পোল্ট্রি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বাড়িতে খুব বেশি মুরগি পালন করা হয় না। ১০-১৫টি মুরগি বাড়ির উচ্ছিষ্ট খাবার, পোকামাকড়, কেঁচো, কচি ঘাসপাতা খেয়ে বড় হয়। তেমন চোখে লাগা খরচ হয় না বলে প্রায় বাড়িতেই মুরগি পালন করা হয়ে থাকে। তবে, এসব দেশি মুরগি পালনে যেসব যত্ন নিতে হবে জেনে থাকা জরুরি।

বাড়িতে পোষা এসব মুরগি পালনে অনেক ঝামেলাও থাকে। অপরের বাড়িতে পেড়ে আসে, কখনও রোগে মারা যায়। আবার শেয়াল, কুকুরে খেয়ে ফেলে। সবমিলিয়ে দেশি মুরগি পালন লাভজনক। তারপরেও নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার, সে জাত নির্বাচনেই হোক বা রোগ পরিচর্যায়।

প্রথমে আসি মুরগির জাতে। ব্রয়লার খামারের হাইব্রিড মুরগি উঠোনে ছেড়ে পালন করা যায় না। তাই খাঁটি জাতগুলোকে বাছতে হবে। যেমন, রোড আইল্যান্ড রেড (আরআইআর) বা ব্ল্যাক অস্ট্রালর্প। রাঙ্গামাটি ও মৌলভীবাজার অঞ্চলের রেড জাঙ্গল ফাউল (বন মোরগ)। সিলেটের পাহাড়ি এলাকার হিলি, নেকেড নেক (গলা ছিলা), ফ্রিজেল (উল্টা পালক)। সিলেট সমতলের আচিল ও কাদাকনাথসহ অনেক ক্রসব্রিডিং মুরগি রয়েছে যা বাড়িতে পালন করা যায়।

আরোও পড়ুন: ব্রয়লার মুরগি পালনে ১-৩২ পর্যন্ত ভ্যাকসিনের শিডিউল

মুরগির লালা ঝরে মারা যাওয়ার কারণ ও চিকিৎসা

মুরগি রাতে রাখার জন্য ঘর বানাতে হবে। মাটি থেকে সামান্য উপরে বাঁশ বা কাঠ দিয়ে কম খরচে খড় বা টালি ঢেকে তৈরি ঘরগুলো যেন শুকনো, পরিষ্কার হয়। আর আলো-বাতাস খেলে। প্রতিটি পাখির জন্য গড়ে তিন বর্গফুট জায়গা ধরতে হবে।

উন্নত জাতের মুরগির পুরো উৎপাদন ক্ষমতা কাজে লাগাতে অল্প পরিমাণে সুষম খাবার দেওয়া প্রয়োজন। চালের গুঁড়ো (৩০০ গ্রাম), খুদ বা গম ভাঙা (২৮০ গ্রাম), সর্ষে/ তিল খোল ( ২০০ গ্রাম), মাছ বা সোয়াবিন গুঁড়ো (২০০ গ্রাম), ভিটামিন ও খনিজ লবণ মিশ্রণ যেমন সাপ্লিভিট এম (২০ গ্রাম) মিশিয়ে মুরগির সংখ্যা অনুযায়ী মাথা পিছু ৫০-৭০ গ্রাম হিসাবে অর্ধেক সকালে ও অর্ধেক বিকালে খেতে দিতে হবে।

আবার রাতে মুরগি রাখার যে ঘর আছে, সেখানে নির্দিষ্ট পাত্রে পানি ও খাবার দিতে হবে। যাতে সকালে ঘর থেকে বেরনো বা পরে ঘরে ঢোকার সময় ওই খাবার ও পানি খাওয়া অভ্যাস তৈরি হয়। এই অভ্যাস থাকলে ওষুধ গুলে খাওয়াতে সুবিধা হয়। মুরগির খাবার সবসময় শুকনো ও পরিষ্কার রাখতে হবে। বেশি দিন জমা রাখলে ছত্রাক সংক্রমণ ঘটে।

সংকরায়ণ পদ্ধতিতে দেশি মুরগির সঙ্গে উন্নত মোরগ রেখে প্রাকৃতিক প্রজনন ঘটিয়ে দেশি মুরগির জিনগত উৎকর্ষতা বাড়ানো যায়। প্রতি ১০টি দেশি মুরগি পিছু ১টি উন্নত জাতের মোরগ রাখতে হবে। যে সংকর মুরগি জন্মাবে, তা দেশি মুরগির চেয়ে দ্রুত (৪-৫ মাস বয়সে) এবং প্রায় দ্বিগুণ (বছরে ১২০-১৪০টি) ডিম দেবে।

আরোও পড়ুন: মুরগির পায়খানা দেখে রোগ নির্ণয় পদ্ধতি

মুরগির মাথা ফোলা রোগের চিকিৎসা

রোগব্যাধি মুরগি পালনের অন্যতম সমস্যা। তাই নিয়মিত মুরগির ঘর চুন বা জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। প্রতি মাসে একবার করে কৃমিনাশক ওষুধ (পাইপেরাজিন তরল বয়স অনুযায়ী ০.৫-১ মিলি) পানিতে গুলে খাওয়াতে হবে। রানিক্ষেত বা বসন্তের মতো কয়েকটি সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত টিকা জরুরি। টিকা দেওয়ার দশ দিন আগে কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে।

টিকাকরণ বিশেষত রানিক্ষেত টিকা ৭-১০ দিন বয়সে নাকে বা চোখে এক ফোঁটা, ৩০ দিন বয়সে আর এক বার, ২ মাস বয়সে প্রথম কৃমির ওষুধ এবং আড়াই মাস বয়সে ডানার তলায় ০.৫ মিলি ইঞ্জেকশন অবশ্যই নিতে হবে। ঝিমুনি, সর্দি, শ্বাসকষ্ট, পাতলা বা রক্ত পায়খানা নজরে এলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাকট্রিম ডিএস বা সেপম্যাক্স (১টি বড়ি ১০টি বড় বা ২০টি বাচ্চা মুরগির জন্য) খাবারে বা জলে গুলে ড্রপারে করে খাইয়ে দিতে হবে (৩/৫/৭ দিন)।

দেশি মুরগি পালনে যেসব যত্ন নিতে হবে সংবাদের তথ্য আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে নেওয়া হয়েছে।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ