ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণ দেশী আলুর চাষ হয়। যা মোট উৎপাদনের ৩২ভাগ। যে আলু চাষ হয় তা আধুনিক জাত অপেক্ষা ফলন কম (হেক্টরপ্রতি গড়ে ৭.৮ টন)। দেশী আলুর উৎপাদন বৃদ্ধিতে কিছু কৌশল অবলম্বন করলে হেক্টরপ্রতি ২০-২৫ টন ফলন পাওয়া যেতে পারে৷

প্রথমেই জেনে নিই উৎপাদন পদ্ধতি :

  • আলুর জাত : লাল পাকড়ি, লাল শীল, চল্লিশা, শিল বিলাতী, দো হাজারী ইত্যাদি৷
  • নিরোগ গাছ থেকে মাঝারি আকারের বীজ সংগ্রহ করে হিমাগারে সংরক্ষণ করতে হয়৷
  • নির্বাচন করে উপযুক্ত জমি ভালোভাবে চাষ দিয়ে আলু লাগাতে হবে৷

বপনের সময় : কার্তিক মাসে (মধ্য-অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর) আলু লাগাতে হয়৷
বীজের হার : হেক্টরপ্রতি (মাঝারি আকারের আলু) ১ টন৷
বপন পদ্ধতি : সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০ সেন্টিমিটার এবং গাছের দূরত্ব ২০ সেন্টিমিটার রাখতে হবে৷ বীজ ৪-৫ সেমি মাটির গভীরে বপন করে ভেলি তৈরি করতে হবে৷

দেশি জাতের আলুতে সারের পরিমাণ :

সারের নাম  সারের পরিমাণ/হেক্টর    সারের পরিমাণ/শতাংশ
ইউরিয়া     ২২০ – ২৫০ কেজি    ঌ০০ গ্রাম – ১ কেজি
টিএসপি     ১৩০ – ১৫০ কেজি    ৫০০ – ৬০০ গ্রাম
এমপি     ২৩০ – ২৫০ কেজি    ঌ০০ গ্রাম – ১ কেজি
জিপসাম    ১১০ – ১৩০ কেজি     ৪৫০ – ৫৫০ গ্রাম
জিঙ্ক সালফেট     ১২ – ১৬ কেজি    ৫০ – ৬৫ গ্রাম
বরিক এসিড    ৫ – ৭ কেজি    ২০ – ৩০ গ্রাম

দেশি জাতের আলুতে সার প্রয়োগ পদ্ধতি : বপনের সময় অর্ধেক ইউরিয়া জমিতে প্রয়োগ করতে হবে৷ বপনের ৪০-৪৫ দিন পর বাকি অর্ধেক ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করে ভেলিতে মাটি উঠিয়ে জমিতে সেচ দিতে হবে৷ প্রয়োজনে ৩-৪ বার সেচ দিতে হবে৷ ইউরিয়া এবং এমপি সার উপরি প্রয়োগের পর সেচ দিয়ে কচুরীপানা অথবা খড়কুটা দিয়ে মালচ করে দিতে হবে৷

বিনা চাষে আলু উৎপাদন

বাংলাদেশের নিচু জমিতে বিনা চাষে আলু উৎপাদন করা যায়৷ এ পদ্ধতিতে বীজ আলু সামান্য ঢেকে অথবা মাটিতে ৬০ সেমি (২৫ সেমি দূরত্বে রোপণ করতে হবে৷ রোপণের পর আলুর সারি কচুরীপানা অথবা খড় ১৭-২০ সেন্টিমিটার পুরু করে ঢেকে দিতে হয়৷ এতে মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকবে৷ এক্ষেত্রে কাটা আলু ব্যবহার করা নিরাপদ নয়৷ এভাবে আলু উত্ পাদনের তেমন পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না৷ এ পদ্ধতিতে আলু সাধারণত মাটির উপরই উৎপন্ন হয়৷ এ পদ্ধতিতে কার্ডিনাল, ডায়ামন্ট প্রভৃতি উচ্চ ফলনশীল জাত ব্যবহার করতে হবে৷

সারের পরিমাণ : বিনা চাষে আলু উত্ পাদন করতে হলে জমিতে নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করতে হবে –

সারের নাম    সারের পরিমাণ/হেক্টর    সারের পরিমাণ/শতাংশ
ইউরিয়া     ৩২০ – ৩৪০ কেজি    ১৩০০-১৪০০ গ্রাম
টিএসপি     ১ঌ০ – ২২০ কেজি    ৭৭০-৮ঌ০ গ্রাম
এমপি     ২০ – ৩০ কেজি    ৮০-১২০ গ্রাম

সার প্রয়োগ পদ্ধতি : রোপণের সময় পূর্বে সার প্রয়োগ করতে হবে৷ বীজ আলু রোপণ করে সারির উভয় পার্শ্বে লাইন টেনে তাতে সার ব্যবহার করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়৷ প্রচলিত পদ্ধতিতে আস্ত ছোট ছোট বীজ আলু ব্যবহার করা উত্তম৷

সতর্কতা :
১৷ জমিতে রস বেশি থাকলে বীজ আলু মাটির বেশি গভীরে রোপণ করা উচিত নয়৷
২৷ মালচিং ব্যবহার করার ফলে ইঁদুরের আক্রমণ বেশি হতে পারে৷ তাই যথাসময়ে ইঁদুর দমনের ব্যবস্থা করতে হবে৷

আলুর বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি:

উন্নত মানের আলুর বীজ উৎপাদনের জন্য নিম্নরূপ পদ্ধতি অবলম্বন করা যায় –
১৷ রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে৷
২৷ কার্তিক (মধ্য-অক্টোবর থেকে নভেম্বর) মাসে আগাম জাতের আলু লাগাতে হবে৷
৩৷ পাতা গজানোর পর থেকে আলু তোলার ১৫ দিন পূর্ব পর্যন্ত ৭-১০ দিন পর পর জাবপোকা দমনের জন্য  ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে৷ ডাইমেক্রন এবং অন্য অনুমোদিত  ওষুধ ১ মিলিমিটার ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে৷
৪৷ নিয়মিতভাবে ১ দিন পর পর রোগাক্রান্ত বা অস্বাভাবিক গাছ আলু তুলে ফেলতে হবে (রগিং)৷
৫৷ আলু তোলার ৭-১০ দিন পূর্বে মাটির উপরের গাছ উপড়ে বা কেটে ফেলতে হবে৷
৬৷ আলু ৭০-৮০ দিন বয়স হলে তুলে পরিপক্বতা দেখা উচিত৷
৭৷ মড়ক, জাব পোকা বা অন্য কোনো রোগ দেখা দিলে আরো আগে আলু তুলে ফেলতে হবে৷ লক্ষ্য রাখতে হবে প্রতি ১০০টি আলুর পাতায় যেন ২০টির বেশি ডানাবিহীন জাবপোকা না থাকে৷
৮৷ জাব পোকার চূড়ান্ত আক্রমণের পূর্বেই গাছ কেটে ফেলতে হবে অর্থাৎ মাঘ মাসে (জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ)৷
ঌ৷ অন্যান্য আলু ফসল যেমন মরিচ, টমেটো, তামাক ইত্যাদি সোলানেসি গোত্রভুক্ত গাছ থেকে বীজ আলু ফসল অন্তত মিটার দূরে লাগাতে হবে৷

দেশী আলুর উৎপাদন বৃদ্ধিতে উপরোক্ত কৌশল জানা থাকলে আলু চাষে লাভবান হওয়া যায়।