাঞ্চলে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বিশেষ নজর দিয়েছে।

এ নীতিমালার উল্লেখযোগ্য নতুন সংযোজিত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাণিসম্পদ খাতের পোলট্রি উপখাতের আওতায় সোনালি মুরগি পালনের জন্য ঋণের সুদহার কমানো হয়েছে। প্রাণিসম্পদ খাতের পশুসম্পদ উপখাতের আওতায় মহিষ ও গাড়ল পালনের জন্য ঋণ হার কমিয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে কৃষি খাতের জন্য প্রস্তাব করা হয় ৩ হাজার ১৯৮ কোটি টাকার প্রকল্প। সেইসাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতায় কৃষিঋণ হিসেবে দেশের কৃষকদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয় আরো ৫ হাজার কোটি টাকা। দেশের কৃষি খাতের জন্য ভর্তুকি বাবদ ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ