নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে দেশের খামারিরা ডেইরী শিল্পের উন্নয়নে ২০ দফা দাবি তুলে ধরেছেন।

আজ (১ জুন) রাজধানীর প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে খামারিরা ১৭ দফা দাবি উথাপন ও বাজেট সংশ্লিষ্টগুলো চলতি অর্থবছরেই যুক্ত করার আহ্বান জানান।

খামারিরা বলেন, দেশে ডেইরী শিল্পের অপার সম্ভাবনা থাকার পরেও নানা প্রতিবন্ধকতায় থেমে যাচ্ছে। এ শিল্পে এখন শিক্ষিত খামারিরা যুক্ত হচ্ছেন। এই সময়ে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করলে দেশে যেমন দুধের ঘাটতি পূরুণ হবে অপরদিকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটবে।

মানববন্ধনে যে ১৭ দফা দাবি তুলে ধরেছেন সেগুলো হলো:

১. দেশের হট ও হিউমিড অবাহাওয়া উপযোগী উচ্চ দুগ্ধ উৎপাদনে সক্ষম ব্রীডের বীজ সরবরাহ করতে হবে, যদি সরবরাহ না থাকে তবে আমদানী উম্মুক্ত করতে হবে।

২. ভূর্তিকী প্রাপ্ত দেশ থেকে নিম্নমানের গুঁড়া দুধ কম শুল্কে আমদানী বন্ধ করতে হবে। যদি আমদানি একান্ত প্রয়োজন হয় তবে যে দেশ থেকে আমদানি হয় ওই দেশের ভূর্তিকী হিসাব করে ট্যাক্স সমন্বয় করতে হবে বা আমাদের খামারিদের ভূর্তিকী দিতে হবে। এটি না হওয়াতে খামারিরা অসম প্রতিযোগিতায় পড়ে খতিগ্রস্ত হচ্ছে।

(ইউরোপীয় ইউনিয়ন বছরে ৫২,০০০ কোটি টাকা বা ৫ বিলিওন ইউরো, আমেরিকা প্রায় ২০,০০০ কোটি টাকা বা ২.৩ বিলিওন ডলার, কানাডা প্রায় ৮০০ মিলিওন ডলার বা ৬,৫০০ কোটি টাকা ভারত ১.৫ বিলিওন ডলার বা ১২,৮০০ কোটি টাকা ডেইরিতে ভূর্তিকী দেয়)

৩. মিল্কভিটা, আড়ং, প্রাণ, আকিজ ইত্যাদি তরল দুধ বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান যাতে নিম্নমানের ভূর্তিকী প্রাপ্ত গুঁড়া দুধ আমদানী করে তা তরল দুধে মিশাতে না পারে সে বিষয়ে কার্যকরী ব্যাবস্থা গ্রহন করতে হবে।

৪. খামারী পর্যায়ে কাঁচা/তাজা দুধ ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে সরকারি সহায়তা করতে হবে।

৫. তরল দুধ পান করার জন্য সরকারী পর্যায়ে প্রচারণা চালাতে হবে। এমনকি কিছু কিছু ডাক্তার খাঁটি দুধ এর ব্যাপারে নেগেটিভ প্রচারনা করতে দেখা যায়। এর কারন নির্ণয় জরুরি।

৬. কন্ডেন্সড মিল্কের নামে যে পাউডার ও সয়াবিন এর গাদ দিয়ে তৈরি যে বিষ ব্যাবহার হচ্ছে তা নিষিদ্ধ করা জরুরি।

৭. পশু খাদ্যের মূল্য সহনীয় করতে পশু খাদ্যের মুল্য নিয়ন্ত্রন ও শুল্কমুক্ত আমদানীর উম্মুক্ত করা।

৮. কৃষির ভূর্তিকীর মুল্যে ডেইরিতে বিদ্যুৎ বিল এর ব্যাবস্থা গ্রহন। বর্তমান এ ডেইরি তে বাণিজ্যিক হারে বিল আদায় করা হয়।

৯. দেশে পর্যাপ্ত পরিমান মানসম্পন্ন ক্ষুরা রোগের টিকা উৎপাদন ও কুল চেইন মেইনটেইন করে সারাদেশে খামারিদের মধ্যে সরবরাহ করা।

১০. ডেইরি ফার্মের রেজিষ্ট্রেশন ফী প্রত্যাহার করতে হবে। বর্তমান এ টা ২,০০০- থেকে ১০,০০০/ টাকা পর্যন্ত।

১১. ডেইরী খাতকে সকল ধরনের শুল্ক ও আয়করমুক্ত রাখতে হবে।

১২. প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রাণী সম্পদ অফিস থাকতে হবে, সেখানে ভেট ও ভিএফএ নিয়োগ দিতে হবে।

১৩. প্রাণি সম্পদ অফিস সমূহে ডেইরী বা অন্যান্য পশু পালন ও প্রযুক্তির উপর ট্রেনিং এর ব্যবস্থা রাখতে হবে।

১৪. স্বল্প সুদে ডেইরিতে পর্যাপ্ত ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ।

১৫. ডেইরি ফার্মের জন্য বিশেষ অঞ্চল ঘোষণা করে খামারীদের জমি বরাদ্দ দিতে হবে। না হয় ডেইরি শিল্প এদেশে থাকবে না।

১৬. ডেইরি সেক্টরে রেফারাল কেইস চিকিৎসার জন্য অভিজ্ঞ ডাক্তারের খুব অভাব। এটি সরকারি ভাবে নিশ্চিত করতে হবে।

১৭. প্রানিসম্পদ অধিদপ্তর এর পর্যাপ্ত অ্যাপস ভিত্তিক কন্সাল্টেন্সি নিশ্চিত করা এবং বর্তমান অ্যাপসগুলোকে আরো কার্যকর করা।

মানববন্ধনে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ইমরান হোসেন জানান, কয়েক বছর ধরে এ দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ গবাদিপশুর মাংস ও দুধ উৎপাদনে প্রচুর বিনিয়োগ করছে। তাই উৎপাদন বাড়াতে পশুখাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ ও শুল্কমুক্ত আমদানি উন্মুক্ত করতে হবে। অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল শাহ্ এমরানসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শতাধিক খামারি এতে অংশ নেন।

মানববন্ধন শেষে দরিদ্র মানুষের মাঝে গাভীর এক হাজার লিটার প্যাকেটজাত তরল দুধ বিতরণ করা হয়।