শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ই শাওয়াল ১৪৪৫

পদ্মার চরে মিষ্টি আলু চাষ, দ্বিগুণ লাভের আশা চাষিদের

প্রচ্ছদ, বিভাগ: ফসল, বিশেষ প্রতিবেদন, রাজশাহী, প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২১, মঙ্গলবার  

আমানুল হক আমান, বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার চর জুড়ে মিষ্টি আলু চাষ করা হয়েছে। এসব মিষ্টি আলুতে দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন চাষিরা। এ আলু স্থানীয়ভাবে চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেট, গাজিপুর, টাংঙ্গাইল, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার পদ্মার চকরাজাপুরসহ ১৫টি চরে অগ্রাহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহে থেকে শুরু হয় মিষ্টি আলুর চারা বপন। ফাল্গুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে থেকে মিষ্টি আলু মাটির নিচে পরিপক্ক হয় এবং আগাম জাতের আলু তোলা শুরু হয়। চৈত্র ও বৈশাখ মাসে পুরোপুরি আলু তোলার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়বে চাষিরা।

উপজেলার চকরাজাপুর, কালিদাসখালী চরে গিয়ে দেখা গেছে, খেতজুড়ে আবাদ করা হয়েছে মিষ্টি আলু। তবে কেউ কেউ আগাম জাতের আলু কোদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে আলগা করে তোলা শুরু করেছে।

কালিদাসখালী চরের কৃষক মেহেদী হাসান এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, এ মৌসুমে দুই একর জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করেছি। প্রতি একরে ২৫০ মণ ফলন আশা করেন। গত বছর প্রতি মণ মিষ্টি আলু পাইকারি ৪০০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি করছি। দুই একর জমিতে চারা বপন ও আলু তোলা পর্যন্ত মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। বিক্রি দেড় লক্ষ টাকা আশা করছেন।

এ চরে আগে কোন আবাদ হতো না। বর্তমানে আলুর চাষ করছি। তবে এ আলু বিক্রি করতে কোনো কষ্ট করতে হয় না। দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে জমি থেকে আলু তোলার পর নিয়ে যায়।

বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি পদ্মার চরে বিদ্যুতের আলোর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। পাশাপাশি একটি হিমাগাগের ব্যবস্থা করলে আলুগুলো হিমাগারে রেখে পরে বিক্রি করতে পারলে লাভ আরো বেশি হতো। পচনের ভয়ে কম দামে বিক্রি করে দিতে হয়।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ শফিউল্লাহ সুলতান এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, এ বছর মিষ্টি আলু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় মিষ্টি আলুর বাম্পার ফলন আশা করছি। চলতি মৌসুমে ৩৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলুর চাষ হয়েছে। স্থানীয় জাতের পাশাপাশি হাইব্রিড জাতের মিষ্টি আলুর চাষ করেছেন চাষিরা।

তীব্র ক্ষরায় ঝরে পড়ছে আম-লিচুর গুটি

মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক: আম-লিচুর ফলন নির্ভর করে প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর। তীব্র ক্ষরা ও বৃষ্টি না হওয়ায় লিচুর জন্য তৈরি হয়েছে বৈরি আবহাওয়া। এবার রাজশাহীতে তুলনামূলক লিচুর মুকুল ও গুটি কম ধরেছে। যেসব গাছে গুটি ধরেছে সেসবও তীব্র ক্ষরায় ঝরে পড়ছে।

চাষিরা গতবছরের আম্ফান ঝড়ে লিচুতে বেশ ধরা খায়। এবার সেসব বাগানে গাছে গাছে নতুন পাতা গজিয়ে গাছগুলো বেশ হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে। কিন্তু লিচুর দেখা নেই। কিছু গাছে গুটি আসলেও ঝরে পড়ায় চাষিরা এখন ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। দীর্ঘদিন বৃষ্টির দেখা না থাকায় বাগানে সেঁচ দিয়েও কাজে আসছে না। ফলে লিচুর গুটি ঝরে যাওয়ায় লিচু উৎপাদন নিয়ে বেগ পেতে হতে পারে এমনটাই আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আজ শনিবার (৩ এপ্রিল ২০২১) জেলার ছোট বনগ্রাম ও বড় বনগ্রাম এলাকার ৮-১০ জন লিচুচাষির সাথে কথা হয়। এসব চাষিরা জানান, গতবছরে আম্ফান ঝড়ে লিচুর ক্ষতি হয়েছে। লোকসান গুণতে হয়েছে চাষিদের। আগাম জাতের লিচু বাজারে বিক্রি করার সুযোগ মিললেও বেশিরভাগ চাষি ধরা খায়। দীর্ঘ ১ বছর পেরিয়ে এবছরও গাছে মুকুল আসেনি। যেসব গাছের এসেছে আবহাওয়া রুক্ষ ও মাটি শুকনো হওয়ায় লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে। ভুক্তভোগী চাষিদের ধারণা, ক্রমাগত আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেই গাছ থেকে গুটিগুলো ঝরে পড়ছে।

নগরীর বড় বনগ্রাম চকপাড়া গ্রামের লিচুচাষি সাহাবির রহমান বলেন, আমার ৪টি বাগান ইজারা নেওয়া আছে। গত বছরে ভুল কীটনাশক দিয়ে লিচুর বেশ ক্ষতি হয়েছিল। এছাড়া লিচু গাছে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বোম্বাই ও দেশী জাতের মোট ২০ বিঘা লিচুর বাগান আছে। ৯বিঘায় ৮১ টি গাছের মধ্যে হাতেগুণা ৪-৫টি গাছে লিচু এসেছে। তারমধ্যে আবহাওয়ার কারণে ঝরে যাচ্ছে। এবার লাখ-দেড়েক টাকা লোকসান হবে।

প্রতিটি মাঝারি গাছে ফসফেট,পটাশ, জিঙ্ক, বোরণ, জিপসাম মিলিয়ে ৫ কেজি করে সার দিতে হয়। লিচু সংগ্রহের পর থেকে গাছের যত্ন করে গাছ ভালো রাখতে হয়। চাষ দিয়ে আগাছা পরিস্কার করতে হয়। পরিশ্রম করেও লিচু আসলো না। বোম্বাই লিচু এক বছর আসলে পরের বছর আর ধরে না। কিন্তু দেশী গুটি জাতের লিচু প্রতিবছর ধরে। আমার কোনটাই হলো না। কিছু করার নাই, আল্লাহ ভরসা।

ছোট বনগাম এলাকার লিচুচাষি হান্নান বলেন, গত বছরে প্রতিটি গাছে গোড়া থেকে গাছের আগা পর্যন্ত লিচু এসেছিল, এবার বাগান ফাঁকা। বিভিন্ন জায়গায় লিচুর বাগানে তুলনামূলক কম লিচু এসেছে। সপ্তাহখানেক আগেও গাছগুলোর গুটি কম ঝরে পড়ছে। তাপমাত্রা আরো বাড়ার কারণে অনেক বেশি ঝরছে। তবে, তীব্র ক্ষরা ও বৃষ্টি না হওয়ার কারণে ঝরে পড়ছে বলে ধারণা এই চাষির।

বাগমারার তাহেরপুর পৌর সদর এলাকার চাষী শামীম রেজা জানালেন, ‘এ বছর এ পর্যন্ত যে পরিমাণ গুটি আছে তা গতবারের চেয়ে কম। আবহাওয়া তেমন ভালো না, বৃষ্টিপাত নাই। সামনে আবার কালবৈশাখী ঝড় আছে। ঝড়ের পর আসলে বোঝা যাবে কি হবে।’

বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম এলাকার আম ব্যবসায়ী ও আম চাষী জিল্লুর রহমান জানান, ‘আমি প্রতিবছরই আম চাষ করি। এবার আমের ভালো গুটি আছে। আমরা চাষীরা মুকুল আসার আগে থেকেই গাছের পরিচর্যা করছি। এখন বর্তমানে গুটির পরিচর্যা চলছে। গাছের গুটি কীটনাশক ও বিভিন্ন ধরনের বালাইনাশক দিয়ে ধুয়ে দিচ্ছি। তারপরেও তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় গুটি ঝরছে।

জেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় বেশি চাষ হয় আম। কিছু কিছু জায়গায় বাণিজ্যিকভাবে লিচুর চাষ হচ্ছে। বর্তমানে জেলায় চলতি মৌসুমে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমি। গত বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ৫৭৩ হেক্টর জমি। বেড়েছে ৩৭৩ হেক্টর জমি। আর এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ১১ দশমিক ৯ মেট্রিক টন। অপরদিকে জেলায় লিচু চাষ হয়েছে ৫১৯ হেক্টর জমিতে। এ থেকে মোট লিচু উৎপাদন ধরা হয়েছে ২ হাজার ৯৬৬ মেট্রিকটন।

মৌসুমে আম- লিচুর ফলন নির্ভর করে মূলত প্রাকৃতিক পরিবেশ ও পরিচর্যার ওপর। গতবারের তুলনায় এবার গাছে মুকুল ভালোই আছে। গাছে গাছে আম- লিচুর গুটি দেখা দিয়েছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে অধিকাংশ গাছ থেকেই গুটি ঝরে পড়ছে। এক সপ্তাহ ধরে এই অবস্থা। এ কারণে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন আম-লিচু চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. আউয়াল এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, দীর্ঘ ৫ মাস ধরে বৃষ্টি নাই। মাটিতে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। তাপমাত্রা প্রায় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। অতিরিক্ত ক্ষরার কারণে আম-লিচুর গুটি ঝরে যেতে পারে। বাগানে মাটিতে জো-হারিয়ে মাটি শুকিয়ে গেলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য জেলার আম- লিচু চাষিদের নানা ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। হটাৎ করে বৃষ্টি হলেও গুটি ঝরে যায়।আবার সেঁচ দিলেও গুটি ঝরে যেতে পারে। এক্ষেত্রে চাষিদের করণীয় হলো, থেমে থেমে সেঁচ দেওয়া। মাটিতে হারানো জো-ফিরিয়ে আনতে অল্প-অল্প করে ২-৩ দিন পর পর কয়েকটা সেঁচ দিতে হবে। মাটিতে জো আসলেই গুটি ঝরা রোধ হবে। আপাতদৃষ্টিতে গুটি ঝরে যাচ্ছে বলে মনে হলেও তেমনটা হয় না। প্রতি মুকুলে ১০-১৫টি গুটি আসলেও ১-২টি ফল হৃষ্টপুষ্ট হয়। সেটিই আমে পরিণত হয়। তাই চাষিদের এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া ঠিক হবে না।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ

x