নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দ্বিতীয় ধাপে ২ লাখ খামারি ২৯২ কোটি টাকার প্রণোদনা পাবে বলে জানিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, “করোনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের ক্ষতিগ্রস্ত ৪ লক্ষ খামারিকে ৫৫৪ কোটি টাকা নগদ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আরো ২ লক্ষ খামারিকে ২৯২ কোটি টাকা প্রণোদনা দেওয়া হবে। এটি যাচাই-বাছাই চলছে। এটি ঋণ নয়। ছোট ছোট প্রান্তিক খামারিরা যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সে জন্য এ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।”

পড়তে পারেন: অভিনব কায়দায় অর্থ আত্মসাৎ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার

মন্ত্রী বলেন “করোনাকালে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। মানুষের পুষ্টি ও আমিষের প্রয়োজন মেটাতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দপ্তর কাজ করছে। কোভিড-১৯ মহামারির প্রথম পর্যায়ে খামারিদের উৎপাদিত দুধ, ডিম, মাছ, মাংস তাদের মাধ্যমে, গ্রুপভিত্তিক ভ্রাম্যমান টিম গঠন করে এবং ক্ষেত্র বিশেষে মন্ত্রণালয়াধীন দপ্তর-সংস্থার মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে এ জাতীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। গতবছর প্রায় ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকার পণ্য ভ্রাম্যমান ব্যবস্থায় বিক্রয় করা হয়েছে। এতে উৎপাদক ও খামারি এবং একইসাখে ভোক্তারা উপকৃত হয়েছে।

রবিবার (০৯ মে) রাজধানীর সচিবালয়ে নিজ দপ্তর কক্ষে করোনা সংকটে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গৃহীত কাযর্ক্রম ও সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

পড়তে পারেন: খামার নেই তবুও পেয়েছেন প্রণোদনার টাকা, রংপুরে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ

এ সময় মন্ত্রী আরো বলেন, “করোনায় সরকার ঘোষিত চলমান বিধি-নিষেধের মধ্যে অনেক দপ্তরের কাজ বন্ধ থাকলেও এসময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মৎস্য অধিদপ্তর ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে খামারিদের উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর-সংস্থার কার্যক্রম বিশেষ করে সম্প্রসারণ, কৃত্রিম প্রজনন, টিকাদান, চিকিৎসা, পরামর্শ সেবা প্রদান এবং সরকারি খামারে রেনু-পোনা উৎপাদন ও সরবরাহ, হাঁস-মুরগী ও গবাদিপশুর বাচ্চা উৎপাদন ও বন্টন অব্যাহত রাখা হয়েছে।অনলাইন-এসএমএস সার্ভিসের মাধ্যমে খামারিকে সেবা প্রদান এবং অনলাইনে আমদানি-রপ্তানির জন্য এনওসি এর আবেদন গ্রহণ ও অনুমোদন করে ওয়েবসাইটে প্রদান করা হচ্ছে। প্রাণিজ পণ্য আমদানি-রপ্তানি সচল রাখার জন্য এ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সকল ল্যাব চালু রাখাসহ সকল প্রকার পরীক্ষা ও পরিদর্শন কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “মন্ত্রণালয় গত ০৫ এপ্রিল ২০২১ তারিখ থেকে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম এবং এগুলোর উৎপাদন সামগ্রীর সাপ্লাই চেইন নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য সমন্বয়ক হিসেবে কাজ শুরু করেছে। একারণে দেশের কোথাও দুধ, ডিম, মাছ, মাংসের সরবরাহে কোন ঘাটতি নেই। এবছরও ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এসব বিক্রয় কেন্দ্রে বাজার দামের চেয়ে কম দামে ন্যায্যমূলে দুধ, ডিম, মাছ, মাংস বিক্রি হচ্ছে।

এসব পণ্য কিনতে অসাধু ব্যক্তি বা মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের হাতে যাতে মানুষ জিম্মি হয়ে না পড়ে। ভ্রাম্যমান বিক্রয় ব্যবস্থায় গরুর মাংস প্রতি কেজি ৫০০ টাকা, খাসীর মাংস প্রতি কেজি ৭০০ টাকা, সোনালী মুরগী প্রতি কেজি ২১০ টাকা, ব্রয়লার মুরগী প্রতি কেজি ১২০ টাকা, ডিম প্রতিটি ৬ টাকা এবং প্যাকেট দুধ প্রতি লিটার ৬০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

এ ব্যবস্থায় সারাদেশে এ পর্যন্ত ২২৩ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকার পণ্য বিক্রয় হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিশেষভাবে প্রণীত কর্মপরিকল্পনা এবং এর সফল বাস্তবায়নের ফলে করোনার এ অতিমারির মধ্যেও মাছ, মাংস, দুধ, ডিম এর উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন অব্যাহত রয়েছে এবং এগুলোর বাজারমূল্য স্থিতিশীল রয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিষম্পদ খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৮০ লক্ষ মানুষ জড়িত। সে মানুষগুলো যাতে করোনায় কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, বেকার হয়ে না পড়ে সেজন্য মন্ত্রণালয় এসব কাজ বাস্তবায়ন করছে।”

করোনা ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে এ সময় মন্ত্রী বলেন, “ভ্যাকসিনের সাময়িক সমস্যা হলেও ইতোমধ্যে সরকার যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে থেকে ভ্যাকসিন আনার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এসব দেশ থেকে আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে করোনা ভ্যাকসিন পেয়ে যাবো। আশা করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাদুকরী নেতৃত্ব ও সেরা কূটনীতির কারণে বাংলাদেশের একজন মানুষও করোনার ভ্যাকসিনহীন থাকবে না।”

এসময় করোনা সংকটেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তথ্যের অবাধ প্রবাহকে সকল মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান মন্ত্রী।

দ্বিতীয় ধাপে ২ লাখ খামারি পাবে ২৯২ কোটি টাকার প্রণোদনা শিরোনামে সংবাদের তথ্য এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে নিশ্চিত করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোঃ ইফতেখার হোসেন।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ