দুধে ব্যাকটেরিয়া থাকাটা স্বাভাবিক

নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: তরল দুধে ব্যাকটেরিয়া থাকাটা স্বাভাবিক বিষয়, ফুটানোর পর তা নি:শেষ হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের দুগ্ধ গবেষকরা।

তারা বলছেন, কাঁচা তরল দুধে বিভিন্ন ধরণের ব্যাকটেরিয়া থাকাটা খুবই স্বভাবিক একটি বিষয়। এছাড়া কিছু পরিমাণ নন-প্যাথজেনিক ব্যাকটেরিয়া পাস্তুরিত দুধে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এতে হৈচৈ করার মত কিছুই নেই।



বাকৃবির দুগ্ধ গবেষকরা বলছেন, কোন ধরনের ব্যাকটেরিয়া কি পরিমানে থাকবে তা গরুর লালন-পালন, দুগ্ধ-দোহন ও পরবর্তীতে দুধের ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি এবং পরিবেশ ইত্যাদি বিষয়ের উপর নির্ভর করে।

আর পাস্তুরাইজেশনের মূল উদ্দেশ্য হল প্যাথজেনিক (রোগ সৃষ্টিকারী) ব্যাকটেরিয়া সম্পূর্ণ ভাবে মেরে ফেলা। এই প্রক্রিয়ায় নন-প্যাথজেনিক ব্যাকটেরিয়ার প্রায় ৯০% এর বেশী ধবংস হয়।

কিছু পরিমাণ নন-প্যাথজেনিক ব্যাকটেরিয়া পাস্তুরিত দুধে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এতে হৈচৈ করার মত কিছুই নেই। গবেষকদের দেখা উচিত প্যাথজেনিক ব্যাকটেরিয়া পাস্তুরিত দুধে আছে কি না?

এখানে উল্লেখ্য যে, এ ধরণের দুধ যদি ফুটায়ে খাওয়া হয় তখন কোন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। আমাদের দেশে মানুষ প্যাকেটজাত দুধও জ্বাল দিয়ে খায়, যার ফলে কোন রকম স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে না।

ডেইরি শিল্পের বর্তমান সংকটের প্রেক্ষিতে কিছু মৌলিক বিষয় এবং আমাদের করণীয় শীর্ষক প্রবন্ধে গবেষকরা এসব তথ্য তুলে ধরেছেন।

গবেষক দলে রয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ নুরুল ইসলাম, প্রফেসর ড. মোঃ হারুন-অর-রশিদ, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সোহেল রানা সিদ্দিকী, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম, সহকারী প্রফেসর মোঃ আবিদ হাসান সরকার, লেকচারার মোঃ সাদাকাতুল বারি এবং লেকচারার মোঃ রেজওয়ানুল হাবীব।

প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে অন্যতম একটি বিষয় হলো তরল দুধের গুনগত মান। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং মাধ্যম বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য উপস্থাপন করছে।

এগুলো শুনে এবং দেখে আমাদের একই সাথে ভালো এবং খারাপ লাগার অনুভুতি কাজ করেছে। ভালো লেগেছে মানুষের সচেতনতার চর্চা দেখে। খারাপ লেগেছে অনেকের দায়িত্বশীলতার অভাব দেখে।

দুধ এমন একটি খাবার যেটি মানুষের জীবনে মায়ের কোল (জন্ম) থেকে শুরু হয়ে জীবনের শেষ পর্যন্ত অপরিহার্য (বেহেস্ত নসীব হলে মৃত্যুর পরেও চলবে)। দুধ পুষ্টি মানেও অন্য যে কোন খাবারের তুলনায় অত্যন্ত উৎকৃষ্ট।

একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ২৫০ মি.লি. দুধ পান করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ এখনো দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারেনি। দেশে চাহিদার শতকরা প্রায় ৬৩ ভাগ দুধ উৎপাদিত হয়।

দেশে উৎপাদিত তরল দুধের গুনগত মানের উপর সম্প্রতি প্রকাশিত কিছু রিপোর্টের কারনে এই শিল্পে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে যেটি বাংলাদেশের ন্যায় একটি নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশেদুগ্ধশিল্পের মত ক্রমবিকাশমান একটি শিল্পের জন্য মোটেই সুখবর নয়।

পাস্তুরিত দুধে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেশি হওয়ার অনেকগুলো কারন থাকে। তার মধ্যে প্রথম এবং প্রধান কারন হলো কোল্ড চেইনবজায় না রাখা। কোল্ড চেইন ঠিক না থাকলে ব্যাকটেরিয়া বংশবিস্তার করে ফলে দুধে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

এখন যারা দুধ নিয়ে গবেষণা/পরীক্ষা করেন উনারা যদি নমুনা সংগ্রহের বিষয়টি একটু বিস্তারিত বলেন তাহলে বুঝতে সুবিধা হয় যে সমস্যাটি কোথায় -কৃষক পর্যায়ে নাকি প্রক্রিয়াজাতকরণে নাকি বিপনন ব্যবস্থায়।

অন্যথায় এ ধরণের গবেষণা থেকে শুধুমাত্র জটিলতাই সৃষ্টি করবে যা স্থানীয় দুগ্ধশিল্পের জন্য হুমকি স্বরুপ।

ব্যাকটেরিয়া যে শুধু মানুষের জন্য ক্ষতিকর তা কিন্তু নয়। কিছু ব্যাকটেরিয়া আছে যারা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এইরকম একটি উপকারী ব্যাকটেরিয়ার দল হলো ল্যাকটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া।

দই ও ফার্মেন্টেড দুগ্ধজাতীয় দ্রব্য তৈরীতে এই ব্যাকটেরিয়াগুলো ব্যবহার করার উদ্দেশ্যই হলো উপকারী ল্যাকটিড এসিড ব্যাকটেরিয়া খাওয়া। এই কারনেই দই মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য এত ভালো।

তবে তৈরী হতে শুরু করে খাওয়া পর্যন্ত ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে এখানেও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া চলে আসতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া চিহ্নিত না করে মোট ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা দিয়ে দইকে ক্ষতিকর বলে চিহ্নিত করা যাবে না।

অনেক গবেষক দই এর মোট ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন, অথচ বিএসটিআই অনুযায়ী দই এর সর্বনিম্নের ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা প্রতি গ্রামে ১০৭সিএফইউ।

সুতরাং ভাল খারাপ ব্যাখা দেয়ার সময় অবশ্যই দুগ্ধ বিজ্ঞানীর সহায়তা নিতে হবে। অন্যথায়, মানুষের মাঝে সংশয়ের সৃষ্টি হবে।

দুধে ব্যাকটেরিয়া থাকাটা স্বাভাবিক বিষয়, ফুটানোর পর তা নি:শেষ হয়ে যায় সংবাদটির পাশাপাশি আরও পড়ুন দুগ্ধ গবেষকদের পর্যালোচনা দুধে হেভী মেটাল সনাক্ত হলেই খাওয়া যাবে না এটা ঠিক নয়