মালিকুজ্জামান কাকা, যশোর: যশোরের চৌগাছা উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ৮০ হেক্টর জমিতে মেটে আলু চাষ হচ্ছে। আবহাওয়া মেটে আলু চাষের উপযোগী হওয়ায় অধিক ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা। ভালো ফলন হলে বিঘা প্রতি ১ লাখ হতে দেড় লাখ টাকার আলু বিক্রি করা সম্ভব বলে জানাচ্ছেন কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার নিচু এলাকা ছাড়া প্রায় সব এলাকায় কমবেশি মেটে আলুর চাষ হয়েছে, যার পরিমাণ ৮০ হেক্টর জমি। কৃষকেরা মূলত দেশিয় নানা জাতের মেটে আলু চাষ করেন

উপজেলার মির্জাপুর, জগদীশপুর, স্বর্পরাজপুর, তেহরি, মুক্তদাহ গ্রামের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকেরা ব্যাপকভাবে মেটে আলুর চাষ করেছেন। অধিকাংশ জমিতে মাচায় চাষ করা হয়েছে। তবে এর জন্য নতুন করে কোনো মাচা তৈরি করতে হয়নি কৃষকের। মেটে আলু বপনের আগে ওই জমিতে ঝিঙে কিংবা উচ্ছে মাচায় চাষ করেছেন। এসব ফসল উঠে যাওয়ার পর মেটে আলু লতানো গাছ সেই মাচায় উঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

পড়তে পারেন: পদ্মার চরে মিষ্টি আলু চাষ, দ্বিগুণ লাভের আশা চাষিদের

বর্তমানে প্রতিটি মাচায় মেটে আলুর সবুজ পাতা আর সাপের মত আঁকাবাকা লতা এক অপরুপ সৌন্দর্য বহন করে চলেছে। মেটে আলু দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে পরিচিত, যেমন গড় আলু, মেটে আলু, গুইচ্যা আলু, লেমা আলু, ধুসড়ী আলু, আলতাপাট, চুবড়ি আলু, হরিণখালি, মাছরাঙ্গা, হাতিপায়া, মৌ প্রভৃতি নামে পরিচিতি লাভ করলেও মূলত ৪ থেকে ৫টির মত জাত আছে বলে জানা গেছে।

উপজেলার জগদীশপুর গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান বলেন, প্রায় এক দশক ধরে এ অঞ্চলের কৃষকেরা ফসলের জমিতে মেটে আলুর চাষ করেন এবং ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন। এবছর তিনি ১ বিঘা জমিতে মেটে আলু চাষ করেছেন। কৃষক মজিবরের মত ওই মাঠে রেজাউল করিম ১০ কাঠা, সেলিম রেজা ১০ কাঠা, জমশের আলী ১ বিঘা, গোলাম আলী ১০ কাঠা, আনিছুর রহমান ১৫ কাঠা, সুলতান হোসেন ১০ কাঠা জমিতে মেটে আলুর চাষ করেছেন।

পড়তে পারেন: মিষ্টি আলুর নতুন জাত ‘অরেঞ্জ স্টার’ চাষ হবে দেশেই

কৃষকরা বলেন, বাংলা সনের বৈশাখ কিংবা জ্যৈষ্ঠ মাসে জমিতে মেটে আলুর বীজ বপন করতে হয়। ওই সময়ে জমিতে উচ্ছে কিংবা ঝিঙের চাষ থাকে। এই ফসল মরে যাওয়ার সাথে সাথে মেটে আলুর লতা মাচায় (বানে) উঠিয়ে দিতে হয়। কোন সার বা বিষ ছাড়াই শীতের শুরুতে আলু উঠতে শুরু করে।

পোকা মাকড়ের উৎপাত কম সে কারণে কীটনাশক ব্যবহার করা লাগে না। বলাচলে বিনা খরচে ৫ থেকে ৬ মাসে কৃষক এই ফসলের টাকা হাতে পায়।

ভালো ফলন হলে বিঘা প্রতি ১ লাখ হতে দেড় লাখ টাকার আলু বিক্রি করা সম্ভব। আলু উঠে গেলে ওই জমিত বোরো ধান কিংবা মসুরের চাষ করা হয় বলে তারা জানান। মুলত তিনটি জাতের মেটে আলু এখানকার জমিতে বেশি ফলন দেয়।

সেগুলো হলো গাড়ললতা, মুন্সি, হরিণ প্লে ও মাচরাঙ্গা। তবে হরিণ প্লের চেয়ে মাচরাঙ্গা ও গাড়ললতার চাষ বেশি। এ অঞ্চলের কৃষক জানান, আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ১ বিঘা জমি থেকে ৮০ থেকে ১০০ মন আলু উৎপাদিত হয়। প্রতি কেজি আলুর স্থানীয় বাজার দর ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। বলা চলে বিনা খরচে অধিক লাভবান হচ্ছে চাষিরা। তাই দিন দিন মেটে আলুর চাষের দিকে চাষিরা আগ্রহ হচ্ছেন।

কৃষকরা বলেন, মেটে আলুর চাষে কোন খরচ নেই বললেই চলে। কেননা আলু চাষের আগে ওই জমিতে মাচা করে ঝিঙা, উচ্চে কিংবা পটোলের চাষ করা হয়। সেই ফসল নষ্ট হওয়ার আগেই জমিতে আলুর বীজ বপন করি। সে কারনে বাড়তি কোন খরচ করতে হয় না।

সুতারং এর চাষ বিষয়ে একটু সচেতন হলেই সবজির ঘাটতি মেটাতে, বাড়ির আশপাশে পরিত্যাক্ত স্থানের সঠিক ব্যবহার করতে, বালাইনাশক ব্যবহার ছাড়াই এর চাষ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।

মেটে আলু ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের ভালো উৎস। এ ছাড়া প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম ও সোডিয়াম রয়েছে এতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আলু শরীরের ভেতরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। আলুতে থাকা ভিটামিন-সি ও ভিটামিন-বি আমাদের শরীরের দূর্বলতা সরাতে সাহায্য করে। আলুতে কোন চর্বি বা ফ্যাট নেই বললেই চলে।

অথচ এতে আছে লোহ ও ক্যালসিয়ামের মত খনিজ উপাদান। এই দুটি খনিজ উপাদান হার্টের অসুখ প্রতিরোধে সাহায্য করে। আলুতে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম থাকায় এটি শরীরের উচ্চ রক্তচাপ কমাতে দারুন ভাবে সাহায্য করে। আলুকে বলা হয় স্কার্ভি ও রিউমেটিক প্রতিরোধক। আলুর প্রোটিন কিডনি রোগীদের জন্য উপকারী। শিশুদের জন্য আলু খুবই সহায়ক খাদ্য।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সমরেন বিশ্বাস বলেন, মেটে আলু চাষে ব্যয় ও পরিশ্রম দুটোই অন্য যে কোন ফসলের চেয়ে কম। সে কারণে দিন দিন কৃষকের কাছে মেটে আলুর চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ এলাকায় দেশি নানা জাতের মেটে আলুর চাষ হয় বলে তিনি জানান।