মো আমান উল্লাহ, বাকৃবি: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সার্জারি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগের আয়োজনে দেশে প্রথমবারের মতো ‘গবাদি পশুর ভ্রুণ উৎপাদন ও স্থানান্তর’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হয়েছে।

রবিবার (৬ নভেম্বর) সকাল দশটার দিকে সার্জারি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগের সম্মেলন কক্ষে তিন দিনব্যাপী ওই প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠিত হয়।

দ্যা অর্গানাইজেশন ফর উইমেন ইন সায়েন্স ফর দ্যা ডেভেলপিং ওয়ার্ল্ড (ওডব্লিউএসডি) এবং ইউনেস্কোর অর্থায়নে ‘বাংলাদেশের দেশি গাভীতে ভ্রুণ স্থানান্তরের পরে প্রাপকের গ্রহণযোগ্যতা এবং গর্ভধারণকে অনুকূল করা’ শীর্ষক সাব-প্রকল্পের অধীনে এ প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

সার্জারি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগের প্রধান ড. জয়ন্ত ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভেটেরিনারি অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আউয়াল। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ডা. গোলাম মোস্তফা ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমন্বয়ক সার্জারি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. নাছরীন সুলতানা জুয়েনা।

তিন দিনব্যাপী (৬, ৭ ও ৮ নভেম্বর) প্রশিক্ষণ কর্মশালায় পাঁচটি তত্ত্বীয় ও পাঁচটি ব্যবহারিক ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে। দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ভেটেরিনারিয়ান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীসহ মোট ২৫ জন প্রশিক্ষণার্থী এতে অংশগ্রহণ করছেন। গাভীর ভ্রুণ স্থানান্তর গবেষণা কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত বাকৃবির গবেষকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ অ্যানিমেল ফার্মে প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করবেন ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, শিক্ষকতার পাশাপাশি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা নিঃসন্দেহে একটি মহৎ কাজ। বর্তমান সময়ে কৃত্রিম প্রজনন একটি আধুনিক প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে গবাদি পশুর উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। আশা করি প্রশিক্ষণ কার্যক্রমটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।

প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. নাছরীন সুলতানা জুয়েনা বলেন, স্বল্পতম সময়ে উচ্চ গুণসম্পন্ন অধিক সংখ্যক গবাদি পশুর বাচ্চা উৎপাদন এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে জাত উন্নয়নের মাধ্যমে দ্রুত দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ গবেষণা করা হয়। সাধারণত গাভী বছরে একটি বাচ্চা প্রসব করতে পারে।

কিন্তু প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় একটি নির্বাচিত উন্নত জাতের গাভী থেকে প্রজননের মাধ্যমে বছরে ২৫ থেকে ৩০টি উচ্চগুনসম্পন্ন ভ্রƒণ উৎপাদন করা সম্ভব এবং যার মাধ্যমে প্রথমবারেই ভ্রুণ প্রতিস্থাপন করে সাধারণ গাভী থেকে উন্নত জাতের বাছুর উৎপাদন করা যেতে পারে। এতে করে একজন খামারি অতি অল্প সময়ে গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন করতে পারবেন।

তিনি আরো বলেন, শুক্রাণুর তুলনায় ভ্রুণ দীর্ঘদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এই পদ্ধতিতে উৎপাদন খরচ তুলনামূলক বেশি হলেও বাড়তি উৎপাদনে অধিক লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকবে। প্রান্তিক পর্যায়ে খামারিদের কাছে এই প্রযুক্তিটি পৌঁছে দিলে অধিক মাংস ও দুধ উৎপাদন করে লাভবান হবেন তারা। এছাড়া জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, পশুর জাত উন্নয়ন ও প্রজননে অক্ষম গাভীর জন্য এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ