নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন (এলডিডিপি) প্রকল্পের আওতায় প্রান্তিক পোল্ট্রি ও ডেইরি খামারিদের টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও তা পাননি প্রকৃত খামারিরা। রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের প্রণোদনা সহায়তার টাকা বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব অনিয়ম- দুর্নীতি নিয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করেছে বদরগঞ্জ ডেইরি এন্ড মিট ফারমার্স কল্যান অ্যাসোসিয়েশন।

জানা গেছে, সরকারি সহায়তা থেকে প্রকৃত খামারিরা অনেকাংশে বাদ পড়েছেন। আবার অনেকেই প্রণোদনার টাকা পেয়েছে যাদের দুটি ছাগল পর্যন্ত নাই। খামারিদের অভিযোগ, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো: ওমর ফারুক তার নিকটস্থদের মাধ্যমে টাকা লোপাট করেছেন। যাদের খামার পর্যন্ত নাই তারাও প্রণোদনার টাকা পেয়েছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার আর্শিবাদে। তাঁর কাছে খামারিরা বারবার অভিযোগ দেওয়ার পরও কোন সুরাহা মেলেনি। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কারসাজিতেই প্রকৃত খামারিরা বাদ পড়েছেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনটি।

সূত্র জানায়, খামারিদের কাছ থেকে প্রণোদনা সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহে থাকা কর্মকর্তারা হাজার হাজার টাকা তুলেছেন । এসব টাকার ভাগ বটোয়ারা করেছেন খোদ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। বেশ কয়েকজন লাইভস্টক সার্ভিস প্রভাইডার (এলএসপি) কৌশলে অন্যান্য খামারিদের খামারের ছবি দিয়ে নিজের নামে চালিয়েছেন। পেয়েছেন হাজার হাজার টাকা। এসব টাকাও পেয়েছেন কর্মকর্তা। বিষয়টি জানার পর বিভিন্ন মহলে তদবির, সেইসাথে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছেন তিনি।

আরোও পড়ুন: অভিনব কায়দায় অর্থ আত্মসাৎ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার

এছাড়াও, প্রণোদনা তালিকায় প্রকৃত খামারিদের নাম কেটে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পেশার মানুষকে। যারা পোল্ট্রি কিংবা ডেইরি শিল্পের সাথে জড়িত নন। তারা টাকা পাওয়ার ফলে প্রকৃত খামারিরা তথ্য, ছবি, প্রমাণ থাকা স্বত্ত্বেও টাকা পাননি। এমনকি প্রাণ ডেইরির তালিকায় থাকা খামারিদের অনেকেই পাননি একটি টাকাও। ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে কথা হয় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ৮-১০ জন খামারির সাথে।

উপজেলার কালুপাড়া ইউনিয়নের শংকরপুর এলাকার ডেইরি খামারি ইবনুল এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, “আমার খামারে ১০ টা গাভী, ৭ টা বাছুর আছে। আমি তথ্য দিয়েছি এখন পর্যন্ত কোন টাকা পাইনি। টাকার কথা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে জানালে তিনি বলেছেন- টাকা পাবেন। তবে, কবে টাকা পাব কিছুই বলেননি।”

একই ইউনিয়নের হাসুপাড়া এলাকার ডেইরি খামারি মুকুল এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, “৭টা গাভী ২ টা বাছুর আছে। আরো দুইটা বাছুর ২ দিনের মধ্যে হবে। আমি কোন টাকা পাইনি। ছবি নিয়ে গিয়েছিল। উপজেলায় জানালে তারা বলেছেন-টাকা পাওয়া যাবে। তিন মাস পার হয়ে গেলো কোন টাকা পেলাম না। কবে টাকা পাব এটাও জানিনা।”

বদরগঞ্জ ডেইরি এন্ড মিট ফারমার্স কল্যান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাকিবুজ্জামান এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, যাদের খামার নেই, কিংবা একটি দুটি ছাগল আছে তাদের প্রণোদনার টাকা দিয়েছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। বড় অংকের টাকা বেশিরভাগই গেছে কর্মকর্তার আত্মীয়দের পকেটে। খামার রেজিস্ট্রেশন করা থাকলেও অনেক খামারি পাননি প্রণোদনা একটি টাকাও।

তিনি আরোও বলেন, উপজেলার অসংখ্য খামারি কোন টাকা পাননি। ৫০-৬০ জনের সাক্ষাৎকার নিয়ে দিতে পারব। যাদের অনেকের বড়-বড় ডেইরি ও পোল্ট্রি খামার রয়েছে তারাও পাননি। অনেকে জানেই না। তালিকাতে ব্যাপক কারচুপি করা হয়েছে তাই টাকা পাইনি খামারিরা। বারবার জানতে চাইলেও কোন কথা বলতে চাননি কর্মকর্তা, এড়িয়ে গেছেন। বাজে আচারণ করা হয়েছে অসংখ্য খামরির সাথে। অবিলম্বে দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তার অপসারণ চাই। প্রণোদনার টাকা পাওয়ার জন্য কতটা যোগ্য হতে হয় জানতে চান এই খামারি নেতা।

সংগঠনটির সাধারণ সহ-সভাপতি কবির উদ্দিন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, সরকার থেকে কোটা বেঁধে দেওয়া ছিল ৭০০। এরমধ্যে ৬০০ জন খামারি পাবে। এমনটা জানান প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। কিন্তু এখানে কোটা বিষয় নেই। খামারিদের তথ্য, ছবিসহ তালিকা সংগ্রহ করার দায়িত্ব তাদের। সারাদেশেই প্রণোদনার টাকা নিয়ে নাকি ঝামেলা হচ্ছে এমনটা জানিয়েছেন তিনি। আমরা কোন প্রশ্ন করলে কি না কি উত্তর দিয়ে পাশ কাটিয়ে যান। যেসবের কোন ভিত্তি নেই।

প্রণোদনা বিতরণে অনিয়ম-অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: ওমর ফারুক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, প্রণোদনা বিতরণে কোন ধরণের অনিয়ম হয়নি। ডেইরি সমিতির সাথে কথা বলে তালিকার তৈরি করা হয়েছিল। মোট তালিকা পাঠানো হয়েছিল ৮৬৫ জনের এরমধ্যে আইডি কার্ড, মোবাইল নাম্বার ভুল এসব কারণে কিছু বাদ পড়েছে। আবার তালিকা করা হচ্ছে তাদের টাকা দেওয়া হবে।

এলএসপিদের টাকা উত্তোলনের ব্যাপারে অস্বীকার করে এই কর্মকর্তা বলেন, প্রণোদনা দেওয়ার জন্য কোন খামারির কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়নি। আর এলএসপিদের বলাই ছিল-তাদের নিজেদের যদি খামার থাকে তাহলে তারাও টাকা পাবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহেদী হাসান এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, “আমার কাছে প্রণোদনা বিতরণে অনিয়ম হয়েছে এমন কোন অভিযোগ আসেনি। লিখিত অভিযোগ হাতে পেলে আমি যথাযথ ব্যবস্থা নিব।”

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ