মো. তাওসিফ-উল-ইসলাম তনয়, নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কৃষি কাজের পাশাপাশি দুটি গাভী পালন করতেন মো. নজরুল ইসলাম। এতে বেশ আয় হচ্ছিলো তার। গত তিন বছরে গাভীর সংখ্যা বৃদ্ধি করেন। এখন অনেক ভালো আয় হওয়ায় সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। এভাবেই ক্ষুদ্র খামারি থেকে মাঝারি খামারীর কাতারে গেছেন তিনি।

এ খামার গড়ে তোলায় নজরুল এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। সংসারের খরচ বৃদ্ধির পরেও বেগ হতে হচ্ছে না তা সামাল দিতে। পরিশ্রম আর বিনিয়োগে ভাগ্য খুলেছে তার।

নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম আলাপকালে এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, অনেক আগে থেকেই একটা খামার করার ইচ্ছে ছিলো তার। কিন্তু নানা কারণে হয়ে ওঠে নি। ফলে খুব অল্প থেকে শুরু করেন। এখন তার মোট গাভী ও বাছুরের সংখ্যা ১২টি।

তিনি বলেন, এই খামারটি পরিচালনায় আমার স্ত্রীর (হাসিনা বেগম) ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। সংসারের পাশাপাশি কৃষিকাজ নিয়ে আমাকে বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়। আমার অনুপস্থিতিতে উনিই (স্ত্রী) সব কাজ করেন। মোটকথা আমাদের দুজনের উদ্যোগেই সম্ভব হয়েছে এই সফলতা।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা বা স্বপ্ন নিয়ে তৃণমূলের এ খামারি বলেন, সরকারি সহযোগিতা পেলে একটি আদর্শ খামার গড়ে তোলার ইচ্ছে আছে। আর যদি নাও পাই তাহলে হয়তো ধীরে ধীরে আমার এই খামারটিকে বড় করে তুলবো।

দুধ উৎপাদন সম্পর্কে তিনি জানান, শুরুর দিকে ২০ থেকে ৩০ লিটার হতো। বর্তমানে প্রায় ৮০ থেকে ১০০ লিটার হয়। বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দুধ দিচ্ছেন। আর গাভীর খাবারের ঘাস তিনি নিজেই চাষ করেন। ফলে এদিক দিয়েও অনেকটা সাশ্রয় হয় তার।

খামার পরিচালনায় কী কী প্রতিবন্ধকতা বা সমস্যায় পরতে হয় এমন প্রশ্নের উত্তরে নজরুল ইসলাম বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো গাভী বা বাছুরের কোনো রোগের সঠিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দেয়ার মতো মানুষ বা চিকিৎসক পাওয়া যায় না।

তিনি জানান, গাভীর ওলান জনিত সমস্যায় বেশি ভুগতে হয়। দেখা যায় অনেক দিন ধরে গাভী পালন করছে তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা বা পদক্ষেপ নিতে হয়। এতে অনেক সময়ে রোগের সঠিক চিকিৎসা হয় না। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে যদি কোনো বিশেষজ্ঞ এর পরামর্শ পাওয়া যেতো তাহলে খুবই ভালো হতো। শুধু তিনি নন তার মতো অনেক খামারিরা এসব সমস্যায় পরে থাকেন।

আলাপকালে প্রাণি খাতের এ উদ্যোক্তা বলেন, অনেক পরিশ্রম আর বিনিয়োগ করে দুধ উৎপাদন করার পরেও ন্যায্য দাম মিলে না। দেখা যায় যা খরচ হয় তার পুরোটা মাঝেমধ্যে উঠে আসে না। এতে ক্ষতির শিকার হতে হয়।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে একটি হোটেলে এক লিটার একটি মাম পানির বোতলের দাম ৩০ টাকা নিলো। অথচ আমাদেরও এক লিটার দুধ বিক্রি করতে হয় ৩০ টাকায়। কোনো কোনো সময়ে ৩৫ টাকা।

দিনদিন খাদ্য ও গাভী পালনের উপকরণের দাম বাড়লেও আমাদের পরিশ্রমের ফসল দুধের দাম বাড়ছে না। এদিকে সরকারের নজর দেয়া উচিত। কিন্তু শুনলাম বিদেশ থেকে গুড়া দুধ আমদানিতে সরকার শুল্ক কমিয়ে দিচ্ছে। এটি করা হলে আমাদের মতো খামারিরা আর টিকে থাকতে পারবে না। এ সিদ্ধান্ত থেকে সরকারের সরে আসা উচিত।